ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আর্থিক সহযোগিতা প্রত্যাশা পরিবারের

দুধ বিক্রি করে সংসার চলে স্বর্ণ জয়ী মাহফুজাদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দুধ বিক্রি করে সংসার চলে স্বর্ণ জয়ী মাহফুজাদের

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের সাঁতার ইভেন্টে দুটি স্বর্ণপদক জয় করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার মেয়ে মাহফুজা আক্তার শিলা। শিলার এ কৃতিত্বে আনন্দের জোয়ার বইছে অভয়নগর উপজেলার পাঁচকবর গ্রামে। মেয়ের সাফল্যে খুশিতে আত্মহারা বাবা মা ও প্রতিবেশীরা। তাদের প্রত্যাশা মাহফুজার এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। আর বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বজুড়ে। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনলেও অভাব অনটনের মধ্যে রয়েছে তার পরিবার। শিলা সাঁতার প্রতিযোগিতায় এ পর্যন্ত চার স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। যার মধ্যে দুটি স্বর্ণপদক বিক্রি করে অসুস্থ পিতার চিকিৎসা সেবা এবং অভাবের সংসারের খরচ যুগিয়েছেন। তার পিতা আলী আহম্মেদ গাজী জানান, আমি পরের জমি বর্গা চাষ করি এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গাভি পালন করে দুধ বিক্রি করে সংসার চালই। অর্থাভাবে রোগের চিকিৎসা সেবা করতে পারি না। ৬ শতক জমির ওপর একটি টিন শেডের বাড়ি তৈরি করে পরিববার পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। বাড়িতে নেই কোন বিদ্যুত ও প্রবেশের জন্য ‘নেই’ রাস্তা। দুধ বিক্রি করে মাহফুজার খেলাধুলা ও লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছি কোন রকম। ধার-দেনা আছে অনেক। একটু বৃষ্টি হলেই বাড়িতে পানি জমে যায়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোন উপায় থাকে না। শিলার মা করিমন নেছা আক্ষেপ করে বলেন, আমার মেয়ে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনলেও কেউ আমাদের দুঃখ কষ্টের খবর রাখে না। যখন সে স্বর্ণপদক জয় লাভ করে তখন সাংবাদিকসহ জনপ্রতিনিধিরা ছবি তুলতে বাড়িতে আসে। তারপর আর কেউ খবর নেয় না। বড় ভাই হাসান আলী গাজী জানান, এ পর্যন্ত সে সাঁতার প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জসহ বায়ান্নটি পদক পেয়েছে। ক্রেস্টও পেয়েছে অনেক। আছে সার্টিফিকেট। সে এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতার ওপর গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছে এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অস্থায়ীভিত্তিতে চাকরি করছে। এ বছর তার চাকরি শেষ। বড় বোন আফরোজা বেগম জানান, আমরা পাঁচ ভাই বোন। মাহফুজা ভাই বোনের মধ্যে চতুর্থ। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়। তারপর যশোরে আব্দুল মান্নান স্যারের সহযোগিতায় সাঁতারে প্রশিক্ষণ নেয়। অর্থাভাবে বিকেএসপিতে অংশগ্রহণ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে এলাকাবাসী এগিয়ে আসে। সরজমিনে মাহফুজার বাড়িতে দেখা যায়, মাহফুজার মা করিমন নেছা গোয়াল ঘর পরিষ্কার করছেন। মাহফুজার বাবার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি বাজারে দুধ বিক্রি করতে গেছেন। ছোট মেয়েটা স্কুলে আছে। বাড়িতে ঢোকার রাস্তাটি ভাঙ্গাচোরা এবং তাদের বাড়িতে বিদ্যুত না থাকায় আক্ষেপ করেন তার মা করিমন নেছা। আমার মেয়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনলেও আমাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। সাংবাদিকদের আগমনের কথা জানতে পেরে পাড়া প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তারা শিলার পরিবারে অভাব অনটন ও দুঃখ দুর্দশার কথা পত্রিকায় লেখার জন্য অনুরোধ করেন।
×