ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা ও সলিমুল্লাহ মেডিক্যালের ওপর কমেছে রোগীর চাপ

সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যালে ৬ বিভাগ চালুসহ বেড়েছে সেবার মান

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যালে ৬ বিভাগ চালুসহ বেড়েছে সেবার মান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সেবার মান বেড়েছে রাজধানীর শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। ছয়টি বিভাগ চালুসহ বেশকিছু পদক্ষেপে হাসপাতালের সেবার মান উন্নত হয়েছে। যদিও জনবল, জেনারেটরসহ কিছু সঙ্কটও রয়েছে হাসপাতালে। কয়েকটি বিভাগ না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন রোগী ও শিক্ষার্থীরা। হাসপাতালে সরেজমিন পরিদর্শনে এই চিত্র উঠে এসেছে। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া জানান, হাসপাতালের উন্নয়নে বেশকিছু নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এগুলো সমাপ্ত হলে হাসপাতালে সেবার মান আরও বাড়বে। দীর্ঘদিন রোগীদের চোখের আড়ালই ছিল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হাসপাতালটি। হাসপাতালপাড়া হিসেবে পরিচিত শেরেবাংলানগরে অবস্থিত হাসপাতালটি এখন পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। দীর্ঘ দিন আড়ালে থাকা হাসপাতালটিতে নতুন কিছু বিভাগ চালু এবং রোগীদের সেবার মান বাড়াতে কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশাল পরিসরের হাসপাতালটি এখন রাত-দিন রোগী-দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওপর ঢাকার মানুষের নির্ভরশীলতা কমেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা জানিয়েছেন, মোটামুটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ায় তারা হাসপাতালটির ওপর নির্ভর করছেন। আরও কিছু বিভাগ খোলা হলে হাসপাতালটি রোগীদের পূর্ণাঙ্গ সেবা দিতে পারবে। অর্থাৎ যে কোন রোগী এলে তাকে অন্য কোথাও পাঠাতে হবে না। যেসব রোগী আইসিইউ সেবায় ছিলেন, এখন সেই সেবার প্রয়োজন নেই অথচ সাধারণ কেবিনে সম্পূরক সেবা দেয়া সম্ভব নয়, সেই সব রোগী এইচডিইউতে অবস্থান করবেন। হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে অতিসম্প্রতি বেশকিছু নতুন বিভাগ চালু হয়েছে হাসপাতালে। এগুলো হচ্ছে নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, নিউরোমেডিসিন, নিউরোসার্জারি, রেসপিরেটরি, শিশু সার্জারি এবং হেপাটোলজি বিভাগ। সেই সঙ্গে চালু হয়েছে এ্যাজমা এবং ডেঙ্গু সেন্টার, ফিভার ও রিউমেটোলজি ক্লিনিক। ১০ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম বড়ুয়া জানান, শীঘ্রই চালু হচ্ছে আরও ১০ বেডের আইসিইউ এবং ১০ বেডের ‘হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ)।’ আরও চালু হচ্ছে চারটি বিশেষায়িত অপারেশন থিয়েটার- নিউরোসার্জারি, ইউরোলজি, শিশু সার্জারি এবং অর্থো অপারেশন থিয়েটার। স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। টেলি মেডিসিন সেন্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ২৮ সেন্টারের সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ স্থাপন করে পরামর্শ ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। কানের শ্রবণশক্তি পরিমাপের জন্য অডিওমেট্রি পরীক্ষা ব্যবস্থা আছে যা অন্য কোন সরকারী হাসপাতালে নেই। দেখা গেছে, হাসপাতালের সামনের দিকে নতুন ইমার্জেন্সি বিভাগ নির্মাণ করা হয়েছে। হাসপাতালের সর্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। হাসপাতালের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বাগান করা হয়েছে। হাসপাতাল, অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কাজে যোগাযোগের সুবিধার্থে ওয়াই ফাই নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। অফিস চলাকালে