ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের ছয় মাসের হিসাব

বৈদেশিক সহায়তায় উর্ধগতি

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বৈদেশিক সহায়তায় উর্ধগতি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বেড়েছে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড়। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) উভয় ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় উর্ধগতি বিরাজ করছে। এ সময়ের মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি এসেছে ১৪৬ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল ১০০ কোটি ৩৩ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে অর্থছাড় হয়েছে ১৫৯ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার আর গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ১৫০ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে কিছুটা কমেছে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ। ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে মোট প্রতিশ্রুত ১৪৬ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩০ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদানের পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছরের মোট প্রতিশ্রুতির মধ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল ৮১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার এবং অনুদানের পরিমাণ ছিল ১৯ কোটি ১৩ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ছাড়কৃত ১৫৯ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলারের মধ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার আর অনুদানের পরিমাণ ছিল ২৯ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট ছাড়কৃত অর্থের মধ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল ১২৭ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার আর অনুদান ছিল ২২ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ পরিশোধ করেছে মোট ৫২ কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসলের পরিমাণ ছিল ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং সুদ ছিল ৯ কোটি ৩৮ লাখ মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৬৩ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসলের পরিমাণ ছিল ৫৩ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি ছাড় করেছে ঋণ ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি মোট ছাড় করেছে ৪৪ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। রাশিয়া ছাড় করেছে ১২ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ছাড় করেছে ২০ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। চীন ২ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার এবং কোরিয়া ছাড় করেছে ২ কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গত তিন বছর ধরে প্রতিবছর বিশ্বব্যাংকের ডিসবাসমেন্ট তার আগের বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। এক্ষেত্রে যেটি হয়েছে সেটি হচ্ছে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ওপর মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। ডোনার এবং সরকার উভয় পর্যায়েই এটি করা হয়েছে। যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রকল্পগুলোতে একাধিক দাতা যুক্ত ছিল। এক্ষেত্রে একটি দাতা বেশি অর্থছাড় করলে তো হবে না। সবার অর্থছাড় থাকতে হবে। এ জন্য যেসব প্রকল্পের অর্থছাড়ে সমস্যা ছিল সেগুলো বিষয়ে প্রতিমাসে ডোনার ও সরকারী পর্যায়ে টেকনিক্যাল লোকজন প্রথমে বৈঠক করতেন। সেখানে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের করণীয় নির্ধারণ করা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাকে চিহ্নিত করা হতো। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের একটি এ্যাকশন প্ল্যান করা হতো। পরের মাসের মিটিংয়ে আবার এগুলোর ফলোআপ করা হতো। যদি দেখা যেত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন প্রতি তিন মাসে উচ্চপর্যায়ের (সচিব) একটি বৈঠক করা হতো। সেখানে প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করা হতো। এভাবে সমস্যা সমাধান করা হতো। তিনি আরও বলেন, আগে বৈঠক ডাকলে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কেউ আসতেন না। ওই সময় সমস্যা চিহ্নিত হলোও ওই পর্যন্তই থাকত। সমাধান হতো না। কিন্তু এখন সমস্যা সমাধানে সবার আন্তরিকতা ও গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলেই বৈদেশিক অর্থছাড় বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। আর অর্থছাড়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ হাজার ৩৬২ কোটি মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ইআরডি। এ সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাংক সর্বোচ্চ অর্থছাড় করেছে। এটি গত কয়েক বছর ধরেই হচ্ছে। আমি আশা করছি চলতি অর্থবছরেও প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে।
×