ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মালয়েশিয়ায় পাচার সন্তানের অপেক্ষায়

টেকনাফের বালিয়াড়িতে বসে চোখের জল ফেলেন দুই বৃদ্ধ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

টেকনাফের বালিয়াড়িতে বসে চোখের জল ফেলেন দুই বৃদ্ধ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ আব্দুল্লাহ ও আব্দুল মালেক। টগবগে দু’যুবক। তাদের বাড়ি টেকনাফ সদর মিঠাপানির ছড়ার হাতিয়ার ঘোনায়। দালালের মিথ্যা প্রলোভনে সাড়ে তিন বছর আগে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছে। তারপর থেকে আজও সন্তানের খোঁজ পাননি আব্দুল্লাহর বাবা নুরুল হক এবং আব্দুল মালেকের বাবা রশিদ আহমদ। সন্তানের খোঁজে অনেক জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছেন এ দুই বৃদ্ধ। দালালের কাছে ধর্ণাও দিয়েছেন বেশ কয়েকবার। আজ অবধি সন্তানের হদিস পাননি তারা। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে একবার টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে আবার নাফনদীতে গিয়ে সকাল-বিকেল হাহাকার করছেন দুই বৃদ্ধ। সন্তান ফিরে আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে দিন কাটছে তাদের। মৃত্যুর আগমুহূর্তে শুধু ছেলের চেহারাটা দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তারা। ছেলের মায়ায় মালয়েশিয়া ফেরত যুবকদের ঘরে ঘরে গিয়ে শুধু তাদের বুকে জড়িয়ে ধরেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বুক চাপিয়ে ডুকরে কেঁদে দেন ষাটোর্ধ দুই বৃদ্ধ। তাদের দাবি, যে কোনভাবে সন্তানের ফিরে পাওয়া এবং অবৈধভাবে সাগরপথে নারী-পুরুষ পাচারকারী চক্রের উপযুক্ত শাস্তি। তাদের অভিযোগ, জিয়াবুল নামে এক দালাল মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মালয়েশিয়া পাঠায় আব্দুল্লাহ ও আব্দুল মালেককে। পাচারের ২০ দিন পর তারা থাইল্যান্ড আছে বলে জানালেও পরে কোন খবর নেননি দালাল জিয়াবুল। অথচ জনপ্রতি এক লাখ ৮০ হাজার টাকা হারে হাতিয়ে নিয়েছে দালাল জিয়াবুল। পাচার নুরুল হকের বাবা আব্দুল্লাহ বলেন, দালালের দাবি মতে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা যোগাড় করতে বসতভিটা বিক্রি করে প্রথম দফায় ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করি। পরে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয়ার পরও আমার ছেলের সন্ধান দেয়নি দালাল জিয়াবুল। দালাল জিয়াবুল স্থানীয় দালাল ছৈয়দ আহামদের ছেলে। ওই সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য হাজী সুলতান আহাম্মদের পুত্র মোহাম্মদ আলী। বর্তমানে তারা দেশে আত্মগোপনে আছে। পাচারের শিকার আব্দুল মালেকের বাবা রশিদ আহমদ জানান, দালাল জিয়াবুল হককে ৯০ হাজার টাকা এবং দালাল মোহাম্মদ আলীকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপরও দালালরা আমার সন্তানের কোন খবর দেয়নি। মানবপাচার প্রতিরোধে কর্মরত এনজিও হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ ও আব্দুল মালেকের বাবা আমাদের মাধ্যমে ছেলে ফিরে পাওয়ার সহযোগিতা চেয়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। পাচারকারী দালালদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। কক্সবাজারের উখিয়া সোনারপাড়া-সোনাইছড়ি ও গেয়ালিয়ার মানবপাচারের গডফাদারদের অনেকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে এসেছে বলে জানা গেছে। অথচ গডফাদার নুরুল কবির, শামসুল আলম সোহাগ ও মনছুর আলমের বিরুদ্ধে বহু মামলা রয়েছে কক্সবাজার, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ থানায়।
×