ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নারী জাগরণ ॥ স্মরণীয় যাঁরা, বরণীয় যাঁরা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নারী জাগরণ ॥ স্মরণীয় যাঁরা, বরণীয় যাঁরা

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া বাঙালী নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া নারীর স্বাধীনতার জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন। সমাজের অন্ধকার পথকে পেছনে ফেলে নারীর এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে তিনি লিখেছেন অসংখ্য লেখা। নারী-পুরুষের ভেদাভেদ দূর করে একই সঙ্গে সমাজ গড়ার প্রেরণা হিসেবে যুগে যুগে মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন এ মহীয়সী নারী। তার গ্রন্থগুলোর মধ্যে সুলতানার স্বপ্ন, অবরোধবাসিনী, পদ্মরাগ ও মতিচূর উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও শিক্ষা ও সামাজিক কর্মকাে নারীদের এগিয়ে নিতে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল ও আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয় মারা যান। বিপ্লবী নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বিশ্বের কাছে পরিচিত ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম বিপ্লবী নারী হিসেবে। ছদ্মনাম ফুলতার আর ডাকনাম রানী। প্রীতিলতা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সূর্যসেনের নেতৃত্বে সশস্ত্র আন্দোলনে যোগ দেন। এই মহান নারী ১৫ জনের একটি দলও পরিচালনা করেন। কিন্তু পুলিশ প্রীতিলতার দলটিকে আটক করে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ানের ক্লাব দখলের সময়। পুলিশের কাছে ধরা দেয়ার চেয়ে বিপ্লবের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করাটাই মহৎ ছিল তার কাছে। তাই ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরে ঘটনাস্থলে পটাশিয়াম সায়ানাইড বিষ খেয়ে আত্মাহুতি দেন প্রীতিলতা। এমন বিপ্লবী নারীর আত্মদান ইতিহাসে বিরল। নারীশিক্ষার পথিকৃৎ সুফিয়া কামাল নারীসমাজ তখনও উন্নত হয়নি। ঠিক সে সময় জ্ঞানের অগ্রদূত হিসেবে জন্ম নেন বেগম সুফিয়া কামাল। সে সময় স্কুলে যাওয়ার সুযোগ না থাকলেও ঘরে বসেই পড়াশোনা শুরু করেন সুফিয়া কামাল। সাহিত্যক্ষেত্রে পদচারণা ছাড়াও তিনি শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন ও নারীদেরও অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শিশুদের ‘কচিকাঁচার মেলা’। এছাড়াও তিনি১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ও গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। বাংলাদেশী নারীদের মধ্যে তাকেই প্রথম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। নারী সাংবাদিকতায় পথপ্রদর্শক নূরজাহান বেগম জীবনে পড়াশোনার প্রথম হাতেখড়ি হয় তার মায়ের কাছেই। বাবার হাত ধরে প্রবেশ করেন সাংবাদিকতায়। আর তার হাত ধরেই খবরের কাগজ সম্পাদনায় পা রাখেন বাংলাদেশের নারীরা। স্বামী বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই। তার বাবা মোহাম্মাদ নাসিরুদ্দিন ছিলেন ‘সওগাত’ পত্রিকার সম্পাদক। পরে তিনিও সেখানে যোগ দেন। তার আগ্রহ দেখে পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে তার বাবার উদ্যোগে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকা। তিনি লেখালেখি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠ চক্রের সম্মাননা লাভ করেন। তিনি পত্রিকা শিল্পে তার অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮ সম্মাননা লাভ করেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম একাধারে তিনি কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। মুক্তিযুদ্ধে তার ছেলে রুমী শহীদ হন। যুদ্ধের পর তিনি স্বীকৃতি পান সব মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে। এজন্য তাকে শহীদ জননী হিসেবে ভূষিত করা হয়। একাত্তরের ঘাতক দালাল রাজাকারদের নির্মূলে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দলিল ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থের লেখক । ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে গোলাম আযমকে জামায়াতের আমির ঘোষণা করা হলে তিনি পরের বছরই ১০১ সদস্যের একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করেন। এছাড়াও গণআদালতে গোলাম আযমের ফাঁসির রায় তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ও দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য এ রোগে ভুগে ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল, জাাহানারা ইমাম, নূরজাহান বেগম কিংবা প্রীতিলতা প্রমুখ মহীয়সী নারী নারী মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন একদিন বাস্তবায়িত হবে। সেই স্বপ্নের পথেই একদিন এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
×