ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুবা সুলতানা

প্রযুক্তি বিশ্বের আইকন মারিসা মেয়ার

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রযুক্তি বিশ্বের আইকন মারিসা মেয়ার

পড়াশোনা তখনও শেষ হয়নি মারিসার। তার আগেই ১৪টি কোম্পানি থেকে ডাক পেয়েছিলেন মারিসা মেয়ার। কেননা সেই সময় মারিসার যোগ্যতা সম্পর্কে সবারই জানা ছিল। একবার অধ্যাপক এরিক মারিসাকে গুগলের ল্যারি পেজ ও সের্গেই বিনের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কিন্তু মারিসা তাদের সঙ্গে দেখা করেননি। সময়টা ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাস। মারিসা মেয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষ করে স্ট্যানফোর্ডেই স্নাতকোত্তর কোর্সে কম্পিউটার বিজ্ঞান কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। একদিন ই-মেইল খুলে দেখেন তার মেইলে বেশকিছু কোম্পানি থেকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য মেইল এসেছে। এর মধ্যে একটি মেইল ছিল গুগলের। মারিসা মেয়ার গুগলের সেই মেইলের উত্তরে লিখেছিলেন- সময় কম, সিদ্ধান্ত নিতে চাই আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যেই। যদি সব সাক্ষাতকার একদিনেই নেন তবেই কেবল আসব। মারিসার ইচ্ছানুযায়ীই ২৭ এপ্রিল সাক্ষাতকার নেন ল্যারি পেইজ ও ব্রায়ান এবং অবশেষে ১৯৯৯ সালের ২৩ জুন ২০তম এবং প্রথম নারী প্রকৌশলী হিসেবে গুগলে যোগ দেন তিনি। কর্মজীবনের ১৩টি বছর তিনি গুগলের সঙ্গে কাটান। সে সময় তিনি গুগল সার্চ, গুগল ইমেজ, গুগল নিউজ, গুগল ম্যাপস, গুগল বুকস, প্রোডাক্ট সার্চ, টুলবার, আই-গুগল এবং জি-মেইলের উন্নয়নে কাজ করেন। মোট কথা গুগলে তিনি একাধারে একজন ইঞ্জিনিয়ার, ডিজাইনার, প্রোডাক্ট ম্যানেজার ও এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন। গুগলে যোগদানের পূর্বে মারিসা সুইজ্যারল্যান্ডের ইউবিল্যাবের ইউবিএস রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১২ সালের ১৭ জুলাই ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন মারিসা মায়ার। মরতে বসা ইয়াহুকে কিন্তু তিনিই পুনরুজ্জীবিত করেছেন। যোগদানের পরবর্তী বছরে তিনি পরিচালনা বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে তিনি ইয়াহুর মাতৃত্বকালীন ছুটির নিয়মে বড় পরিবর্তন আনেন। তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়সীমা বাড়ান এবং নগদ বোনাস প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তার সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে বড় বড় কোম্পানিতে অনুসরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়। মারিসা ইয়াহুতে এসে নতুন করে সাজিয়েছেন ইয়াহুর হোম পেজটি, ফ্লিকার সেবার নতুন নক্সা করেছেন, বেশ কয়েকটি মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন আপগ্রেড করেছেন এবং ইয়াহুকে অনলাইন সেবা হিসেবে জনপ্রিয় করতে বেশকিছু নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন। সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে- তার অধীনে তিন বছর ক্রমাগত লোকসানের মুখ দেখতে থাকা ইয়াহু আবার লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। মারিসা মায়ারের যোগদানের পর ব্যবহারকারীর দিক দিয়ে গুগলকে টপকে গেছে ইয়াহু। সার্চ ইঞ্জিন শিল্পে আধিপত্য বাড়াতে সম্প্রতি নিজেদের সাইটে বেশকিছু পরিবর্তন আনেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মারিসা মায়ার। এর মধ্যে ইয়াহুর লোগো পরিবর্তনও ছিল। এরপর থেকে ইয়াহু বেশকিছুটা উন্নতির মুখ দেখে। ২০১১ সালের পর ২০১৩ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশিবার ভিজিট হওয়া সাইট হিসেবে গুগলকে পেছনে ফেলে ইয়াহু। এক প্রতিবেদনে বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কমস্কোর জানিয়েছে, ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে প্রায় ১৯ কোটি ৭৮ লাখ ব্যক্তি। অন্যদিকে গুগল ব্যবহার করেছে প্রায় ১৯ কোটি ১৪ লাখ ব্যক্তি। তবে আর্থিক দিক হতে এখনও ইয়াহু গুগলের অনেক পেছনে পড়ে আছে। মারিসা মায়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার পর থেকে গত ১৩ মাসে ইয়াহু ২০টির মতো প্রতিষ্ঠান কিনেছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নিউইয়র্কভিত্তিক ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম টাম্বলার ১১০ কোটি মার্কিন ডলারে কিনে নিয়েছে অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইয়াহু। ফরচুন ম্যাগাজিনের ৫০ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নারীর তালিকায় মারিসা মেয়ারের নাম রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে তিনি এ তালিকায় রয়েছেন। এছাড়া ২০০৯ সালে মেয়ার গ্ল্যামার ম্যাগাজিনের সবচেয়ে কমবয়সী নারী হিসেবে ‘ওমেন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন। নতুন দায়িত্ব নেয়ার পর তাই এখন ইয়াহুকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে কাজ করছেন তিনি। ধ্রুপদী ব্যালে নাচে পারদর্শিতার পাশাপাশি ফ্যাশনবোধের কারণে আবেদনময়ী সিইওর তালিকায় এসেছেন ৩৮ বছর বয়সী মারিসা।
×