ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুজনের গোলটেবিলে ড. কামাল

বিচার বিভাগ স্বাধীন না থাকলে কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বিচার বিভাগ স্বাধীন না থাকলে কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচার বিভাগ যদি স্বাধীনভাবে কাজ না করে, তবে দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন না থাকলে কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না। তিনি এও বলেন, বিচার বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে কখনও দলীয়করণ হতে পারে না। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাইঞ্জে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কাযর্কারিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত বৈঠকে ড. কামাল বলেন, নির্বাচন কমিশন হলো এ্যাম্পায়ার, তারা যদি নিরপেক্ষ না থাকে তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে কীভাবে। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধানের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? দেশের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিচারক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দলীয়করণের মাধ্যমে। কোন দল নির্বাচনে যদি ৩০০ আসনও পেয়ে থাকে তার পরও তারা অযোগ্য কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে পারে না। অথচ এখানে সেটাই হচ্ছে। বিচারকদের নৈতিকতা, সত্যবাদিতা ও ন্যায়বোধ না থাকলে যত আইন থাকুক না কেন তাতে কোন কাজ হবে না, বলেন এই প্রবীণ আইনজীবী। তিনি বলেন, বিচারকরা কোন্ যোগ্যতায় নিয়োগ হলো- তা জনগণের জানার অধিকার আছে। আমরা সেই যোগ্যতা দেখতে চাই। যোগ্য লোক নিজের দলের হলেও আপত্তি নেই, তবে অযোগ্য লোক কীভাবে নিয়োগ পায়- এটা জানার অধিকার জনগণের আছে। সংবিধান জনগণকে সে অধিকার দিয়েছে। বিচার বিভাগের বর্তমান অবস্থার সমালোচনা করে ড. কামাল বলেন, বিচার বিভাগ একটি স্তম্ভ, এই স্তম্ভকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা থাকে না। বিচারপতিদের চায়ের আমন্ত্রণ পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেছেন, আর চায়ের দাওয়াত না, আর ডিনার পার্টি না। বিচারপতিরা যদি চায়ের দাওয়াতে যান তাহলে স্বাধীনতা পুরো কাটেল (বাতিল) হয়ে যায়, স্বাধীনতা থাকে না। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন, আদালত-বিচার বিভাগ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনগণের মাঝে নেতিবাচক হতাশা আছে। প্রধান বিচারপতি নিয়ে বিতর্কের কোন কারণ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাধারণ মানুষকে বিচার বঞ্চিত করার অধিকার আছে কিনা- এতে বোঝা যায় আমরা গণতান্ত্রিক দেশে আছি কিনা? আমাদের বলা হয় স্বৈরতান্ত্রিক প্রোডাক্ট। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এখন কোর্ট দুই ভাগে বিভক্ত। একটি আওয়ামী লীগ, আরেকটি বিএনপি। যদি আইনমন্ত্রী, এমপি বা বিচারপতির সন্তান হওয়া যায়, তাহলে তাদের কাছে ক্লায়েন্টরা যায়। তাহলে আমরা কীভাবে প্র্যাকটিস করব? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক। বাজেটে আইন বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানানো হয় আয়োজন থেকে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, যেখানে আইন ও বিচারের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩২৯ কোটি টাকা। অপরদিকে দেশের মৎস্য ও পশুসম্পদ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রায় আড়াই গুণ বেশি, ৭৯৭ কোটি টাকা। রাজধানীর মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের বাড়তি কাজের জন্য অতিরিক্ত ৪৩০ কোটি টাকার বর্ধিত ব্যয় অনুমোদন হয়েছে। আবার এক কিলোমিটার বর্ধিত ফ্লাইওভারের খরচে সাড়া বছরের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সকল উন্নয়ন কাজের বরাদ্দের চেয়ে ঢের বেশি বলেও জানান তিনি। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, জাতীয় বাজেটে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
×