ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্নোর চেতনা ও তরুণ প্রজন্ম

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বায়ান্নোর চেতনা ও তরুণ প্রজন্ম

আদীব মুমিন দেখা যাক ৫২-এর চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে কতটুকু প্রতিফলিত হচ্ছে? আমাদের প্রজন্ম এর প্রতি কতটুকু দায়বদ্ধ? আজ আমাদের শিক্ষিত সমাজের বক্তারা মঞ্চে ওঠে দু-চারটি শক্ত ইংরেজী বাক্য না বলতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করেন না এবং আমাদের কলেজ-ভার্সিটিগুলোতে কেউ সুন্দর করে ইংরেজী না বলতে পারলে হাসির খোরাক হয়। অথচ কেউ যদি তার নিজস্ব অঞ্চলের সুন্দর সুন্দর দু’একটি শব্দ ব্যবহার করে তাহলে তাকে ‘ক্ষ্যাত’ বলে উপহাস করা হয়। আজ আমাদের শিক্ষিত লোকদের ছেলেমেয়েরা যদি ইংলিশ মিডিয়ামে না পড়তে পারে তাহলে তাদের শিক্ষাজীবন যেন ব্যর্থ। যারা ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ছে আমি তাদের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু যারা এত আগ্রহ নিয়ে ইংরেজী শিখছে বা শিখে উন্নত দেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে তারা যদি সুন্দর করে বাংলা লিখা তো দূরের কথা বাংলা সঠিকভাবে বলতেও না পারে তাহলে বিশ্বের বুকে আমাদের বাংলা ভাষার প্রসারতা ঘটবে কি করে। ’৫২-এর ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ভাইয়েরা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আজ আমাদের তরুণরা সেই ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখেই তার প্রিয়তমাকে ইংরেজীতে ‘আই লাভ ইউ’ কিংবা হিন্দীতে শাহরুখ খানের স্টাইলে (হাম তুমছে পেয়ার কারতা হে) বলতে না পারলে নিজেকে স্মার্ট কিংবা আধুনিক মনে করে না। এ হচ্ছে আমাদের জাতীয় জীবনে, আমাদের সমাজে বাংলা ভাষার স্থান। যদিও গত দু’বছর আগে সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন তবুও তার আদেশের প্রতিফলন হচ্ছে খুব কমই। আমাদের সমাজে বাংলা ভাষার সর্বত্র ব্যবহার না করার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা কারণ। এর একটি কারণ হচ্ছে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্য যে বই পড়ছি তা সবই ইংরেজীতে লেখা যে কারণে আমাদের ছাত্রদের বিরাট একটা অংশ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলার প্রয়োগ খুবই কম করতে পেরেছে। এর আরেকটি কারণ হলো আমরা ইংরেজদের শাসনাধীন থাকার কারণে আমাদের প্রশাসনের এবং বিচার বিভাগের অবকাঠামো ইংরেজদের ছাঁচে গড়া। আর তাই এসব ক্ষেত্রে আমরা এখনও ইংরেজী ব্যবহার না করে বাংলার প্রয়োগ করতে পারছি না। এ তো গেল প্রশাসনিক সমস্যা। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ কারণ হচ্ছে সাংস্কৃতিক উপনিবেশ। একুশ শতকের এ শতাব্দীতে কোন দেশ অন্য দেশের ওপর সরাসরি উপনিবেশ না করে সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে উপনিবেশ গড়ে তুলছে। আজ হলিউড এবং বলিউড ধারার আকাশ সংস্কৃতি আমাদের মিডিয়াকে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে রেখেছে। এই দুই জগত বিভিন্ন রঙে ঢঙে সিনেমা, গান বানিয়ে আমাদের তরুণ সমাজকে নেশায় বুঁদ করে রাখছে। আমাদের জীবনে বাংলা ভাষার এবং ’৫২-এর চেতনার সর্বজনীন প্রয়োগ এবং ব্যবহার করতে হলে আমাদের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে এবং তরুণ প্রজন্মকে বাংলা ব্যবহারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেই আমাদের ভাষা সংস্কৃতি রক্ষা পাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×