ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দাউদ হায়দার

না বাঁচাবে আমায় যদি মারবে কেন তবে-

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

না বাঁচাবে আমায় যদি মারবে কেন তবে-

এক মিলিয়ন শরণার্থী আশ্রয় দেবে জার্মানি। চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল কিছু না ভেবেই কি এই বক্তব্য দিয়েছিলেন? তিনি তো কচি বালিকা নন, আধপাকা রাজনীতিকও নন, এমন কি নন হুজুগে বৃন্দাবনী গোপী। হিসাব করেই তাঁর চলনবলন, গোঁ ধরলে অনড়। তাঁর প্রতিশ্রুতি, আশ্বাসেই উদ্বাস্তুর ঢল। ইউরোপের মধ্যে জার্মানিতেই বেশি বিদেশি। দেশটির ৮২ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৮ মিলিয়নই বিদেশী। এরা একদা-কমিউনিস্ট পূর্ব ইউরোপের, অতঃপর তুরস্কের (৪ মিলিয়ন)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই পূর্ব ইউরোপ ও তুরস্কের মানুষের কাছে জার্মানিই নিরাপদ ভূমি। তুর্কিদের হাতে সমস্ত ছোট ব্যবসা। মাংস, আনাজপাতি থেকে শুরু করে রেস্তরাঁ মায় মসজিদও। বের্লিনের ক্রয়েতসব্যার্গ জেলাকে বলা হয় লিটল ইস্তান্বুল। সুলতান হওয়ার বাসনায় মশগুল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ভাল ব্যবসায়ীও বটে। লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছেন (সাময়িক), খাওয়াচ্ছেন এই ধুয়া তুলে দেদার অর্থও লুটছেন (প্রতিদিন চার মিলিয়ন ইউরো) ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের তহবিল থেকে। গত মাসে দুইবার বের্লিনে এসেছেন, দুইবার ব্রাসেলস্-এ গিয়েছেন অর্থের দরবার করতে। বলা হচ্ছে, সাহায্যের অর্থে অস্ত্রশস্ত্র কিনছেন, ব্যবহার করা হচ্ছে কুর্দি খতমে। আরো মারাত্মক অভিযোগ, আইএসের (ইসলামিক স্টেট) কাছ থেকে প্রতিদিন ২৫ মিলিয়ন ডলারের তেল কিনছে তুরস্ক। যুদ্ধের ভারি অস্ত্রাদিও কিনছে। এই সরগোলও শুরু হয়েছে খুব, থোড়াই তোয়াক্কা করছে তুরস্ক, বরং হুমকি দিচ্ছে। গণতন্ত্রের বালাই নেই তুরস্কে। বহু মানবাধিকার কর্মী, লেখক, সাংবাদিক (চারটে সংবাদপত্র বন্ধ) বন্দী, জেলে। অনেকে পলাতক। ২১৩ জন জার্মানির বিভিন্ন শহরে, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী। চ্যান্সেলর মেরকেল চালে ভুল করেছেন হয়ত, শুরুতে। প্রশ্ন উঠেছে, বিরোধী দলগুলো, সরকারের মন্ত্রী, সাংসদরা কেন আখেরের পরিণতি জেনেও টু শব্দ করেননি, জাবর কেটেছেন? তাল ঠুকে বাহবা দিয়েছেন? বিধিবাম বলে এখন কেন গলাবাজি? এই অভিযোগ এ্যাঙ্গিরও (সাধারণ মানুষ এ্যাঙ্গেলা মেরকেলকে এ্যাঙ্গি বলেন)। শরণার্থী নিয়ে বিপদ কতটা ঘন হতে পারে, আইগুঁই করে বেনেলুক্স (বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-লুক্সেমবুর্গ) প্রথমেই জানিয়ে দেয়, ছোট এ তরী, ঠাঁই হবে না। কিন্তু জার্মানির মোড়লিপনায় ঘাড় নুইয়ে রাজি হয়েছে, শরণার্থী আশ্রয় দেবে, সংখ্যায় বেশি নয়, তিন দেশ মিলিয়ে মাত্র আট হাজার। বেনেলুক্সের দেখাদেখি পশ্চিম ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশের একই গোঁ। ব্রিটেন ১৬ হাজারের বেশি ঠাঁই দেবে না, ফ্রান্স ১৮ হাজার, ইতালি ১৪, অস্ট্রিয়া ১০, সুইজারল্যান্ড ৫, স্পেন, পর্তুগাল চুপ, নিজেরাই কাহিল, শঙ্করের মাকে জায়গা দেবে কোত্থেকে। তেঁতুল পাতায় একজনও আর সুজন নয়। নরওয়ে ৫ হাজার ঠাঁই দিয়ে খিড়কি দুয়ার বন্ধ করেছে। আমেরিকা, কানাডাও। সুইডেন ৮০ হাজার ফেরত পাঠাচ্ছে। ডেনমার্ক এক কাঠি সরস। ঠাঁই যদি চাও ১৫০০ ডলার ক্যাশ ছাড়ো, পরে পারা যাবে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য কি-না। ডেনমার্কই বলেছিল, শরণার্থী যারা আসছে, অনেকেই উগ্র ইসলামী মৌলবাদী, আল কায়েদা, আইএস-এর কর্মীও। হাঙ্গেরির অভিযোগ, শরণার্থীরা আমাদের তথা ইউরোপের কালচার কি আদৌ শিখবে? না। বরং আমাদের কালচার দূষিত করবে। নিজেদের কালচার তৈরি করবে। আরও ভয়াবহ, ইউরোপে কয়েক লাখ ইহুদীর বাস (হাঙ্গেরিতে ২৪ হাজার), উদ্বাস্তু-মুসলিমদের সঙ্গে আজ না হোক কাল, কাল না হোক পরশু ঝামেলা বাধবেই। ঝামেলা করবে উদ্বাস্তু মুসলিমরাই। এই আশঙ্কা জার্মানিতেও। সমাজ বিশ্লেষক, সমাজবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক প-িত, পেগিডা, এএফডি, বহু রাজনৈতিক দলের, এমন কি সাধারণ মানুষেরও ইন্ধন জুগিয়েছে খ্রিস্ট-নববর্ষের রাতে, কোলনে। সেক্সচুয়াল হ্যারাসমেন্ট। কোলনেই নয় শুধু, স্টুর্টগার্টে, হামবুর্গসহ আরও তিনটি শহরে। কোলনের ঘটনা সর্বাধিক প্রচারিত। বলা হচ্ছে, কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত শরণার্থীরা। সিরিয়া-আলজেরিয়া-মরক্কোর ১৮ জন ইতিমধ্যে গ্রেফতার। কেলেঙ্কারিতে জার্মান-আমেরিকান-ফ্রেন্চ-ব্রিটিশও। ওদের কথা বলা হচ্ছে না সরবে। না বলুক। শরণার্থীর অনেকেই ইউরোপে (বিশেষত জার্মানি) ঢুকে ভেবেছে, ধারণা পোক্ত করেছে, ওই যেমন অশোক মিত্র ‘কবিতা থেকে মিছিলে’ গদ্যে লিখেছেন, ‘আজ থেকে তিরিশ বছর আগে, দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে, শ্যামবাজারের রুগ্ন-ছেলেদের শান্তিনিকেতনে পাঠরতা মেয়েদের সম্বন্ধে যে-ধারণা ছিল..... ‘বোলপুরে নেমে দু-পা হেঁটে তারপর একটাকে লিয়ে লিলেই হলো ।’ ঠিক যেন তাই। এই ঘটনাই শরণার্থীর কপাল ভেঙেছে (কোলনে শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, কানিভালে ২০০০ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে)। দেশের জনগণ ক্ষিপ্ত, মিছিলে জোর আওয়াজ রিফিউজি হটাও। কণ্ঠ মেলাচ্ছে সরকারী ও বিরোধী নেতারাও। প্রবল চাপে এ্যাঙ্গি মচকাননি ঠিকই, বলছেন, লক্ষ বা মিলিয়ন নয়, ঠাঁই দেয়া হবে ২৪ হাজার শরণার্থীকে, যারা যথার্থ জেনুইন। ইরাক-সিরিয়া-লিবিয়া-আফগানিস্তানের জেনুইন মূলত কারা, কী করে পরীক্ষা করবেন? গুরুতর প্রশ্ন ইউরোপিয়ান মানবাধিকার সংস্থার। প্রতিদিনই দুই হাজারের বেশি উদ্বাস্তু ঢুকছে জার্মানিতেই। বের্লিনের ছয়টি অঞ্চলে শরণার্থী শিবির, সত্তর হাজারের বেশি আশ্রিত, শিবির থেকে কেউ বেরুতে পারবে না, পুলিশের নির্দেশ, পুলিশের কড়া পাহারা। একেবারে বন্দী। টেম্পলহোফের শিবিরে একজন বাঙালী উদ্বাস্তু, মাইনাস শীতে, তুষারপাতে, আকাশের দিকে চোখ তুলে, ক্ষীণ কণ্ঠ আপনমনে গাইছে : “না বাঁচাবে আমায় যদি মারবে কেন তবে? কিসের তরে এই আয়োজন এমন কলরবে ?” কিন্তু ভাবেননি বিপদ ঘনায়মান। ঘোষণা করলেন, এক মিলিয়ন শরণার্থীকে ঠাঁই দেবেন। মানবিকতায়। ঘোষণায় শরণার্থীর গ্রোত। দেড় মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। কোথায় ঠাঁই দেবেন? ছোট এই সোনার তরী। ক্রমশ ডুবন্ত। পত্রপত্রিকা সমালোচনায় মুখর, বিরোধীরা তো বটেই, নিজের দলের (সিডিইউ। ক্রিস্টিয়ান ডেনোক্রাটিক ইউনিয়ন। এবং সিস্টার পার্টি সিএসইউ। ক্রিস্টিয়ান সোসালিস্ট ইউনিয়ন)। সদস্য ও মন্ত্রীরা তুলোধুনা করছেন এ্যাঙ্গেলাকে, সকাল-সন্ধ্যায়। এতটাই সমালোচনা, পদত্যাগও দাবি করছেন। জনগণের সমর্থনও, ২৩ ভাগ বলছে (সরকারী টিভি এ আর ডি-র রিপোর্ট)। এ্যাঙ্গি (এ্যাঙ্গেলা মেরকেল ) জার্মানির গজব (পশ্চিমবঙ্গে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)। শরণার্থীর প্রেমে খুব রোশনাই ছিল শুরুতে, বলা হচ্ছিল, স্কিল লেবার এই দেশে দরকার, আমাদের কলকারখানার জন্যে প্রয়োজন, তাল দিচ্ছিল বিরোধীরাও, জোট সরকারের শরিকরাও, কিন্তু সমস্যা আরও গভীরে। দেখা যাচ্ছে, স্কিল লেবার বলতে শতকরা একজনও নয়। যে সব শরণার্থী ঠাঁই নিচ্ছে, অধিকাংশই শিশু, নারী, বয়স্ক। কর্মক্ষম যে পুরুষ, সেও স্বামী, পুত্রকন্যার জনক। এদের দিয়ে কোন কাজ হবে আদৌ। আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য প্রতিমাসে খরচ হচ্ছে পাঁচ মিলিয়ন ইউরোর বেশি। জনগণের ট্যাক্স থেকে এই খরচ। তো, জনগণ মহা ক্ষিপ্ত। শনৈ শনৈ বাড়ছে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। নিও নাতসিরা মাথাচাড়া দিয়েছে নানা শহরে। প্রতিদিনই মিছিল। সামাল দিতে পুলিশও দিশেহারা। বিদেশি বিদ্বেষ কী কতটা, টের পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। তিরিশ বছর এদেশে আছি, আগে কখনও দেখিনি। পেগিডা নামে একটি সংগঠন (বিদেশি তথা শরণার্থীর বিরুদ্ধে)। জার্মানির বিভিন্ন শহরে যে হুল্লোড় করছে, ভয়াবহ, আতঙ্কময়। এও বাহ্য। ছয় বছরও নয়, এএফডি (অলটার নেটিভ ফ্যুর