ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রেজা ফারুক

আঙ্গিনায় বসন্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আঙ্গিনায় বসন্ত

প্রকৃতির ভাঁজে ভাঁজে যেন মন কেমন করা। উদাস আর চঞ্চল সমীরণের প্রগাঢ় উচ্ছ্বাসজাগা আবাহন। মাধবী আর বোগেনভিলিয়ার ঝাড়ে রঙিন প্রজাপতি আর ফরিঙের গুঞ্জরিত ওড়াওড়ি। প্রকৃতির যেদিকেই চোখ যায়- সেদিকেই যেন ঝকঝকে বর্ণোজ্জ্বলতার ছোঁয়া। থেকে থেকে কোকিলের হৃদয়কাড়া কুহুরণে নিসর্গের ক্যানভাসে উদ্ভাসিত হয় ঋতু বদলের অমোঘ প্রহরের মায়াবি ছবি। যে প্রহরের সান্নিধ্যে সমগ্র চরাচরে নতুন এক ছবির উন্মেষ ঘটে। বসন্তের ঐ উন্মেষের কথা মাথায় রেখেই কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন এক অনন্য বসন্তকালীন কবিতা। যার পঙ্ক্তিতে বসন্তের বন্দনা ঝরে পড়ে অমিয় ঐশ্বর্যে- ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক-আজ বসন্ত’। হ্যাঁ আজ বসন্ত। আজ পহেলা ফাল্গুন। বাড়ির আঙিনায় থোকা থোকা বসন্তের আরক্তিম ছায়ার পালক যেন বিছিয়ে দিয়েছে এক উন্মাতাল আবেগের রোদ আর জ্যোৎস্নারাজি। সকাল বেলার সবুজ দুর্বাঘাসে হাল্কা রৌদ্রাঙ্কিত শিশির কুচির মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলী আর অদূরের লাল আগুনঝরা কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায় সবুজ পাতার ঝালর সরিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের সমারোহ বসন্তের মুখর মুহূর্তগুলোকে যেন আরও প্রবলভাবে জানিয়ে দেয়। বসন্তের দুপুরগুলো উদাসীনতায় মোড়ানো হলেও বিকেলগুলো ভীষণ উন্মুখর হয় ফুরফুরে দখিনা হাওয়ায়। চাঁদের কিরণে আবৃত বসন্তকালীন সন্ধ্যা আর রাত্রির মহিমার যেন কোন কিছুর সঙ্গেই তুলনা চলে না। হলুদ-বসন্ত দিনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন বাঙালীর জীবনধারাকে ভাবাপ্লুত করে তোলে। তাদের দৈনন্দিন জীবনেও চলে আসে বিপুল পরিবর্তন। অন্তরজুড়ে বসন্তের রং যে আবেগ সঞ্চার করে তার প্রভাবটাও গভীর ব্যঞ্জনায় রোজকার জীবনযাপনে প্রতিফলিত হয়। আর তার প্রকাশটা প্রগাঢ় রূপে ধরা দেয় পোশাকের মধ্য দিয়ে। বসন্তে ফ্যাশনে ফোটে নতুন মাধুরী। একটা সময় ছিল যখনÑ বাসন্তী রঙের শাড়ি। রঙিন পাঞ্জাবিতেই বসন্তের ছবিটা ফুটিয়ে তোলার আবহটা চোখে পড়ত। কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে বসন্তের পোশাককে ঘিরে নতুন এক উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। যে উচ্ছ্বাসটা বসন্তের উৎসবী আমেজকে দিয়েছে এক গহন ছন্দময়তা। সেটা হলো বাঙালীর আবহমান। চিরন্তন সংস্কৃতিকে নান্দনিকতার শোভায় উৎকীর্ণ করে পোশাকের আদলটা আধুনিক ডিজাইনের শৈল্পিক পঙ্ক্তিতে বুনন করে তাকে ফ্যাশনেবল করে তোলার নিবিড় প্রয়াশ। নগর জীবনের নানা ব্যস্ততায় কখন যে ঋতুর বদল ঘটে তা যেন নগরবাসী জানতেই পারে না। তবে এর পরিবর্তন বেশ অনেক দিন ধরে লক্ষণীয়Ñ বাংলার ফ্যাশন ধারার শিল্পিত উদ্যোগ একেবারেই পাল্টে দিয়েছে এ অবস্থার। ধুলোময়, শব্দজটের নগর জীবনের প্রাণেও এনে দিয়েছে নতুন স্পন্দন। আর তাই অন্যান্য ঋতুভিত্তিক উৎসবের মতো ঋতুরাজ বসন্তকে উদযাপনের লক্ষ্যেও ফ্যাশন ট্রেডে যেমন শীতের মাঝামাঝি সময় থেকেই চলতে থাকে ব্যাপক প্রস্তুতি। একই প্রস্তুতি মনে মনে লালন করেন নগরবাসীও। প্রাঙ্গণে বসন্তÑ তাই চলছে এখন বসন্তকে বরণ করে নেবার তুমুল আয়োজন। আর এ আয়োজনের প্রধান অনুষঙ্গ হলো বাঙালিয়ানাকে অঙ্কিত করা পোশাক। সে পোশাক হোক শাড়ি, থ্রি-পিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শার্ট কিংবা টি-শার্ট। সেই সঙ্গে খোঁপায়, গলায়, হাতে শোভা পাবে মন উতলা করা ঘ্রাণের গাদা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জুঁই, বেলীসহ নানা ফুলের সন্ধি। সব মিলিয়ে পহেলা ফাল্গুন বসন্তকে বরণ করে নিতে যেন চলবে উৎসবের মায়াবি আয়োজন। আর এই বসন্তে চোখে পড়ে শপিংমলের আউটলেটগুলোতে ক্রেতাদের উৎসবমুখর যাওয়া-আসা। পছন্দের পোশাকটি পহেলা ফাল্গুনের আগেই সংগ্রহে রেখে দেয়া যেন বসন্তের প্রথম দিনের প্রথম প্রহরে নবসাজে সেজে উৎসবে অংশ নেয়া যায়। আর এদিকটা মাথায় রেখে ফ্যাশনট্রেডও থাকে প্রস্তুত। বসন্তকে ঘিরে অতুলনীয় এই আয়োজন থেকে নগর জীবনের মতো পিছিয়ে নেই মফস্বল শহরগুলোও। রাজধানী ঢাকার মতো মফস্বল শহরের রঙটাও সারাবসন্তে বাসন্তী-হলুদ-লালে যেন ছেয়ে যায়। বাঙালীর চিরায়ত স্বকীয়তা অক্ষুণœ রেখে সকলেই বসন্ত বরণে সমবেত হয় গভীর আগ্রহে। বসন্তের আরও একটি বিশেষত হলো বসন্তেই ঢাকায় আয়োজিত হয় প্রাণের একুশে বইমেলা। বসন্ত এবং বইমেলা যেন নগর জীবনের আবেগকে পৌঁছে দেয় এক অসীম কাব্যিকতায়। বসন্তের স্পর্শে যেন এই কাব্যময়তা হয়ে ওঠে আরও বাঙময় হৃদয়গ্রাহী এবং আবির রাঙা। মডেল : শোভন, স্বপ্নীল ও নাবিলা ছবি : মানস সেন ও পিংকেল পোশাক : মেঘ ও রঙ মেকআপ : বিনদিয়া স্টাইলিং : টনি
×