ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুনর্বাসনে নানা উদ্যোগ সরকারের ॥ বস্তিবাসীর জীবন কাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পুনর্বাসনে নানা উদ্যোগ সরকারের ॥ বস্তিবাসীর জীবন কাহিনী

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বস্তি দেশের সামাজিক ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের তরফ থেকে নেয়া হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা, নদী ভাঙন প্রবণ এলাকায় নদী শাসন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, বস্তির জায়গায় বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগ রয়েছে। বস্তির জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ঠেকাতে বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে সরকারের পরিকল্পনা কার্যক্রম, বস্তিবাসীদের শিক্ষিত করতে শিক্ষামূলক নানা কর্মকা-ের পাশাপাশি স্কুল নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বাড়ানো, মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানসহ নানামুখী পদক্ষেপ চলছে। সরকারকে পরিকল্পিতভাবে বেকায়দায় ফেলতে বস্তি থেকে নানা ধরনের পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকে। মাদক উদ্ধার ও অপরাধী গ্রেফতারে অভিযানকালে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে বস্তিবাসীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দেয়া হয়। বস্তিবাসীদের গুজবে কান দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে জনজীবন বিপর্যস্ত করার ভূরি ভূরি নজির আছে। বস্তিবাসীদের জন্য সরকারের উদ্যোগ ॥ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা লাভের পর বস্তি উন্নয়নে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। পুনর্বাসন ছাড়াও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা, নদী শাসন প্রকল্প ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ ছাড়া বহু ছোট ছোট পদক্ষেপ নেয়া হয়। বস্তিবাসীদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেও কাজ চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা লাভের পর ১৯৯৭ সালে বস্তিবাসীদের সুখ-দুঃখ দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাসানটেক বস্তিতে যান। তিনি আবেগাপ্লত হয়ে অত্যন্ত মানবিক কারণে তাদের পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন। অনেকটা জোরপূর্বকই বস্তি উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নেয়ায় এবং বস্তিবাসীদের প্রতি অবিচার করায় সরকারের দুইজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে রীতিমতো অপদস্থ হয়ে সরে যেতে হয়েছিল। এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে ভাষানটেকে প্রায় ৪৮ একর জমির উপর দরিদ্র, বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের বসবাসের জন্য আবাসন গড়ে তোলার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেটি ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প নামে পরিচিত। সেখানে প্রায় ১৫ হাজার দরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসনের কথা ছিল। কিন্তু মসজিদ, স্কুল ও কলেজ নির্মাণ, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টারসহ বসবাসরতদের নানা সুবিধার জন্য আরও কিছু অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। এজন্য পনেরো হাজারের পরিবর্তে ১৩ হাজার ৬শ’ পরিবারকে পুনর্বাসনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়, যা রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) কর্তৃক অনুমোদিত হয়। সে মোতাবেক অনেক অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। আবার অনেক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ইতোমধ্যেই সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ১৮টি বহুতল ভবন। প্রতিটি ভবনে এক শ’ করে মোট ১৮শ’ হতদরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাদের নামে ফ্ল্যাটগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একটি থাকার রুমবিশিষ্ট এ টাইপের ফ্ল্যাট দুই লাখ টাকায় এবং দুটি রুমবিশিষ্ট বি-টাইপের ফ্ল্যাট তিন লাখ টাকায় পরিবারগুলোর নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া পরিবারের মধ্যে ভাসানটেক বস্তি, সোনারগাঁও হোটেলের পেছনের বস্তি ও আগারগাঁও বিএনপি বস্তির। এভাবে অন্যান্য বস্তির হতদরিদ্র পরিবারগুলোকেও পুনর্বাসনের কথা রয়েছে। বসবাসরত পরিবারগুলোর সন্তানদের লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে ২০১৪ সালে চালু করা হয়েছে একটি সরকারী প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মহাবিদ্যালয়। পাশাপাশি মসজিদও গড়ে তোলা হয়েছে। একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার কথা রয়েছে। থাকছে একটি ফায়ার স্টেশন। বসবাসরত পরিবার যাতে তাদের ছেলেমেয়েদের স্বল্পব্যয়ে বিয়ের আয়োজন করতে পারেন সেজন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে কমিউনিটি সেন্টারের কিছু অংশে ভাসানটেক থানার কার্যক্রম চলছে। যে কোন সময় থানা অন্যত্র সরে যাবে বলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে। আরও ১২টি ভবনের বেজমেন্টসহ আনুষঙ্গিক কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, নানা কারণেই প্রকল্পের কাছ পিছিয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নেয়ার পর পরিকল্পনা মাফিক প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বেজমেন্ট হওয়া