রোগীদের সচেতনতার জন্য সর্বক্ষণিক কেন্দ্রীয়ভাবে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিবেশ বদলেছে। নোংরা, ময়লা-আবর্জনা হাসপাতালের অভ্যন্তরে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যথাযথ ব্যবস্থাপনায় আবর্জনা চলে যাচ্ছে হাসপাতালের বাইরে। হাসপাতাল ক্যাম্পাস থেকে যেমন হকার উচ্ছেদ হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণে আনা হয়েছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। কিছু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া রোগ নির্ণয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এখন আর রোগীদের বাইরে পাঠানো হয় না। হাসপাতালের ভেতরে একসময় নেশাখোরদের ঘোরাঘুরি, ফেনসিডিল বহন এমনকি কর্মচারীদের অলস আড্ডা ও তাস পেটানোর দৃশ্য দেখা যেত। এখন আর তা দেখা যায় না। মনিটরিং জোরদার করায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাজির হচ্ছেন হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা। শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলানগরে অবস্থিত সরকারী মালিকানাধীন একটি হাসপাতাল। ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটিতে বর্তমানে শয্যা সংখ্যা ৮৫০। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এই হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছে। ২০০৫ সালে এই হাসপাতালটিতে মেডিক্যাল কলেজের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এই হাসপাতালটি শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নামে পরিচিত। কর্তৃপক্ষ জানায়, এই হাসপাতালের বেড সংখ্যা ৩৭৫ থেকে ৮৫০ শয্যায় উন্নীত করে প্রতিদিন ৮ শতাধিক রোগীকে আন্তঃবিভাগে সেবা প্রদান করা হয়। বহির্বিভাগে গত বছরের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজারের অধিক রোগীকে সেবা প্রদান করতে হয়। আধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম ও হেড নেক লেজার সার্জারি নিয়মিত হচ্ছে। অন্য সব সরকারী হাসপাতালের মতো শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালেও বহির্বিভাগে এমবিবিএস ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে হলে প্রথমে কাউন্টার থেকে ১০ টাকা মূল্যের টিকেট কাটতে হয়। অনুসন্ধান কক্ষের ডান দিকে তিনটি বহির্বিভাগ কাউন্টার রয়েছে। কাউন্টারে রোগী গেলে কাউন্টারে দায়িত্বশীল ব্যক্তি রোগীর কাছ থেকে তার সমস্যা বা রোগের লক্ষণ শুনে ওই রোগ সম্পর্কিত বিভাগে রোগীকে পাঠিয়ে দেয়। হাসপাতালে মেডিসিন, ডেন্টাল, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন, চর্ম ও যৌন রোগ, শিশু, গাইনি, শিশু সার্জারি, এ্যাজমা সেন্টার, নিউরোলজি ও কার্ডিওলজি বিভাগসহ মোট ১৭ বিভাগ রয়েছে। বহির্বিভাগ প্রতিদিন সকাল আটটায় থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত খোলা থাকে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী সেবা নিচ্ছে। এক শ’ থেকে দেড় শ’ রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতালে মোট ৩০ কেবিন ও ১১ ওয়ার্ড রয়েছে। বেড প্রতিদিন-২২৫ টাকা ভাড়া। কেবিন বেড প্রতিদিন ৩৭৫ টাকা। দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করে ওষুধপত্রসহ বিভিন্ন টেস্ট ও সিট ভাড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা পেতে পারে। তবে এই হাসপাতালে এখনও চালু হয়নি পূর্ণাঙ্গ অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগ। শিক্ষার্থীদের জন্য নেই মর্গের ব্যবস্থা। আইসিইউ রোগীদের জীবন রক্ষার্থে আলাদা জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই। সঙ্কট রয়েছে জনবলের। এসব সমস্যা সমাধান করা হলে হাসপাতালে রোগীদের সেবার মান আরও বাড়বে বলে মনে করেন চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
×