ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বৈষম্যের শিকার ফ্রান্সের মুসলমানরা

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বৈষম্যের শিকার ফ্রান্সের মুসলমানরা

অনলাইন ডেস্ক॥ জরুরি আইনে নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে ফ্রান্সের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর গত জানুয়ারি মাসে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করে সরকার। এ আইনের সুযোগে মুসলিম নাগরিকদের বাড়িঘরে নিরাপত্তা তল্লাশির অযুহাতে যখন-তখন ঢুকে পড়ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনির সদস্যরা। রাস্তায়ও হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে মুসলিম নাগরিকদের। জরুরি অবস্থার মেয়ার আরো তিন মাস বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে সরকার। এ ঘোষণার পর মুসলিম নাগরিকদের উপর সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশি নির্যাতন, নিগ্রহ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। জরুরি অবস্থার সময় বাড়ানোর কথা জানান সরকারের মুখপাত্র স্টেফেন লি ফল। বলেন, সন্ত্রাসী হামলার হুমকি ফ্রান্স এবং ইউরোপে এখনও বেশ প্রবল। সেকারনে জরুরি অবস্থা বহাল রাখা প্রয়োজন। এ আইন বেশ কাজে দিয়েছে বলেও জানান সরকারের ওই মুখপাত্র। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা হয় বিদায়ী বছরের ১৩ নভেম্বর। ওই হামলায় অন্তত ১৩০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে ৭ হামলাকারী। ওই ঘটনার পর সম্ভাব্য সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগিদের ধরতে ফ্রান্সজুড়ে কমপক্ষে ৩ হাজার ২’শ অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে ৩ থেকে ৪’শ ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযানে আটক অধিকাংশ নাগরিক পুলিশ সদস্যদের হাতে নিগ্রহের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। বলেছেন, মুসলিম ধর্মাবলম্বি হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের অহেতুক হেনস্তা করেছেন। মানবাধিকার সংগঠন এইচ আর ডব্লিও’র গবেষক ইজ্জা লেগতাস বলেছেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা ফ্রান্সের দায়িত্ব। কিন্তু এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ অহেতুক নাগরিকদের বিশেষ করে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে অসদাচরণ করছে। এতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন পরিবারগুলো এবং তাদের মধ্যে এ ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, ফ্রান্সে তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক, যোগ করেন লেগতাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে এতো দীর্ঘ সময় জরুরি অবস্থা রাখা হয়নি। বিদ্যমন জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৬ ফেব্রুয়ারি। জরুরি অবস্থায় পুলিশকে বিনা ওয়ারেন্টে সন্দেহভাজক যে কোন বাড়িতে কিংবা রাস্তায় চলাচলকারি যে কোন নাগরিককে তল্লাশি করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরো তিন মাস বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনার প্রতিবাদ হয়েছে। গত শনিবার প্যারিসের রাস্তায় জড়ো হয়ে এ প্রতিবাদে যোগ দিয়েছে হাজারো মানুষ। একই সঙ্গে সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত হলে দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেছে প্রতিবাদিরা। প্রেসিডেন্টের এ পরিকল্পার প্রতিবাদে দু’সপ্তাহ আগে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন আইনমন্ত্রী ক্রিসটিন তাওবিরা। পদত্যাগের পর বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বর্ণবাদ নতুন মাত্রা পাবে। নিগ্রহের শিকার হবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণ করে জরুরি অবস্থা স্থায়ী কোনো সমাধান হতে পারে না।
×