ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেখ হাসিনার ৭ বছরে বেড়েছে প্রায় ৫শ’ ডলার;###;২০২১ সালে পৌঁছাবে ২ হাজার ডলার

বাড়ল মাথাপিছু আয়

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাড়ল মাথাপিছু আয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছর (২০১৪-১৫) দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় (জিএনআই) বেড়েছে। এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলারে, প্রাথমিক হিসাবে ছিল ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০০৫-০৬ ভিত্তিবছর ধরে চূড়ান্ত হিসাব থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই বড় উদাহরণ। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। দেশ যে দ্রুত মধ্যম আয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই লক্ষণ। কেননা ২০০৯-১০ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৮৪৩ ডলার, ২০১০-১১ অর্থবছরে সেটি কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৯২৮ ডলারে, ২০১১-১২ অর্থবছরে হয় ৯৫৫ ডলার। এভাবে ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে মাথাপিছু আয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, গত ৫ বছরে অর্থনীতিতে যে বেঞ্চমার্ক অর্জন করেছি তারই ফল হচ্ছে এই মাথাপিছু আয়। এ সময়ের মধ্যে বিশ্বের যতগুলো দেশ তাদের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে ধরে রাখতে পেরেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রাথমিকভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ, চূড়ান্ত হিসাবে হয়েছে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে এ কারণেই আগামী ৫ বছর হবে বাংলাদেশের জন্য। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এখন আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেভাবে এগুচ্ছে এতে আশা করা যায় লক্ষ্যমাত্রার আগেই এটি পূরণ হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক প্রতিবেদন সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ পুরোপুরি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশের পর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বাড়তে থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা খুব দ্রুতগতিতে বাড়তে পারেনি। স্বাধীনতা-পরবর্তী গত ৪১ বছর সময়ের মধ্যে ৩৪ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৫০০ ডলার। আর গত কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ বেড়ে এক হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় মাত্র ৫২৩ ডলারে। আর ২০০৭-০৮ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪ ডলারে। গত কয়েক বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। এ কর্মসূচীর কারণেই উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরাসরি উপকারভোগীদের মাথাপিছু আয় যেভাবে বেড়েছে তার তুলনায় যারা এ কর্মসূচীভুক্ত নয়, তাদের মাথাপিছু আয় কম হারে বেড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর উপকারভোগী নারীদের আর্থিক সক্ষমতার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। অভাবগ্রস্ত দরিদ্র শিশুদের খাদ্য চাহিদা পূরণ হয়েছে, তবে পুষ্টি চাহিদা বিশেষ করে দুগ্ধজাত এবং আমিষজাত খাদ্যের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, উপকারভোগীদের ওপর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তায় বিরাজমান ঝুঁকিসমূহ তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর প্রভাবে মৌসুমি অভাব কমেছে, যার ফলে দিনে তিনবার খাদ্যগ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দ্বিগুণ হয়েছে। আর্থিক ও অন্যান্য সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সম্পদ সংগ্রহ, যেমন ভূমি মালিকানা ও গবাদি পশু পালনে মিশ্র পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দরিদ্রের মধ্যে ভূমিহীনতা থেকে উত্তরণ দৃশ্যমান না হলেও আর্থিক সক্ষমতার কারণে ভূমিবন্ধক নেয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবারপ্রতি ভূমিবন্ধকের গড় সক্ষমতা ১ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে পরিবারপ্রতি গবাদি পশুর গড় সংখ্যা শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচী বড় অবদান রেখেছে। যদিও বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ দরিদ্র মানুষ এখনও এ কর্মসূচীর সুবিধা পায় না; তারপরও এর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। সব গরিব মানুষ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা পেলে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে আরও বেশি সফলতা অর্জন করত। অন্যদিকে পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে যেতে গত ৫ বছরে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি বাস্তবায়ন করেছে। এর সুফলও মিলতে শুরু করেছে ইতোমধ্যই। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিরসনে অসাধারণ অগ্রগতি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন, অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষত বিদ্যুত সম্প্রসারণ, মানব উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দৃষ্টিগোচর উন্নতি অর্জিত হয়েছে বলে মনে করছে সরকারের অর্থনৈতিক থিঙ্কট্যাংক হিসেবে খ্যাত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। তাছাড়া বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় এর সুফল ইতোমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামীতে মধ্যম আয়ে উন্নীত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
×