ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব রকম ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে ভিটেহারা ১৩২ পরিবারের জন্য তৈরি হচ্ছে আধুনিক এক গ্রাম

পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র ॥ পুনর্বাসন চমকে বদলে গেল গ্রামবাসীর ভাগ্য

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র ॥ পুনর্বাসন চমকে বদলে গেল গ্রামবাসীর ভাগ্য

রশিদ মামুন ॥ পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রর পুনর্বাসন প্রকল্পে চমক দিতে যাচ্ছে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে ঘরবাড়ি হারানো ১৩২ পরিবারের জন্য একটি আধুনিক গ্রাম তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রর পাশেই নির্মাণ করা মডেল এই প্রকল্প অনুসরণ করলে উন্নয়ন প্রকল্পের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। দেশের উন্নয়ন প্রকল্পর জন্য বড় বাধা ভূমি সংগ্রহ। বেশিরভাগ ভূমিতেই চাষাবাদ এবং মানুষের বসতি রয়েছে। মানুষকে তাদের দীর্ঘদিনের ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ সর্বহারা মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ কাজ করে। কোন কোন জায়গায় আন্দোলনে উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হয়। এসব সমস্যা সমাধানে উন্নয়ন প্রকল্পে জমি হারানো মানুষদের জন্য নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিশেষ চমক দিচ্ছে। ভূমি এবং ঘরবাড়ির আপত্তি বাবদ সকল অর্থ পরিশোধের পরও ১৩২টি পরিবারের জন্য পৃথক ছোট্ট গ্রাম তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর পাশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে লভ্যাংশের অর্থ দিয়ে একটি তহবিল গঠনের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মন্ত্রিসভা এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়। সঙ্গত কারণে কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর আশপাশের মানুষও লভ্যাংশর অংশীদার হবে। কোম্পানি সূত্র জানায়, পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র করতে গিয়ে মধুপাড়া, নিশানবাড়িয়া, দশরহাউলা, মরিচবুনিয়া গ্রামের ৯৮২ একরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানের পরিবারগুলোর বসতবিটার জন্য একর প্রতি সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং নাল জমির জন্য পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের ঘরবাড়ির জন্যও অর্থ দেয়া হয়েছে। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের হিসাবে মোট ৬৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। যদিও এখানের কিছু সরকারী খাস জমি ছিল। পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র সূত্র জানায়, দাবি অনুযায়ী তাদের সকল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। তারপরও গৃহহারা মানুষদের বাসস্থান, চিকিৎসা এবং সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কোম্পানির বোর্ড প্রকল্পটি অনুমোদন করেও দিয়েছে। এজন্য ব্যয় হচ্ছে ৬০ কোটি টাকা। পুনর্বাসন পরিকল্পনায় দেখা যায়, যারা ২০ ডেসিমেলের কম জমি হারিয়েছে তারা ছয় ডেসিমেল করে জমি পাবেন, সঙ্গে এক হাজার বর্গফুটের সেমিপাকা ব্লিডিং পাবেন। আর যারা ২০ ডেসিমেলের উপরের জমি পাবেন তারা আট ডেসিমেল জমি পাবেন, সঙ্গে এক হাজার ২০০ বর্গফুটের সেমিপাকা ঘর পাবেন। একই সঙ্গে আধুনিক পানি সরবরাহ ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে দেয়া হবে। যেসব পরিবার দোকান হারিয়েছে তাদের জন্য দোকান ঘরও তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। আধুনিক জীবন ব্যবস্থার সকল উপকরণ থাকছে এখানে। বলা হচ্ছে চরের মানুষ সাধারণত বিদ্যুত এবং পিচ ঢালা সড়ক, স্কুল ক্লিনিককে স্বপ্নই মনে করত। কিন্তু এখন পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রর কল্যাণে সব কিছুই করা হচ্ছে নতুন এই গ্রামটিতে। চরের মানুষের জীবন বদলে দিতে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সেখানে বিদ্যুত নিচ্ছে, রাস্তা নির্মাণ করছে, অভ্যন্তরীণ সকল রাস্তায় বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গড়ে তোলা হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, ঈদগাঁহ, অফিস কাম কমিউনিটি সেন্টার, শিশুদের জন্য থাকবে খেলার মাঠ, প্রকল্পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিশুদের জন্য পাশেই স্কুল থাকবে, সাঁতার শেখার জন্য পুকুর, গ্রামের মধ্যেই গোচারণ ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া হবে। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূত্র বলছে, পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য চীনের এনইপিসি কাজ পাচ্ছে। কোম্পানিটির তুরস্ক এবং ভিয়েতনামে ৬০০ মেগাওয়াটের ওপরে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আগামী মাসে অর্থাৎ মার্চেই বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে চূড়ান্ত চুক্তি করা হবে। ইতোমধ্যে এনইপিসিকে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তির বিষয়ে সম্মতিপত্র দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা দরপত্র যে শর্ত দিয়েছি তাতে বলা আছে বিদ্যুত কেন্দ্রটির চুক্তি হওয়ার পর থেকেই তা কার্যকর হবে। আলাদা করে অর্থায়ন চুক্তি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। চুক্তির সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণ শুরু করতে হবে। এরকম পরিস্থিতিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রথম এক বছরে ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করে কাজ শেষ করতে হবে। যার পরিমাণ হতে পারে ২০০ মিলিয়ন ডলার। যা সাধারণত অন্য বিদ্যুত কেন্দ্রর বেলায় হয় না। তিনি বলেন, সময় বাঁচাতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। পুনর্বাসন প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষের দীর্ঘদিনের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে হলে স্বাভাবিকভাবেই কষ্ট হয়। অনেকের যাওয়ারও জায়গা থাকে না। সঙ্গত কারণে আমরা তাদের জমি এবং ঘরবাড়ি বাবদ অর্থ পরিশোধের পরও তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করছি। যেখানে আধুনিক সব সুবিধাই থাকবে। একই সঙ্গে বিদ্যুত কেন্দ্রর খুব কাছেই প্রকল্পটি করা হচ্ছে। যাতে করে তারা কেন্দ্রটিতে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে পারেন। এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। ২০১৪ সালে স্বাক্ষর হওয়া ওই এমওইউর আলোকে একটি যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন করা হয়। সিএমসি দেশের একমাত্র তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র বড়পুকুরিয়া-২৫০ মেগাওয়াট নির্মাণ করেছে। বড়পুকুরিয়ার বিদ্যুত কেন্দ্রটি সাব ক্রিটিক্যাল হলেও পটুয়াখালীর বিদ্যুত কেন্দ্র হবে সুপার আল্ট্রা ক্রিটিক্যাল সর্বাধুনিক প্রযুক্তির।
×