ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ফাগুনের আগুন রং উৎসবের হাতছানি, সঙ্গী হবে বই

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ফাগুনের আগুন রং উৎসবের হাতছানি, সঙ্গী হবে বই

মোরসালিন মিজান ॥ এখনও বাকি বটে বসন্তের। তাকে কী? বাতাসটা বইতে শুরু করেছে! শহরের সবখানে হয়ত দৃশ্যমান নয়। তবে, অমর একুশে গ্রন্থমেলার কথা আলাদা। এ তো বইয়ের মেলা নয় কেবল, বাঙালী সংস্কৃতির উৎসবও। এখানে তাই আগেভাগেই বসন্তের ছোঁয়া। গত কয়েকদিন ধরে আগমনী বার্তাটা পাওয়া যাচ্ছিল। মেলার দশম দিনে সেটি বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয়। মেলার প্রবেশ দ্বার খুলে দেয়ার আগেই আসতে শুরু করেন বইপ্রেমী মানুষ। দলবেঁধে আসছিলেন তরুণ-তরুণীরা। টিএসসি থেকে বাংলা একাডেমি যাওয়ার পথে দেখা গেল শাড়ি পরা তরুণীদের। দেখেই বোঝা যায়, অনভ্যস্ত। মনের ভেতরে যে রঙ, সেটির প্রকাশ ঘটাতেই শাড়িতে সেজে আসা। চুলের কালো রঙ ঢেকে দিয়েছে ফুলের সাজ। মেলায় প্রবেশ করে দেখা গেল, একই রকম সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তরুণীরা। বই দেখছেন। পছন্দের বই খুঁজছেন। একটি বড় দলে ছিলেন আরেফা, সাথী, সিনথিয়াসহ পাঁচ জন। বান্ধবীরা সবাই রঙিন ফুলে সেজেছেন। সিনথিয়া বললেন, পহেলা ফাল্গুন তো চলেই এসেছে। একটা প্রস্তুতি আছে না? প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই আজ শাড়ি পরে এসেছি। আর, ফুল তো শাহবাগেই আছে। সেখান থেকে কিনেছি। কিন্তু বই কি কেনা হয়েছে? জানতে চাইলে নির্মলেন্দু গুণের একটি কাব্যগ্রন্থ দেখিয়ে বলেন, বই কিনতেই তো এসেছি। পহেলা ফাল্গুনে প্রিয় মানুষটিকে উপহার দেব। অন্যরাও একই উদ্দেশ্যে এসেছেন বলে জানান তিনি। ফাল্গুন সামনে রেখে প্রস্তুত হচ্ছেন প্রকাশকরাও। বিভিন্ন স্টলের সামনের অংশে কবিতার বই। চমৎকার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আছে রোমান্টিক উপন্যাস। এই ধরনের বইয়ের বড় সংগ্রহ অন্য প্রকাশের। প্যাভিলিয়ন হুমায়ূন আহমেদের বই দিয়ে সাজানো। প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম জানালেন, উৎসবে অনুষ্ঠানে এখনও হুমায়ূন আহমেদের কোন তুলনা হয় না। হেমন্তেও তাঁর বই বেশি যাবে। এখন পর্যন্ত সে লক্ষণ পরিষ্কার। অন্যান্য স্টলেও কবিতা ও উপন্যাসের বিক্রি বেড়েছে। নতুন বই ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশম দিনে বুধবার মেলায় এসেছে নতুন অনেক বই। বাংলা একাডেমির তথ্য কেন্দ্রে জমা পড়েছে ১০৫টি। অনন্যা থেকে এসেছে মেজর (অব) হাশমী মোস্তফা কামালের বই ‘ মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ কালুরঘাট থেকে প্রতিরোধ’। বটেশ্বর বর্ণন থেকে এসেছে আহমদ রফিকের বই ‘সময়ের দর্পণে সমাজ ও রাজনীতি’। অ্যাডর্ন পাবলিকেশন থেকে এসেছে ‘শেক্সপিয়র থেকে কীটস রবার্ট থেকে ইলিয়ট’। সম্পাদনা করেছেন রহমান ম মাহবুব। বিশ্বসাহিত্য ভবন মেলায় এনেছে হায়দার বসুনিয়ার দু’টি উপন্যাস। শিরোনামÑ ‘পরিম-লের বিস্তৃতি’ ও ‘স্বর্গচ্যুতির ইতিকথা’। সময় প্রকাশন থেকে এসেছে শাহজাদা বসুনিয়ার বই ‘এ সিকরেট অব এ ওয়ার বেবি’। হাবিবুল আলম বীর প্রতীকের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা ‘ব্রেভ অফ হার্ট’ এনেছে একাডেমিক প্রেস এন্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘শঙ্খচিলের মৃত্যুদৃশ্যের পর’ প্রকাশ করেছে জ্যোতি প্রকাশ। লিখেছেন তৌহিদুর রহমান। মোড়ক উন্মোচন ॥ মেলার দশম দিনে বেশ কিছু নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ব্যস্ত ছিল নজরুল মঞ্চ। বিকেলে রিপোর্টার্স ইউনিটির স্টলের সামনেও একটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ‘একটি কুকুরের মৃত্যু ও জীবন সংগ্রাম কাহিনী’ শিরোনামে লিখেছেন কুদরাত-ই- খোদা। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সাবান মাহমুদ, আবু জাফর সূর্য, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি জামাল উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদসহ এক ঝাঁক সাংবাদিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ সন্ধ্যায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশে শিশুসাহিত্য চর্চা : অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শাহীন আখতার। রশীদ হায়দারের সভাপতিত্বে প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন ছড়াকার আসলাম সানী, রাশেদ রউফ এবং সুজন বড়ুয়া। নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য বিষয়বৈচিত্র্যের দিক থেকে প্রায় সর্বপ্রান্তস্পর্শী। তবুও একটি দিকে ঘাটতি থেকে গেছে। শিশুসাহিত্যের সৌধে চড়বার প্রথম সোপানটিতেই আছে দুর্বলতা। লেমিনেটেড কাগজে রঙচঙা বর্ণপরিচয়ের বই আজকাল ঢাকার রাস্তায় বিকোয়। কিন্তু তাতে আদৌ বাঙালিত্ব বা দেশজ আবহ আছে কিনা তা ভাববার বিষয়। প্রাক-বিদ্যালয় পর্বের বই বলে এগুলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রকাশনার আওতায় পড়ে না। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি ও শিশু একাডেমী যৌথ উদ্যোগে দেশের প্রথিতযশা লেখকদের সহায়তায় এ জাতীয় পুস্তিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিতে পারে। বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগেই শিশু যেন ভালবাসতে পারে ভাষা শহীদদের রক্তে রাঙানো বর্ণমালাকে, যেন চিনতে পারে দেশকেÑ তার সত্যকার পরিচয়ে। আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য বিচিত্র ও বহুমাত্রিক। আমাদের পূর্ব প্রজন্মের শিশুসাহিত্যিক এবং উত্তরপ্রজন্মের শিশুসাহিত্যিকরা বিষয়বস্তুর নতুনত্ব, ভাষার সজীবতা, অঙ্গীকারের স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে শিশু-কিশোরদের স্বপ্নভুবনের সন্ধান দিয়েছেন। নিজস্ব মৃত্তিকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চেতনার মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যের নবযাত্রা সূচিত হয়েছে। তাঁরা বলেন, আজ যখন প্রযুক্তির বিস্ফোরণে শিশু-কিশোরের অনেকেই পাঠবিমুখ হয়ে পড়ছে তখন তাদের হাতে মানসম্পন্ন শিশুসাহিত্যের বই তুলে দেয়াই হবে আমাদের অবশ্য কর্তব্য। সভাপতির বক্তব্যে রশীদ হায়দার বলেন, বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব এক্ষেত্রে বাংলার আবহমান ঐতিহ্যের সঙ্গে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংযোগ ঘটেছে শিল্পিতরূপে। দ্বিতীয় পর্বে বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে ছিল কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর এবং ঘাসফুল শিশু-কিশোর সংগঠনের শিল্পীরা।
×