ডয়েচল্যান্ড) পার্টি, জার্মানির রাজনীতির পিলে চমকে দিয়েছে। এই পার্টির দাবি ছিল শুরুতে ইউরো মুদ্রা থেকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে, অস্ত্র তৈরি বন্ধ করতে হবে। এখন একটিই ইস্যু, শরণার্থী হটাও। মজার কথা, দলের নেত্রী একজন হাঙ্গেরিয়ান, তিনিও একদা-শরণার্থী, যদিও জার্মান নাগরিক এখন। অবাক কা-, এএফডির সমর্থক কেবল বাড়ছেই না, জনগণ দুই হাতে অর্থ সাহায্য করছে। গত মাসেই ডোনেশন পেয়েছে ৩১ মিলিয়ন ইউরো (এআরডি টিভির রিপোর্ট)। এই দল এখন, তিন নম্বর, সিডিইউ এসপিডি (সোসাল ডেমোক্রাটিক পার্টি বা সামাজিক গণতন্ত্রী দল)। ভয়ে সিঁটকে গেছে। এই বছরেই (সেপ্টেম্বরে) জাতীয় নির্বাচন। এ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সিডিইউ এবং এসপিডি (মেরকেলের জোট সরকারে) পাগলপারা। উদ্বাস্তু কমিশনের (ইউএনসি এইচআর) হিসেবে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার আট শ’ ছিয়াত্তর, গত পাঁচ বছরে। বেসরকারী মতে আরও বেশি, প্রায় তিন গুণ। উদ্বাস্তু কমিশন কমিয়ে বলছে কেন? হেতু আছে বৈ কী। উদ্বাস্তুর দায় এড়াতে পারে না, এক অর্থে দোষীও বটে, যথাসময়ে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে পারেনি, উদ্ধারে সাহায্য করেনি, এমনকি গড়িমসি করেছে। প্রথম থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়নি। এই মৃতের সংখ্যায় সোমালিয়া থেকে বাংলাদেশীও আছেন, যারা ইউরোপের নানা দেশে আশ্রয়ের খোঁজে নদী-সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সময় ঝড়ঝঞ্ঝায়, দুর্যোগে নৌকো-জাহাজ ডুবিতে মারা গেছেন। অনেকেরই দেহ পাওয়া যায়নি, অতল জলে তলিয়ে গেছে। সংখ্যা হিসেবে তারা উল্লিখিত হয়নি। গত বছর (মার্চ। তারিখ সঠিক মনে পড়ছে না)। জুরিখের বহু খ্যাত ডাকসাইটে দৈনিক ন্যয়েনার জুরিশার সাইটুং উদ্বাস্তু কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছিল মৃতের সংখ্যা নামধামসহ জানাতে। এখন পর্যন্ত জানায়নি। দায় এড়িয়েছে। অজুহাত দিয়েছে অবশ্য। চ্যাংড়ামো তথা ফাজিল অজুহাত। দেশ-ছাড়ার আগে উদ্বাস্তুরা নামধাম কিছুই জানায়নি আমাদের। কী করে ঠিকুজির হদিস পাওয়া যাবে, কোথায় পাবো। ধোপে টেকেনি এই কৈফিয়ত। যারা মারা গেছেন, সেই দেশের সরকারের বা শহর-গ্রামের আঞ্চলিক মানুষের কাছেও খোঁজ নেয়া হয়নি, কে কখন বিদেশে আশ্রয়ের জন্য মাটিভিটে ছেড়েছে। গ্রিস যখন আর্থিক টানাপড়েনে ঢাকাইয়াদের ভাষায়- ছ্যারাব্যারা, বের্লিনের বহুমান্য দৈনিক ড্যের টাগেসস্পিগেল সম্পাদকীয়তে খোলাখুলি লিখেছিল, আর্থিক পুনরুদ্ধারেই সমস্যা মিটবে না, সামনের দিন আরও ভয়াবহ, শরণার্থীর ঢল নামবে ইউরোপে। বিশেষত জার্মানিতে। যুক্তি ছিল, গ্রিসের আর্থিক নাজেহালে