ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তর কোরিয়ার রকেট উৎক্ষেপণের পর হাড ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে চায় সিউল ও ওয়াশিংটন

এশিয়ায় তারকা যুদ্ধের সূচনা!

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এশিয়ায় তারকা যুদ্ধের সূচনা!

উত্তর কোরিয়ার দূরপাল্লার রকেট উৎক্ষেপণ উত্তর-পূর্ব এশিয়াতে উত্তেজনার মাত্রা চড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে খুবই উঁচু দিয়ে উড়তে সক্ষম এমন এক বিতর্কিত ধরনের এ্যান্টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে আলোচনা করতে তাগিদ দিয়েছে। এরূপ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করে ভূপাতিত করতে সক্ষম। চীন ও রাশিয়া উভয়েই এ ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিরোধী। উত্তর কোরিয়া এক নতুন আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করতে সফল হয়েছে বলে ঘোষণা করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর ওই টারমিনাল হাই এ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (হাড) নিয়ে আলোচনার কথা জানানো হয়। উত্তর কোরিয়ার বিরোধী পক্ষরা মনে করেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল দেশটির চতুর্থ পরমাণু পরীক্ষার মাত্র এক মাস পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা। রবিবার রাতে এক জরুরী বৈঠকের পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রকেট উৎক্ষেপণে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, পরিষদ এ কাজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে শীঘ্রই এক প্রস্তাব গ্রহণ করবে। পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করাই হোক আর মহাশূন্য উৎক্ষেপণ যানই ছোড়া হোক, সেটি উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র বহনের ব্যবস্থারই উন্নয়ন ঘটাবে। এতে আরও বলা হয়, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার করা নিরাপত্তা পরিষদের ২০০৬ সালের চারটি প্রস্তাবের লঙ্ঘন। উত্তর কোরিয়ার রকেট উৎক্ষেপণ ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেন, উত্তর কোরিয়ার তৎপরতা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রতি এক হুমকি হয়ে রয়েছে। চীন ও রাশিয়া উভয়েই এক কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার ওপর জোর দিয়েছে। হাড মোতায়েন করা হলে উত্তর-পূর্ব এশিয়াতে তারকা যুদ্ধের এক নতুন যুগের সূচনা হবে। শত শত কোটি ডলার মূল্যের ওইসব ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকে মোতায়েনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র জোর দিলেও দক্ষিণ কোরীয়রা দীর্ঘদিন ধরে তেমন উৎসাহ দেখায়নি। এসব উৎক্ষেপক আকাশের দিকে ১০০ মাইলেরও বেশি ছুটে গিয়ে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রকে আঘাত করে ভূপাতিত করতে সক্ষম। বেজিং ক্ষুব্ধ হতে পারে এমন উদ্বেগ থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার হাড ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের প্রতি এতদিন আপত্তি জানিয়ে এসেছে। হাড এবং চীনের বিরুদ্ধে এর সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে বেজিং বারবার আশঙ্কা ব্যক্ত করে এসেছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া ৬ জানুয়ারি ভূগর্ভে এর চতুর্থ পরমাণু পরীক্ষা চালালে এবং গত সপ্তাহান্তে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করলে চীন এর বিরুদ্ধে তেমন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এর পরিবর্তীতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউনহাই কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এখন দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা যথাশীঘ্র সম্ভব ওইসব ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে চাইবে। চীন রকেট উৎক্ষেপণের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব সময়কার বিরোধিতা উপেক্ষা করেছে। এক চীনা কর্মকর্তার প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার শান্তিপূর্ণ উপায়ে মহাশূন্য ব্যবহারের অধিকার থাকলেও, এ অধিকার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বলে সীমিত। বিশ্লেষকরা এ বিবৃতিতে এক সাদামাটা প্রতিক্রিয়া বলেই দেখতে পান। এতে আভাস পাওয়া যায় যে, চীন বর্তমান নিষেধাজ্ঞাগুলো জোরদার করতে, বা ২০১২ সালের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর এবং উত্তর কোরিয়ার ২০০৬, ২০০৯ ও ২০১৩ সালের পরমাণু পরীক্ষার পর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাগুলো কার্যকর করতে জাতিসংঘে আহ্বান জানানো সমর্থন করবে না। সিউলভিত্তিক ব্যবসায়ী উপদেষ্টা টম কয়নার বলেন, কোন কিছুই ঘটতে যাচ্ছে না। জাতিসংঘের বিতর্কে কোন ফল হবে না। কেউই কিছু করবে না। পার্কের উক্তিতে ক্ষোভের পাশাপাশি হতাশাও প্রতিফলিত হয়। তিনি ঘোষণা করেন যে, চতুর্থ পরমাণু পরীক্ষার পর এক দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে উত্তর কোরিয়া যে উস্কানিমূলক কাজ করেছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে জাতিসংঘের প্রতি দাবি জানান। ইন্ডিপেনডেন্ট অনলাইন।
×