ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রীলঙ্কায় জেইসি বৈঠক অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শ্রীলঙ্কায় জেইসি বৈঠক অনিশ্চিত

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় দুদিনব্যাপী যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক স্থগিতের ১ বছর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখন কোন নতুন তারিখ জানায়নি শ্রীলঙ্কা। এ অবস্থায় দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বৈঠকের আয়োজন করছে বলে জানা গেছে। যদিও জেইসির বিষয়টি দেখভাল করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। তবে এ দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক জেইসির পথ খুলে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এর আগে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক এবং প্রস্তুতি বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে ২০১৪ সালের ১৭ ও ১৮ নবেম্বর বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) পঞ্চম সভার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসেবে প্রস্তুতিও নিয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের। প্রতিনিধি দলটির শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার বিষয়টি চূড়ান্ত করার মুহূর্তে হঠাৎ করেই এ বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। তবে কি কারণে স্থগিত করা হয়েছিল তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে প্রতিনিধি দলের প্রধান অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ওই সময় জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, আমাদের রওয়ানা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কি কারণে জানি না এটি স্থগিত হয়ে গেছে। যেটুকু জেনেছি আমাদের পক্ষ থেকেই এটি স্থগিত করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে জেইসি বৈঠকে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে অক্টোবর মাসের শেষ দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা। ওই সভায় চতুর্থ বৈঠকের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন এবং আগামী বৈঠকের করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ইতোমধ্যেই প্রাথমিকভাবে যে কয়েকটি বিষয়ে তুলে ধরার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, সেগুলো হলো, বাজিণ্য বাধা দূরীকরণ, জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ ফরমেশন, শ্রীলঙ্কার অঙ্গীকারকৃত ছাড় আদায়, গত জেইসি বৈঠকের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং দু-দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ উপস্থাপন। সার্কের সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব বিদ্যমান। সার্কের মাধ্যমে আঞ্চলিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। এ দুটি দেশের মধ্যে ১৯৭৯ সালে সম্পাদিত এগ্রিমেন্ট অন ইকোনমিক এ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের আওতায় ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন গঠিত হয়। তখন থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চারটি যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনকে কাজে লাগিয়ে দুটি দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া শ্রীলঙ্কা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ প্রেক্ষাপটে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করার মধ্যদিয়ে এদেশ লাভবান হওয়ার কথা। সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ৭ ও ৮ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা চতুর্থ জেইসি বৈঠক। এ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন বিষয়ে জানা যায়, চতুর্থ যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন সভার ফলোআপ হিসেবে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রেড গঠন করা হয়। এর প্রথম সভা গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এবং দ্বিতীয় সভা গত ২২-২৩ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় উভয় দেশ বাণিজ্য সম্প্রসারণের উপায় চিহ্নিত করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করে। বাংলাদেশের পক্ষে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট উপস্থাপন করলে শ্রীলঙ্কা তা সমর্থন করে। এছাড়া আলোচিত এফটিএর ব্যাপারে টিওআর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। উভয় দেশই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। আর একটি সিদ্ধান্ত বিষয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে স্বাক্ষর হতে যাওয়া বাইলেটারাল ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এ্যান্ড প্রটেকশন এগ্রিমেন্টের প্রক্রিয়া এখনো চলছে। প্রাথমিকভাবে ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কাতে একটি খসড়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তার পরবর্ততে আলোচনার জন্য শ্রীলঙ্কার একটি প্রতিনিধি দল ২০১১ সালের ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করে। এর পর ২০১৫ সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কা একটি খসড়া প্রেরণ করেছিল। যা বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষাধীন আছে। শীঘ্রই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে বাংলাদেশের পক্ষে মতামত চূড়ান্ত করে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
×