জার্মানির মাতব্বরি এবং এক লহমায় বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার সাহায্য, ভিনদেশী আশ্রয়প্রার্থীদের নিশ্চয়ই প্রণোদিত করবে, অঢেল টাকাকড়ি আছে, নয়ছয় করছে, গেলেই সহায়তা-হাত বাড়িয়ে দেবে, ফেরাবে না, ইউরোপে জনসংখ্যা দরকার, শক্তসামর্থ্য শ্রমিকের প্রয়োজন। এই ধারণা জার্মানিসহ ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রিটেন বাদে) জানিয়েছে বহুবারই। খ্যামটা নাচে দেহবল্লরীর যে প্রকাশ, দর্শকের দাপাদাপি, উত্তেজনা স্বাভাবিক। কমিউনিজম ধসের পরে জার্মানি, ইউরোপের নানা দেশের ছ্যাবলামো, প্রেম, আদিখ্যেতায় পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্টরা দুই দাঁত বের করে হেসেছিল, ঠ্যালা কাহাকে বলে, কত প্রকার, বুঝিবে। অচিরেই বোঝা গেল। বলকান যুদ্ধের পরে হু হু করে লোক ঢুকেছে, আশ্রয় নিয়েছে জার্মানির নানা অঞ্চলে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রসারের পরে আরও বেশি। যেহেতু ওরা ইউরোপীয়, ইউরোপিয়ান অন্যান্য দেশের গলাবাজি খুব সরব হয়নি, সবই আ মরি মানবিকতা, ভ্রাতৃকুল। পাশা উল্টে গেছে। মারটা কোত্থেকে আসবে, ঘোড়া কখন টপকাবে, চালটা আদৌ আলপটকা কি না, ভাবেনি কখনও। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া যুদ্ধে আমেরিকার বদমাইশি বুদ্ধিতে সায় দিয়েছে, সাহায্যও করেছে ইউরোপ, গোপনে। যেমন জার্মানি। ইরাক-লিবিয়া-সিরিয়া যুদ্ধে জার্মানির আর্মাড কার, ট্যাঙ্ক, এমন কি ড্রোন (জার্মানির তিনটি কোম্পানির তৈরি। তিনটির মধ্যে পয়লা মার্সিডিস বেঞ্চ এবং থিয়েরসে-ক্রুপ। তৈরি করে আমেরিকায়)। শরণার্থীর যে ঢল জার্মানিতে, দেড় মিলিয়নের বেশি, কুছ পরোয়া নেহি, গলা চেঁচিয়ে বলেছিলেন চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মেরকেল। ওকে সাতাশ বছর ধরে চিনি। গোঁ ধরলে টলানো মুশকিল। ধুরন্ধর রাজনীতিক। যে হেলমুট কোল (প্রাক্তন চ্যান্সেলর) হরেক বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও ঠাঁই দিয়েছেন ওকে, রাজনীতিতে, কোলকেই ঝেঁটিয়ে বিদেয় করেছেন। এক ইন্টারভিউয়ে (জার্মানির সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক, ৮ মিলিয়ন কপি বিক্রি) বলেছেন, জীবনে মারাত্মক ভুল এ্যাঙ্গেলাকে কন্যাতুল্য ভেবে রাজনীতির হেঁসেলে জায়গা দিই। হেঁসেলে আগুন দিয়েছেন সময়মতো, কোল লক্ষ্য করেননি। এখন পস্তান। এ্যাঙ্গেলা মেরকেল গোটা বিশ্বের পয়লা নেতা, ২০১৫ সালের ম্যাগাজিনের (সাপ্তাহিক) কভারস্টোরি। গ্রিসের আর্থিক পুনরুদ্ধার, শরণার্থীর ঠাই, মানবিকতার ছ্যাবলামোর হরেক নর্তনকুর্দনে বিস্তর বাহবায় ভূষিত, শান্তি নোবেল পুরস্কারের জন্যেও মনোনীত, ফস্কে গেছে, তাতে কি। [email protected]
×