ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাড়ছে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড

সামাজিক, পারিবারিক, সর্বোপরি মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় যেন সমাজে চলছে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহের কারণে অবলীলায় খুন হচ্ছে মানুষ। আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে পারিবারিক হত্যাকা-। মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল পরিবার কারও কারও জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। বাবা-মায়ের হাতে সন্তান হত্যার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি সন্তানের হাতে জন্মদাতা বাবা-মায়ের প্রাণহানিও ঘটছে। পরকীয়ার কারণে স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন হওয়ার ঘটনাও কম নয়। এক ভাই আরেক ভাইকে হত্যা করছে। দেখা যায় প্রতিটি ঘটনাই মামুলি বা তুচ্ছ কোন কারণে। একটি ঘটনার নৃশংসতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আরেকটিকে। এসব কেবল আইনশৃঙ্খলার অবনতির দৃষ্টান্তই নয়, সামাজিক অসুস্থতারও লক্ষণ। শনিবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় জমি নিয়ে ভাই-ভাতিজাদের সঙ্গে বিরোধ থেকে গুলিতে অন্য এক ভাই ও ভাইয়ের ছেলের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে পরিবারের আরও চারজন। উপজেলার খাগড়িয়া ইউনিয়নের নূর মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, জমি নিয়ে বড় ভাই শফিকুর রহমান ও ভাতিজাদের সঙ্গে ইদ্রিসের পরিবারের দীর্ঘদিন বিরোধ ছিল। এই ঘটনাটি বলে দেয় মানুষের মধ্যে সুপ্ত থাকা লোভ ও হিংস্রতার ভয়াল রূপের কাছে টিকতে পারছে না সামাজিক কিংবা পারিবারিক বন্ধন। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নৃশংস হত্যাকা-ের মতো ঘটনা ঘটছে। যে হাত দিয়ে আবেশে স্বজনকে আগলে রাখার কথা কিংবা স্বজনের বিপদে ছুটে আসার কথা সেই হাতই কখনও কখনও আপনজনের রক্তে রক্তাক্ত হয়ে উঠছে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, সামাজিক বন্ধনে চিড় ধরা, অস্থিরতা ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব-টানাপড়েনে আপনজনকে খুনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়, সহনশীলতা কমে যাওয়া ও সামাজিক অনুশাসনের অভাবে এ ধরনের নৃশংসতার প্রবণতা বাড়ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে পরিবারের পাশাপাশি সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো দরকার। সামাজিক অনুশাসনের অভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক বৈষম্য দূর করা দরকার। বৈশ্বিক পরিবর্তন, সামাজিক সম্পর্কগুলো শিথিল হয়ে যাওয়া এবং নানা সামাজিক বঞ্চনা ও বৈষম্যের কারণে ঘটছে এসব ঘটনা। এ সমস্যা সমাধানে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন কিভাবে বাড়ানো যায় সে চিন্তা করতে হবে। সাধারণভাবে খুন-খারাবি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকেই নির্দেশ করে। অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা বলবৎ থাকলে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে থাকারই কথা। আমাদের দেশে এ ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে তা স্বীকার করতেই হবে। অনেক আলোচিত চাঞ্চল্যকর হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা বিচারহীন থাকছে দিনের পর দিন। দেখা গেছে, অপরাধীরা নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে লঘু দণ্ডে পার পেয়েছে। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলাসহ নানা কারণে অপরাধীদের পার পাওয়ার প্রবণতা। তাই যে কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর দ্রুত তার কারণ উদ্ঘাটন করা এবং অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার কোন বিকল্প নেই। আর সামাজিক অপরাধ প্রবণতা রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধও দরকার। এই ক্ষেত্রে সামাজিক অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতার কারণ অনুসন্ধান এবং তা দূরীকরণে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দরকার পারিবারিক, সামাজিক ক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধের চর্চা। সুস্থ মানস গঠনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানবিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সবাইকে আরও মনোযোগী হতে হবে।
×