ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাটির নিচে মন্দির ঘিরে কৌতূহলী মানুষের ভিড়

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মাটির নিচে মন্দির ঘিরে কৌতূহলী মানুষের ভিড়

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ নাটেশ্বরে হাজার বছরের মন্দির কমপ্লেক্সের সন্ধান নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে। দেশী-বিদেশী কৌতূহলী মানুষের ভিড় তাই প্রাচীন নিদর্শনটি নিয়ে। প্রতœতাত্ত্বিকরা বলছেন রাজধানী ঢাকার কাছে নাটেশ্বরে মাটি খনন করে যে বিশাল মন্দির কমপ্লেক্সের সন্ধান পেয়েছেন তা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। গত দু’ বছর এখানে বাংলাদেশ ও চীনের প্রতœতাত্ত্বিকরা যৌথভাবে খনন কাজ পরিচালনা ও গবেষণা করছেন। খননকার্যের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, সবশেষে পাওয়া মন্দির কমপ্লেক্সটির চারদিকে চারটি বড় হলঘর রয়েছে। এসব হলঘরে রয়েছে ১৬টি পিলার। আর মাঝে রয়েছে মূল মন্দিরের অংশ বিশেষ। তিনি জানান, মন্দির কমপ্লেক্স থেকে প্রাপ্ত উপকরণ যুক্তরাষ্ট্রের বেটা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হয়ে ছিল। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে এসব স্থাপনা হাজার বছরের প্রাচীন। অর্থাৎ প্রাপ্ত কাঠ কয়লায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে এখানকার এই প্রতœস্থানে দুটি পর্যায়ের মানব বসতি ছিল। প্রথম পর্যায় ৭৮০-৯৫০ খ্রীস্টাব্দ এবং দ্বিতীয় পর্যায় ৯৫০-১২২৩ খ্রীস্টাব্দে। তিনি জানান, ২০১০ সাল থেকে মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ ও খনন শুরু হয় এবং নয়টি স্থানে প্রাচীন মানববসতির চিহ্ন পাওয়া যায়। পরে রঘুরামপুরে বিক্রমপুরী বৌদ্ধ বিহারে সাতটি বৌদ্ধ ভিক্ষু কক্ষ আবিষ্কৃত হয়। ২০১২ সালে নাটেশ্বরে প্রায় দশ একর জায়গা জুড়ে শুরু হয় খনন কাজ। পরে এই কাজে যোগ দেন চীনের প্রতœতাত্ত্বিকরাও। এসব স্থানে পাওয়া যায় নানা ধরনের মৃৎপাত্র। এছাড়া সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে আর দুটি স্তূপ হলো যার প্রতিটিতে চারটি করে স্তূপ রয়েছে। এছাড়া প্রকৌশলগত দিক থেকে অসাধারণ ইট-নির্মিত রাস্তাও পাওয়া গেছে যার ৩০ মিটার খনন সম্ভব হয়েছে ইতোমধ্যেই। এছাড়া নাটেশ্বরেই গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন বিশেষ স্থাপত্য কাঠামোর অষ্ট- কোণাকৃতি স্তূপ। এলাকাটি বাঙালী বৌদ্ধ প-িত অতীশ দীপঙ্করের জন্মভূমি। তাই এখানে অতীশ দীপঙ্করের সমসাময়িক বৌদ্ধবিহার, বৌদ্ধ মন্দির, বৌদ্ধ স্তূপ ও রাস্তাার আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকল্প পরিচালক ড. নূহ-উল-আলম লেনিন জানান, ২০১০ সাল থেকে বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ ও খনন কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সাল পর্যন্ত অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের নেতৃত্ব বিক্রমপুর অঞ্চলে ৯টি প্রতœস্থানে খনন করে প্রাচীন মানববসতির চিহ্ন আবিষ্কৃত হয়। ইতিমধ্যে রঘুরামপুরে বিক্রমপুরী বৌদ্ধ বিহারে ৭টি বৌদ্ধ ভিক্ষু কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে। রঘুরামপুরে প্রতœতাত্ত্বিক খনন চলমান রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর প্রতœস্থানে উৎখনন কাজ শুরু হয়। প্রায় ১০ এক জায়গা জুড়ে প্রতœতাত্ত্বিক ঢিবিতে কাজের বিশালতা অনুভব করায় চীনের হুনান প্রাদেশিক প্রতœতাত্ত্বিক ইন্সটিটিউটকে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সঙ্গে গবেষণা কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ২০১৪ সালে একটি চীনা প্রতœতাত্ত্বিক দল উৎখনন কাজে যোগ দেয়। এবারও ২০১৫ সালে তারা ৭ জন প্রতœতাত্ত্বিক উৎখননে অংশ নিচ্ছে। যৌথ উৎখননে এবার বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ প্রতœবস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত মৃৎপাত্রগুলোকে লাল এবং কালো শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। মৃৎপাত্রের মধ্যে অধিকাংশ সঞ্চয় আধার, রান্নার হাঁড়ি, গামলা, পানির পাত্র, প্রদীপ প্রভৃতি। মৃৎপাত্রগুলোতে বিভিন্ন নকশা পরিলক্ষিত হয়। ভাঙ্গা মৃৎপাত্র অংশ থেকে গত জুন মাসে চীন থেকে আগত ৩ জন মৃৎপাত্র বিশেষজ্ঞ ১ মাস কাজ করে একশ’টি মৃৎপাত্র পুনর্গঠন করেছে। দশম থেকে ত্রয়োদশ শতকের স্তূপ ও স্তূপ হলগুলো তৎকালীন স্থাপত্য পরিকল্পনা ও নকশাকারীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার এক দারুণ ফসল। স্তূপ বৌদ্ধদের কাছে খুবই পবিত্র এবং পূজনীয় স্থান। সাধারণত স্তূপ স্থাপত্যের মধ্যে বৌদ্ধ দর্শনের বিভিন্ন দিক প্রতীকী রূপে প্রকাশ পায়।
×