ভবনগুলো নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দ্রুতই এগুলোর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ১২টি ভবনে আরও ১২শ’ হতদ্ররিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে। এজন্য ইতোমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। প্রাপ্ত দরখাস্ত যাচাই-বাছাই করে উপযুক্ত পরিবারের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চালু প্রকল্পটি বিএনপি সরকারের আমলে অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে। বিএনপি সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পুরো দায়িত্ব দেয় এনএসপিডিএল (নর্থ সাউথ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড) নামের একটি কোম্পানিকে। কোম্পানিটি বিএনপি সরকারের শেষ দিকে প্রকল্পের সবকিছু বুঝে নেয়। ২০০৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রকল্প চালু রাখে। এ সময় কোম্পানিটি হতদ্ররিদ্র পরিবারের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রি না করে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেয়। বিক্রির টাকাও নয় ছয় হয়। এ ব্যাপারে ভাসানটেক বাস্তুহারা উন্নয়ন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হাজী মমিন খান জনকণ্ঠকে বলেন, বিদেশে বসবাসকারীদের কাছেও ফ্ল্যাট বিক্রির রেকর্ড রয়েছে কোম্পানিটির। প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে শেষ পর্যন্ত কোম্পানির মালিক আব্দুর রহিম গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান। চার মাস কারাবাস করেন। এরপর বর্তমান সরকার ক্ষমতা লাভের পর কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। প্রকল্পটি সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরিত হয়। বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয়টি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এসব ভবনের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়ার জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে বি টাইপের একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য ৭ থেকে ৯ লাখ টাকার কথা বলা হয়েছে। যা প্রকৃতপক্ষে কোন হতদ্ররিদ্র পরিবারের পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি সরকারের সুবিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় কোন হতদ্ররিদ্র পরিবারের পক্ষে ফ্ল্যাট পাওয়া সম্ভব নয়। সরকারের উদ্যোগ বার বার ব্যর্থ হওয়ার নেপথ্যে ॥ ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাওরানবাজারে রেললাইনের উপর গড়ে ওঠা অবৈধ মাছ বাজারে ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জনের মৃত্যু ও ১৬ জন আহত হন। এমন ঘটনার পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়। বিশেষ করে সরকারী জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বস্তি ও স্থাপনা নিয়ে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। হতাহতদের অধিকাংশই ছিলেন কাওরান বাজার রেলওয়ের জায়গায় গড়ে ওঠা বস্তির বাসিন্দা। রেলের জায়গায় অস্থায়ী মাছের বাজার বসানোর কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে রেলওয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে। এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠার পেছনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় প্রভাবশালী ও সুবিধাভোগী এক শ্রেণীর মানুষ জড়িত বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। কাওরান বাজারের ঘটনার পর থেকেই রেল কর্তৃপক্ষ সারাদেশে রেলের জায়গায় থাকা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছিল। টানা প্রায় ১৪ দিন রেলওয়ে বিভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রাখে। গুঁড়িয়ে দেয়া হয় হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা। এরপর মানবিক কারণ দেখিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। এরপর আর কোন উচ্ছেদ অভিযান চালায়নি। উচ্ছেদের পর দখলমুক্ত করা রেলের জায়গায় আবার নতুন করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। অনুসন্ধানে জানা যায়, উচ্ছেদ অভিযান বার বার থেমে যাওয়ার অন্যতম কারণ এনজিও, মাদক ব্যবসা, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ভোটের হিসাব নিকাশসহ নানা ধরনের অপরাধীর তৎপরতা। মাদক ও অপরাধীদের ধরতে বস্তিতে অভিযান চালালে গুজব ছড়িয়ে বস্তিবাসীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দেয়া হয়। বস্তিবাসীদের দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলা হয়। সর্বশেষ পোড়া বস্তি উচ্ছেদ অভিযানকালেও গুজব ছড়িয়ে পুলিশের সঙ্গে বস্তিবাসীদের সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দেয়া হয়েছিল। প্রচুর রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছিল পুলিশকে। ২০৪১ সাল নাগাদ বস্তিবাসীদের জীবনের আমূল পরিবর্তনের কথা রয়েছে ॥ দেশের বস্তিগুলো মূলত স্থানীয় সরকারের অধীনে। এরমধ্যে সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা বস্তিগুলো স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সিটি করপোরেশন দেখভাল করে থাকে। সরকার ২০৪১ সাল নাগাদ বস্তিবাসীদের জীবনমানে আমুল পরিবর্তন ঘটাতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। বস্তির জায়গায় বা সরকারের সুবিধাজনক জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা রয়েছে। ভবনগুলোতে ছোট ছোট ফ্ল্যাট নির্মাণ করে নামমাত্র মূল্যে হতদ্ররিদ্র বা বস্তিবাসীদের নামে বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। পাশাপাশি দখলমূক্ত হওয়া বস্তির জায়গাগুলোতে সরকার ভারি শিল্প স্থাপনসহ উন্নয়নমূলক কর্মকা- চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন শাখা দেশের ৪৫ হাজার বস্তির উন্নয়নের জন্য ৬০ লাখ পাউন্ড, যা বাংলাদেশী টাকায় ৭২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এসব অর্থ ব্যয় হচ্ছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের তদারকিতে বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে। প্রকল্পের কৌশলগত সহায়তা দিচ্ছে ইউএনডিপি (জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা)। পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ছাড়াও বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে য্ক্তু ও অধীন ৩০টি সংস্থা, সুশীল সমাজ, হাজারখানেক এনজিও ও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা জড়িত। প্রকল্পের আওতায় বস্তিবাসীদের উপার্জনক্ষম এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। যাতে বস্তিতে থাকা সচ্ছল পরিবারগুলো এক সময় আপনা আপনিই গ্রামে বা শহরের কোন সুবিধাজনক জায়গায় চলে যায়। এছাড়া সরকার গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করারও চেষ্টা করছে। যাতে বস্তির হতদরিদ্র মানুষ কষ্টের জীবন ছেড়ে গ্রামেই কিছু করে উপার্জন করতে পারেন। ইতোমধ্যেই এমন প্রকল্পের আওতায় বস্তির প্রায় ২ লাখ মানুষের আর্থিক অবস্থা ফিরেছে। তাদের অনেকেই গ্রামে বা শহরের সুবিধাজনক জায়গায় চলে গেছেন। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা এক লাখ। জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে শিক্ষাকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অনেক বস্তিবাসী শিক্ষিত হয়ে উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়ে বস্তি ছেড়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতামত ॥ স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকার শতকরা ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিতে বসবাস করছেন। তবে বস্তির পরিমাণ কমেছে। পাল্টে গেছে বস্তির রূপও। আগে বিস্তর জায়গায় বস্তি ছিল। এখন নানা কারণে বস্তিবাসীদের অনেকেই সরে বড় কোন বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা তেমন একটা কমেনি। এর প্রধান কারণ শহরের নানা সুবিধা। বিশেষ করে অর্থ উপার্জনের নানা সুবিধা থাকা। গ্রাম থেকে বেশি উপার্জনের আশায় আসা নিম্ন আয়ের লোকজন বস্তিকেই বসবাসের উপযুক্ত জায়গা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। কারণ বস্তিতে ভাড়া কম। এজন্য গার্মেন্টস কর্মী, গৃহকর্মী, রিক্সাচালক, হকার থেকে শুরু করে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ বস্তিতে বসবাস করে থাকেন। বস্তির থাকার কারণে মাদক ও বস্তিকেন্দ্রিক নানা অপরাধ যেমন চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই, নারী ও শিশু পাচারসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। বস্তিবাসীদের গ্রামমুখী করতে গ্রামে আরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া শহরে স্বল্প আয়ের মানুষদের থাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে এ সমস্যা অনেকটাই সমাধা হয়ে যাবে। তবে শহরে স্বল্প আয়ের মানুষদের কম খরচে থাকার ব্যবস্থা করলে গ্রামের মানুষ শহরমুখী হতে পারে। এজন্য গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। যাতে গ্রামের মানুষ শহরমুখী কম হন। নগর বিশেষজ্ঞ নুরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশে প্রকৃত পক্ষে কি পরিমাণ বস্তি আছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। এমনকি কি পরিমাণ জায়গার উপর বস্তি গড়ে উঠেছে সে সম্পর্কে কোন স্পষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে সংজ্ঞা অনুযায়ী ঢাকায় অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ লাখ লোক বস্তিতে বসবাস করছেন। পরিবারের সবাই এক রুমে বসবাস করা, কয়েকটি পরিবার মিলে কমন বাথরুম, রান্না ঘর ব্যবহার করা বস্তির সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে। কারণ নাগরিক সুবিধার জন্য ন্যূনতম যে সুযোগ সুবিধা থাকা উচিত তা এসব পরিবার পায় না। সে হিসেবে দেশে বেসরকারী বা মালিকানাধীন বস্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সারাদেশে থাকা মোট বস্তির শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগই বেসরকারী জায়গায় বা ব্যক্তি মালিকাধীন বস্তি। সরকারী জায়গার উপর মাত্র ২০ ভাগ বস্তি রয়েছে। যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বেসরকারী ও ব্যক্তি মালিকাধীন বস্তি কমিয়ে আনতে সিটি কর্পোরেশন বা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বাড়ি মালিকদের নোটিস দিয়ে বসবাসের উপযোগী করে বাড়ি তৈরি করার নির্দেশ দিতে পারে। অন্যথায় বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের বেসরকারী বা ব্যক্তি মালিকাধীন বস্তির সংখ্যা কমে যাবে। এছাড়া সরকারী জায়গায় ঘিঞ্জি ঘর তুলে বসবাসকারীদের বিষয়ে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করা, গ্রামে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা বা শহরে স্বল্প মূল্যে থাকার ব্যবস্থা করলে বা বহুতল ভবন নির্মাণ করে অল্প টাকায় ভাড়া দিলে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব। বস্তি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হলে সমাজ থেকে বস্তিকেন্দ্রিক অপরাধ কমে আসবে।
×