ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগের রাতের বৃষ্টিতে চিত্তচাঞ্চল্য, বইয়ের সঙ্গে ভাগাভাগি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আগের রাতের বৃষ্টিতে চিত্তচাঞ্চল্য, বইয়ের সঙ্গে ভাগাভাগি

মোরসালিন মিজান ॥ মধ্য রাত। হঠাৎ বৃষ্টি। একটা চিত্ত চাঞ্চল্য। অনেকেই টের পেয়েছেন। কিন্তু রাত যেহেতু, প্রকাশটা সেভাবে হয়নি। মঙ্গলবারের মেলায় তার কিছুটা প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। একটু কবি কবি মন নিয়ে মেলায় এসেছেন পাঠক। বৃষ্টিভেজা নরম মাটি। ধুয়ে সবুজ পাতা। সব যেন উস্কে দিচ্ছিল। নবম দিনের মেলা ঘুরে এমনটি মনে হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন পর পহেলা ফাল্গুন। ফাল্গুনের আগমনী বার্তাটা যেন পেয়ে গেছেন বইপ্রেমীরা। ঠিক তার পরদিন ভালবাসা দিবস। এই দিবসটির বার্তাও পড়া গেছে তরুণ-তরুণীদের চোখে মুখে। নতুন বইও আসছে প্রচুর। গল্প কবিতা উপন্যাস। নানা বিষয়ে লেখা বই। বিপুল ভা-ার থেকে পছন্দেরটি সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সবাই। নতুন বই ॥ মেলার নবম দিনেও এসেছে অনেক নতুন বই। তথ্য কেন্দ্রে জমা পড়েছে ১১০টি। নির্বাচিত গ্রন্থ - গণপরিষদ থেকে নবম জাতীয় সংসদ ॥ লিখেছেন কর্নেল শওকত আলী। বলার অপেক্ষা রাখে না, তাঁর দীর্ঘ জীবন। ইতিহাসের বহু বাঁক হয়ে এসেছেন। বইতে ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্যের বাছাইকৃত সংসদ বক্তৃতা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্থান পতনের ইতিহাসের অনেক আজানা তথ্যও গ্রন্থিত হয়েছে। বইটির প্রকাশক আগামী। শিল্পকলার নন্দনতত্ত্ব ॥ বইতে শিল্পতত্ত্ব চিত্র-কবিতার নানা অনুসঙ্গ। চিত্র-কবিতার নানা প্রসঙ্গ, নন্দনতত্ত্বের সংজ্ঞা, চিত্র-কবিতার সংজ্ঞা, শিল্পনিদর্শন, শিল্পরস, শিল্পোর প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। ড. কাজী মোজাম্মেল হোসেনের বইটি প্রকাশ করেছে আগামী। ক্রেনিয়াল ॥ বইয়ের শিরোনাম থেকেই পরিষ্কারÑ এটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই তারকা লেখকের বই প্রথম দিন থেকেই মেলায়। এনেছে তাম্রলিপি। তাজউদ্দীন আহমদ ॥ জাতীয় চার নেতার অন্যতম তাজউদ্দীন আহমদের জীবনী গ্রন্থ। এখানে অপেক্ষাকৃত সরল ভাষায় প্রাঞ্জল উপস্থাপনা। বইটি প্রকাশ করেছে উৎস। মোড়ক উন্মোচন ॥ একাডেমির নজরুল মঞ্চে প্রতিদিনই মোড়ক উন্মোচন করা হচ্ছে নতুন বইয়ের। মঙ্গলবার ছিল এমদাদুল হক তুহিনের প্রথম কাব্য গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব। র‌্যামন পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত বইয়ের শিরোনামÑ থমকে গেছে প্রেম। মোড়ক উন্মোচন করেন অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। এ সময় কবি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বোয়ান সদস্য জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র, এফ এম শাহীন প্রমুখ। কাব্যগ্রন্থে স্পর্শকাতর কবির অন্তর্লোক। নিজের বোধ বেদনা এবং স্বপ্নকে কিছুটা যেন এঁকে নেন তিনি। ব্যক্তিগত অনুভবগুলোকে বৃহত্তর ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করেন। এর আগে ইন্দ্রজিৎ সরকারের দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ‘বল্টুর ভয়ংকর অভিযান’। দেশ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘মানুষখেকোর জঙ্গলে গোয়েন্দা সপ্তক’। বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করেন মুস্তাফিজ শফি। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের প্রকাশনা কার্যক্রম : অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমাদ মাযহার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শিল্পী রফিকুন নবী, কবি তারিক সুজাত, লেখক রেজানুর রহমান এবং পশ্চিমবঙ্গের লেখক-গবেষক ইমানুল হক। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান। প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশনা খুবই সম্ভাবনাময় একটি খাত। আমাদের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হলে এই খাতের দিকে দৃষ্টি দেয়ার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এখন যেভাবে চলছে তাতে এই খাতে বড় বণিক-পুঁজি বিনিয়োগের আপাতত কোন সম্ভাবনা নেই। মানুষের শুভবুদ্ধিপ্রসূত সহযোগিতার ওপর ভর করেই একে চলতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলা একাডেমির বইমেলা একে যেমন প্রণোদনা দিয়ে চলছে তেমনি ছোট ছোট প্রণোদনার ওপর ভর করেই একে আরও কিছুকাল চলতে হবে। কিন্তু খাতের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে তাকে উন্মোচিত করতে হলে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয়, বেসরকারী ও ব্যক্তিপর্যায়ের মিলিত উদ্যোগ। আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের প্রকাশনা জগত এখন অনেক বৈচিত্র্যময়। জনপ্রিয় বইয়ের বাইরে অভিধান, অনুবাদ ইত্যাদি গভীরতাবাহী প্রকাশনায়ও বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে বাংলা একাডেমির বইমেলা বাংলাদেশের প্রকাশনার সামগ্রিক অগ্রগতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। তবে একই সঙ্গে আমাদের প্রকাশনার মানের দিকেও মনোযোগী হতে হবে। বইয়ের অন্তর্বস্তু, পা-ুলিপি সম্পাদনা, শৈল্পিক বিন্যাস এবং কপিরাইট নিশ্চয়তা বিধানের ক্ষেত্রেও আমাদের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, মানসম্পন্ন প্রকাশনা নিশ্চিতের পাশাপাশি এর বাজার ও বিপণন পরিসর তৈরিকেও প্রকাশনা ক্ষেত্রে আমাদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী হাশেম খান বলেন, বাংলাদেশের প্রকাশনা জগত ঐতিহ্যবাহী এক শিল্পক্ষেত্র। জ্ঞানান্বেষু মানুষের প্রয়োজন এবং নান্দনিক উৎকর্ষ- উভয়ের মিলিত সারাৎসারে ঐতিহ্যের পথ বেয়ে এখন তা আধুনিক রুচির সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তবে এই প্রকাশনা জগতকে আরও সমৃদ্ধ করতে আমাদের আরও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল সত্যেন সেন শিল্পগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী নাদিরা বেগম, দিলরুবা খান, আজগর আলীম, মোঃ নূরুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস এবং মনিরা ইসলাম।
×