ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাসক বদলানোর মার্কিন নীতি রোধ করছেন পুতিন

সিরিয়ায় অভিযান ॥ সাফল্য দেখছে মস্কো

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সিরিয়ায় অভিযান ॥ সাফল্য দেখছে মস্কো

সিরিয়ায় চার মাস আগে বিমান হামলা শুরু করার পর তা এখন মস্কোর জন্য সুফল বয়ে আনছে বলে কেমলিন আস্থা পোষণ করছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটি মস্কোর সবচেয়ে বড় বৈদেশিক অভিযান। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই সমর্থন করতে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর ভাগ্য পাল্টে দিয়েছেন। এ বাহিনী দেশটির পাঁচ বছরের সঙ্কটকালে মধ্যপন্থী ও ইসলামপন্থী বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে গত বছর দ্রুত ভূখ- হারাচ্ছিল। সরকারী বাহিনী এখন আক্রমণাত্মক অবস্থানে রয়েছে। গত সপ্তাহে তারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক কোয়ালিশনের সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহীদের কাছ থেকে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ শেখ মিসকিন শহরটি দখল করে। এটি ছিল তাদের এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিজয়। মস্কোতে বিশ্লেষক ও কর্মকর্তারা বলেন, রুশ সরকার জাতীয় বাজেটের খুব কম অংশ ব্যয় করেই ঐসব সাফল্য অর্জন করেছে। এতে ন্যূনতম সংখ্যক সৈন্য নিহত হয় এবং ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়া যায়। বিশ্লেষক ইভাগেনি বুঝিনস্কি বলেন, মস্কোতে এ অভিযানকে পুরোপুরি সমতল বলে গণ্য করা হয়। তিনি বলেন, এটি সম্ভবত এক বছর বা এরও বেশি সময় চলতে পারে কিন্তু এটি স্থলযুদ্ধে সাফল্যের ওপর নির্ভর করবে। সিরিয়ার স্থলযুদ্ধে সৈন্য মোতায়েনের রুশ পদক্ষেপের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা তা দেখার বিষয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত বছর সতর্ক করেছেন যে, রাশিয়া এমন এক বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পতিত হচ্ছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান আক্রমণের কথাই স্মরণ করিয়ে দেবে। মস্কো কখন বিজয় ঘোষণা করতে পারবে এবং এর সিরিয়া ত্যাগের কোন পরিকল্পনা রয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু যেহেতু আসাদের বাহিনী রণাঙ্গনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জেনেভায় অনুষ্ঠেয় কূটনৈতিক আলোচনার মাত্র দু’দিন পর অভিযোগ ও পাল্টাঅভিযোগের মধ্য দিয়ে ভেঙ্গে পড়েছে, সেহেতু ঠিক এখন সিরিয়া থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে ক্রেমলিনের ওপর সামান্য চাপই রয়েছে। মস্কোভিত্তিক স্বতন্ত্র রাজনৈতিক বিশ্লেষক কনস্তানতিন ভন এগার্ত বলেন, পুতিন মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক দাবা খেলায় অবতীর্ণ হতে পারেন, কারণ এতে খুব মূল্য দিতে হবে না। ভন এগার্ত বলেন, সিরীয় সংঘাতে যোগ দিয়ে পুতিন তার দৃষ্টিতে সিরিয়াতে শাসক পরিবর্তনের মার্কিন নীতি রোধ করা, তাঁর সামরিক শক্তি দেখানো এবং মস্কো এক অনুগত অংশীদার বলে ঐ অঞ্চলের মিত্রদের পুনরাশ্বস্ত করার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু রাশিয়ার শেষ পদক্ষেপ কী হবে, তা অস্পষ্টই রায়ে গেছে বলে তিনি ও অন্যরা মন্তব্য করেন। সিরীয় অভিযানে রাশিয়াকে স্পষ্টতই কিছু মূল্য দিতে হয়েছে। অক্টোবরে রুশ পর্যটকদের নিয়ে মিসর থেকে ফিরে আসছিল এমন এক চার্টার জেটে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হলে ২২৪ জন নিহত হয়। ইসলামিক স্টেটের সিনাই উপদ্বীপ শাখা ঐ হামলার দায় স্বীকার করে। নবেম্বরে তুর্কী এফ-১৬ বিমানের গোলার আঘাতে এক রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হলে পাইলটের মৃত্যু হয়। এর পর উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে এক রুশমেরিন সম্ভবত সেনা মার্কিন সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন। বুধবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে মর্টারের গুলিতে এক সামরিক উপদেষ্টা নিহত হন বলে ঘোষণা করে। এ জন্য ইসলামিক স্টেটকে দোষারোপ করা হয়। রুশ বোমারু বিমান ইসলামিক স্টেটের চেয়ে বরং আরও মধ্যপন্থী আসাদবিরোধীদের লক্ষ্য করেই বেশি বোমাবর্ষণ করেছে এমন অভিযোগ পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভসহ রুশ কর্মকর্তারা উড়িয়ে দিয়েছেন। রুশ হস্তক্ষেপ ওবামা প্রশাসনের আসাদের পদত্যাগসহ আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের মীমাংসা করার ইচ্ছা নিস্ফল করে দিয়েছে। আসাদবিরোধীরা চলতি সপ্তাহে জেনেভো আলোচনায় যোগ দিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, কারণ যুক্তরাষ্ট্র আসাদের ভবিষ্যত নিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছিল বলে মনে হয়েছিল। অনেক দিক দিয়েই পুতিনের হস্তক্ষেপ যুদ্ধক্ষেত্রের চেয়ে কূটনীতির এক হাতিয়ার হিসাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। মস্কোতে বিশ্লেষকরা বলছেন, রুশ হস্তক্ষেপের পর চার মাসে আসাদ দেশের ভূখ-ের শতকরা মাত্র ২ ভাগ পুনর্দখল করতে পেরেছেন। মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো স্টিভেন সাইমন বলেন, রুশ হস্তক্ষেপ এর সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় কাজটি এরই মধ্যে শেষ করেছে, আর সেটি হলো সিরীয় সরকারের সংহতি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
×