স্টাফ রিপোর্টার ॥ কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া মসলিনের হৃত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় তরুণ প্রজন্মের কাছে হারানো এ ঐতিহ্যের কথা জানাতে হবে। ব্রিটিশরা ঢাকার এ এতিহ্যবাহী সম্পদ লুণ্ঠন ও ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। তাদের অত্যাচারে এ সম্পদ বিলুপ্ত হয়েছে। শুধু ভারত বর্ষ থেকে নয়, বিভিন্ন দেশ থেকে তারা এমন অনেক সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। বিভিন্ন দেশের হারানো ঐতিহ্যকে তারা স্থান দিয়েছে তাদের জাদুঘরে। তবে গ্রামীণ ঐতিহ্যসহ সংস্কৃতির যা আজ বিলুপ্তির পথে তা ফিরিয়ে আনতে চাই। এ জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের অডিটরিয়ামে ‘মসলিন উৎসব ২০১৬’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে জাতীয় জাদুঘর, দৃক ও আড়ং। আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত মসলিন প্রদর্শনী ও মসলিন পুনরুজ্জীবনের এ উৎসব চলবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমাদের শৈশব-কৈশোরে মসলিন শব্দটি বেশ পরিচিত ছিল। আমরা তখন পড়েছি মসলিন ঢাকার একটি সম্পদ। ব্রিটিশদের অত্যাচারে তা এ দেশ থেকে চলে যায়। তাদের কাজ ছিল লুণ্ঠন আর ডাকাতি। বাংলাদেশের বহু শিল্পকর্ম ব্রিটিশরা নিয়ে গেছে। আমাদের দেশ থেকে তারা বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে তাদের জাদুঘরে স্থান দিয়েছে। শুধু ভারতবর্ষ নয়, বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে গেছে। তবে তা ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এ সময় অর্থমন্ত্রী এ উদ্যোগের প্রশংসা করে সর্বাত্মক সফলতা কামনা করেন এবং হারিয়ে যাওয়া মসলিনের ঐতিহ্য সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে জানতে অনুরোধ জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতেই আমাদের এ উদ্যোগ। গ্রামীণ ঐতিহ্য, সংস্কৃতিও আজ অনেকাংশে বিলুপ্তির পথে। যা কিছু হারিয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে চাই। তিনি বলেন, মসলিন নিয়ে নানা ইতিহাস রয়েছে, সারা পৃথিবীতে যে তুলা থেকে মসলিন তৈরি হতো তার বীজও আর নেই। মৌলিক মসলিনের কাছাকাছি কিছু একটা তৈরি করা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে একা সম্ভব নয়। তুলা উন্নয়ন বোর্ড ও বিসিকসহ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য অর্থের প্রয়োজন রয়েছে, তা শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। উন্নয়নমুখী বাংলাদেশে এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, দৃক একটি গবেষণামূলক উদ্যোগ নিয়েছে যার মাধ্যমে আমরা আজকে মসলিনের গল্প, এর ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের দেশের সম্পৃক্ততা, এর বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে জানতে পারছি। কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া মসলিন সম্পর্কিত তথ্য ও শিল্পকর্ম খোঁজার এই উদ্যোগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পুরো সমর্থন ছিল সব সময়। দৃকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, মসলিন সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো জানতে বেঙ্গল মসলিন টিম নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, তথ্য সংগ্রহে ছুটে বেড়িয়েছে দেশ-বিদেশ। এ উদ্যোগ সফল করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নানাভাবে সহায়তা করেছে। এ সময় তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আখতারি মমতাজ, জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি এম আজিজুর রহমান, ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজের সিনিয়র ডিরেক্টর তামারা আবেদ, ভিক্টোরিয়া এ্যান্ড এ্যালবারট জাদুঘরের সিনিয়র কিউরেটর রোজমেরি ক্রিল প্রমুখ।
‘লিজেন্ড অব দ্য লুম’ শিরোনামে একটি ফিল্মের ট্রেলার দেখানো হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এবং ‘মসলিন আওয়ার স্টোরি’ শিরোনামে গবেষণামূলক একটি বই প্রকাশ করা হয়। বইয়ের জন্য প্রি অর্ডার ফরম থাকছে প্রদর্শনীস্থলে। এছাড়া ‘মসলিন উৎসব ১৬’ উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ১০ টাকা ও ৫ টাকা মূল্যমানের দুটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে, ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।