ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিএসপি সুবিধা না পেলে-

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জিএসপি সুবিধা না পেলে-

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের (টিকফা) সইয়ের পর দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ফোরাম গঠিত হয়। আশা করা গিয়েছিল এর ফলে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া নিয়ে ওই ফোরামে আলোচনা করে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। কিন্তু সে গুড়েবালি। তাই টিকফা দেশের স্বার্থরক্ষায় বিশেষ কোন কাজে আসছে কিনা এমন প্রশ্ন উঠছে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেনÑ আমেরিকা জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে না দিলে টিকফা কার্যকর হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশ্বের ১২২টি দেশের পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) নবায়ন করা হলেও সেই তালিকায় বাংলাদেশ নেই। সার্ক জোটের দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান এই তালিকায় থাকলেও বাংলাদেশকে ফেরানো হয়নি। অথচ জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র যে ১৬টি শর্ত দিয়েছিল তার প্রায় সবই বাংলাদেশ পূরণ করেছে। তাহলে কেন এটা হলোÑ এ প্রশ্নই ঘুরেফিরে উচ্চারিত হচ্ছে। অবশ্য জিএসপি রাজনৈতিক কারণে স্থগিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট। অপরপক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রীর অভিমত বার্নিকাটের ঠিক উল্টো। তিনি এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলেই মনে করেন। বুধবার জাতীয় সংসদেও সেটা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়তে থাকে, যা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে চরম পর্যায়ে পৌঁছে। ওই সময় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজেনা দেশে-বিদেশে নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রীরাও প্রকাশ্যে মজেনা ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। তারপর থেকে দুই দেশের সরকারের শীতল সম্পর্ক আর উষ্ণতা ফিরে পায়নি। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি পুনর্বহাল করছে না বলে ধারণা সরকারের নীতি-নির্ধারকদের। আমরা মনে করি শ্রম-পরিবেশ ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার বিগত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটানোর ফলে জিএসপি সুবিধা ফিরে না পাওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ নেই। ভুলে গেলে চলবে না যে, শত বছর আগে ১৯১১ সালে আমেরিকার ট্রায়াঙ্গেল শার্ট তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল ১৪৬ জন শ্রমিক, আহতের সংখ্যাও ছিল অনেক। তাই রানা প্লাজা বা তাজরীন ফ্যাশনসের দুর্ঘটনার কারণ দেখিয়ে জিএসপি সুবিধা স্থগিতের বিষয়টিও সে সময় অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাছাড়া গত বছর বিভিন্ন সময়ে বিদেশী ক্রেতারা পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গাজীপুরে তিনটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে অভিভূত হয়েছিলেন বিদেশী ১০ কূটনীতিক। সুতরাং জিএসপি সুবিধা ফেরত না পাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোন্ নীতি কাজ করছে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আমেরিকা জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে না দিলে টিকফা কার্যকর হবে নাÑ বাণিজ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে সরকার নীতির প্রশ্নে কঠোর। আমেরিকার ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশলটি থেকে দেশ ন্যায্য সুবিধাপ্রাপ্ত হোকÑ এমনটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
×