ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি বিচারপতি মানিকের

প্রকাশিত: ০২:২৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি বিচারপতি মানিকের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ এনে এবার তার পদত্যাগ দাবি করেছেন আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অবসরের পর নিজ হাতে লেখা রায় ও আদেশ সোমবার বিকেলে আপীল বিভাগে জমা দেয়ার আগে সুপ্রীমকোর্টের মাজার গেইটের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি এই দাবি জানান। এর আগে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছেও আবেদন করেছিলেন এই বিচারপতি। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী সোমবার তার লেখা রায় ও আদেশের সঙ্গে ওইসব মামলা সংক্রান্ত নথিও জমা দিয়েছেন। নথি জমা দেওয়ার আগে সুপ্রীমকোর্টের প্রবেশ পথেই বিচারপতি শামসুদ্দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে তিনি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, উনি (প্রধান বিচারপতি) বলেছেন, সরকার নাকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে... এসব মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন মানুষের কাছে সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য, মানুষের কাছে এই সরকারের ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য। আমি মনে করি তার পদত্যাগ করা উচিৎ। তিনি অভিযোগ করেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবে না, এই কথা বহু আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন। উনি খালেদা জিয়ার মুখপাত্র হয়ে বিএনপির এজেন্ডা চরিতার্থ করার জন্য এটা বলেছেন। উনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি বৈঠক করেছেন এবং সাকা চৌধুরীর পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী বেঞ্চ গঠন করে বিচারকার্য পরিচালনা করেছেন। প্রধান বিচারপতি নিজে স্বীকার করেছেন তিনি যুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। আমি আশা করছি দেশের এবং বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষায় তিনি পদত্যাগ করবেন। এর আগে রবিবার বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গনে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে সংবিধান, আইন ও প্রথাবিরোধী আচরণের অভিযোগ আনেন। এরপর সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, শামসুদ্দিন চৌধুরী আর গণমাধ্যমে কথা না বলে অনিষ্পন্ন সব রায়ের ফাইল ফেরত দেবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন প্রধান বিচারপতি। এর পর সোমবার সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গনে পূর্বনুমতি ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করার ওপর বিধি নিষেধ জারি করে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। অবসরে যাওয়ার আগে বিচারপতি শামসুদ্দিন যে বেঞ্চে ছিলেন, সেই বেঞ্চে তার পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতির কাছে সোমবার নিজের লেখা রায় ও আদেশ পৌঁছে দেন তিনি। তিনি সোমবার সন্ধায় জনকণ্ঠকে বলেন, বিচারপতি মোঃ ইমান আলী আমার লেখা ৬৫টি রায় ও আদেশ এবং এ সংক্রান্ত নথিপত্র গ্রহণ করেছেন। এরপর এসব রায়-আদেশ পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিয়ার কাছে যাবে। প্রক্রিয়া অনুসারে এরপর রায় ও আদেশ চূড়ান্ত হয়ে তার সই, পরবর্তী বিচারপতির সই শেষে আমার কাছে চূড়ান্ত সইয়ের জন্য আসবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আলোচিত বেশ কয়েকটি মামলার বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০০১ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে দুই বছরের মেয়াদ শেষে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়নি তাকে। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পর ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টে স্থায়ী হন। ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। গত বছর ১ অক্টোবর অবসরে যান তিনি।
×