ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফারুক হত্যা মামলার চার্জশীট

ঘাটাইলে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে এমপি রানার বিরুদ্ধে সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঘাটাইলে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে এমপি রানার বিরুদ্ধে সমাবেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৪ ফেব্রুয়ারি ॥ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের পর টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যাকা-ের তিন বছর ১৫ দিন পর গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খান পরিবারের চার ভাইসহ বাকি ১০ আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার ও দল থেকে বহিষ্কার দাবিতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে এসে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এই খুনীচক্রের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান। তারা যেন আওয়ামী লীগে আর জায়গা না পায় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান। জেলা শহর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলাতে বিক্ষোভ মিছিল করে দলের কর্মী-সমর্থকরা। এদিকে আদালতে চার্জশীট দাখিলের খবর জানাজানি হওয়ার পর বুধবার রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানার নির্বাচনী এলাকায় এমপি রানার সমর্থক এবং লেবু সমর্থক নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। বুধবার রাতে এমপি রানা সমর্থক জামুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হেস্টিংয়ের বাড়ি ভাংচুর করা হয়। একই সময়ে লেবু গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা তমালের বাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে র‌্যাব-১২-এর একটি দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে লেবু গ্রুপের চার ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন- জিবিজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক সহ ক্রীড়া সম্পাদক আবু সাঈদ রুবেল (৩০), তার ছোট ভাই সোহেল (১৮), মিতুল (২০) ও মঞ্জু (২১)। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে এমপি রানার সমর্থকরা ঘাটাইল বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। লেবু সমর্থকরাও একই সময়ে ঘাটাইল বাসস্ট্যান্ড চত্বরে সমাবেশের ডাক দেয়। একই স্থানে সমাবেশ ডাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছমা আরা বেগম। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু এমপি রানাকে দল থেকে বহিষ্কার ও গ্রেফতার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এমপি রানার নির্বাচনী এলাকা ঘাটাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম লেবুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বক্তারা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার ভেতরে গ্রেফতার ও বহিষ্কার না করা হলে ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিনভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। অপর আসামিরা হলো- আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, ফরিদ মিয়া, সমির, কবির হোসেন, সাবেক কমিশানার মাসুদ মিয়া, চানে, নুরু, সানোয়ার হোসেন ও দাঁতভাঙ্গা বাবু। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০২/৩৪/১২০ বি ধারায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, ফরিদ মিয়া, সমির টাঙ্গাইল জেলহাজতে রয়েছে। জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, জাহিদুর রহমান খান কাকন ও সানিয়াত খান বাপ্পা দেশ ত্যাগ করলেও এমপি আমানুর রহমান খান রানা ও সহিদুর রহমান খান মুক্তি দেশেই অবস্থান করছেন। ঢাকা ও টাঙ্গাইলে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও পুলিশ তাঁদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের স্ত্রী নাহার আহমদ বলেন, খুনীরা দেশে থাকলেও পুলিশ কি কারণে তাঁদের গ্রেফতার করতে পারছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি রানা ও তাঁর ভাই কাকন, মুক্তি ও বাপ্পাসহ সকল আসামিকে গ্রেফতার, দলের সব পর্যায় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে প্রতিষ্ঠিত ও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিকপথে পরিচালিত আওয়ামী লীগে কোন খুনীর স্থান নেই। তাদের অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে যাদের নাম এসেছে তাদের নাম অভিযোগপত্রে দেয়া হয়েছে। যথানিয়মে মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে।
×