ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ হোক ফাঁস

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বন্ধ হোক ফাঁস

কোন কৌশলই কাজে দিচ্ছে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ যেন দুরূহ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। শত সহস্র ছিদ্র বন্ধের চেষ্টার পরও প্রাচীর ভেদ করে বেরিয়ে আসছে প্রশ্নপত্ররা। ছিদ্রহীন বেহুলা-লখিন্দরের লোহার বাসর ঘরে তবু প্রবেশ করে সাপ। বিষ ঢেলে দিয়েছিল লখিন্দরের দেহে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে বিষাক্ত করে তুলছে শিক্ষাব্যবস্থা তথা পরীক্ষা পদ্ধতিকে। কোন ওঝা বা ধ্বন্বন্তরীতেও বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রশ্নের গোমর ফাঁক হয়ে যাচ্ছে। কারা করছে, কিভাবে করছে- সে সবই রহস্য থেকে যাচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর মেলে, এমনকি প্রাথমিক সমাপনীর প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়। নিকট অতীতের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর প্রায় সব প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে কিংবা অন্তত প্রবল গুজব ছড়িয়েছে। এমনকি মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে বহু অঘটন ঘটেছে। বিস্ময়কর হলো, প্রশ্ন ফাঁসের গুরুতর অভিযোগকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্তৃপক্ষ কখনই সরাসরি স্বীকার করেন না। ফাঁস হওয়ার ব্যাপারটা যে দেশের শিক্ষা দর্শনের গলাতেই ফাঁস পরিয়ে দফারফা করছে, তা আমরা খেয়ালও করছি না। অভিনব কায়দায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর তার উত্তরও পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে পরীক্ষার হলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। একটি চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র সমাধানে সহায়তা করে আসছে, এর বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রচুর টাকা। এটা এখন অনেক মানুষের স্থায়ী ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে। শুধু ফাঁস নয়, অন্যের হয়ে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ক’দিন আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৭০ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও শাস্তি দেয়া হয়েছে। এটা তো সত্য যে, তথ্যপ্রযুক্তির কারণে এখন প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং তা ছড়িয়ে পড়া সহজ হয়েছে। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমেই প্রশ্ন ফাঁসের সমস্যা সমাধান খোঁজা চলছে। কিন্তু কতটা কার্যকর হবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। সরকারী প্রেসের কর্মী থেকে শুরু করে ছাত্র শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ কোচিং সেন্টারগুলো এই ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ। বিশেষ করে কোচিং সেন্টারগুলো এই ফাঁসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করে আসছে বলে গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশ হলেও এসবের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অনেক সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে প্রতারণাও করা হয়। কিন্তু এই দুষ্টচক্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সম্পৃক্তির খবরও বেরিয়েছে। কমিশনে নিজের কক্ষে জালিয়াতির কেন্দ্রই যেন খুলে বসেছিলেন এই কর্মকর্তা। এখানে বসেই পাবলিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি করে পাস করিয়ে দেয়ার চুক্তি করা হতো। এসব ঘটনা প্রমাণ করে সর্ষে খেতেই ভূতের অবস্থান। রক্ষকই যেন ভক্ষকে পরিণত আজ। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে না পেরে বা কাক্সিক্ষত চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশায় ভোগে। আবার জালিয়াতচক্রের দৃষ্টান্তমূলক ও কঠোর শাস্তি না হওয়ায় অনেকেই চলমান ব্যবস্থাকে দায়ী করছে। প্রশ্নপত্র জালিয়াত চত্রুকে দমন করাটাই সর্বাগ্রে জরুরী। শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে কারও পক্ষে প্রশ্নপত্র আর ফাঁস করা সম্ভব হবে না। এমনটা আমরা যেমন চাই তেমনি দেশবাসীও। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবেÑ এটা সবারই কাম্য।
×