ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চলে গেলেন ওস্তাদ ইয়াসিন খান

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

চলে গেলেন ওস্তাদ ইয়াসিন খান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধ্রুপদী সঙ্গীত সাধক ওস্তাদ ইয়াসিন খান আর নেই। বৃহস্পতিবার রাতে মালিবাগের বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ওস্তাদ ইয়াসিন খানের মেয়ে বিন্দিয়া খান জানান, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে, বিলের কাগজ দিতে একজন বেল বাজালে আব্বা তখনই গিয়ে দরজা খুলে বিলের কাগজ নিয়ে দরজা লাগান। এরপরই মাথা ঘুরে পড়ে যান। সম্ভবত মাথায় আঘাত লাগে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে আমরা মালিবাগ খিদমাহ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাই। ডাক্তাররা দেখে বলেন উনি আর জীবিত নেই। বিন্দিয়া আরও বলেন, আমার আব্বা প্রায় ৯ মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন। এ্যাজমা, পিওপিডি ও ফুসফুসে আইএলডিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমরা প্রথম থেকেই বিভিন্নভাবে চিকিৎসা করিয়েছি। মাঝে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার ফলে উনার শরীর আরও খারাপ হয়ে যায়। মাস তিনেক আগে স্কয়ার হাসপাতালে নিলে ডাক্তাররা বলেন উনাকে যক্ষ্মার ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে, কিন্তু উনার কোন যক্ষ্মা নেই। ফুসফুসে আইএলডি নামক যে অসুখ হয়েছে এর চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। আমরা আব্বার চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছিলাম কিন্তু তেমন কোন সাড়া পাইনি। আমার আব্বার মাগফিরাতের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। বাদ জুমা মালিবাগ বাগানবাড়ি জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে বনানী করবস্থানে তার পিতার কবরে দাফন করা হয় সুর-সাধক ওস্তাদ ইয়াসিন খানকে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীসহ দেশের বিশিষ্ঠজনেরা। ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খানের ছোট ছেলে ওস্তাদ ইয়াসিন খান বাংলাদেশের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অন্যতম পথিকৃৎ। ওস্তাদ ইয়াসিন খান ১৯৩৭ সালে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। ৭ বছর বয়সে পিতা ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খানের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষা শুরু। ১৪ বছর বয়সে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। ধ্রুপদী ধারায় বিশেষ অবদানের জন্য শিল্পকলা একাডেমি গুণীজন সংবর্ধনা, ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন থেকে স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার পান তিনি। সম্প্রতি চ্যানেল আই খেয়াল উৎসবে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় উপমহাদেশের বরেণ্য এ সঙ্গীত সাধককে। বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ‘ভাগর ঘারানার’ একমাত্র প্রতিনিধিও ছিলেন তিনি। বাংলা খেয়ালের প্রসারে তার চর্চাধারা অনুসরণের তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা।
×