ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর পদক্ষেপ কাম্য

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কঠোর পদক্ষেপ কাম্য

দেশে সব রকম নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ হলেও রাজধানী ঢাকাসহ সর্বত্রই সেসব পাওয়া যায়। আজকাল অভিভাবকদেরও প্রথম শ্রেণী থেকেই শিশুর সহায়তার জন্য নোট বইয়ের দ্বারস্থ হতে দেখা যায়। প্রকাশক এবং বিক্রেতারাও এককাঠি সরেস। নোট ও গাইড বই মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিপণন ও বিক্রয়ের ওপর সরকারীভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকার কারণে নিত্যনতুন ধারণা নিয়ে হাজির হন বাজারে। আজকাল কেউ কেউ নোট ও গাইড বইকে গালভরা নাম ‘ধারণাপত্র’ হিসেবে অভিহিত করেন। বলেন, ‘আমরা নোট ও গাইড বই বিক্রি করছি না। আমরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধারণাপত্র প্রকাশ ও বিক্রি করছি।’ ব্যবসায়িক অসততা, ছলনা ও প্রতারণা আর কাকে বলে! সরকার ১৯৮০ সালে নোট ও গাইড প্রকাশনা নিষিদ্ধ করে। ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পুনরায় জেলা প্রশাসকদের নোট, গাইড বই বাজারজাত বন্ধের নির্দেশ দেয়। অতঃপর বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির করা রিটের শুনানিতে ২০০৯ সালের নবেম্বরে হাইকোর্ট প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নোট গাইড মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে। ২০১৩ সালের খসড়া শিক্ষা আইনেও যাবতীয় নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সবই অরণ্যে রোদন। অথবা, যথা পূর্বং তথা পরং। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা চলছেই। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নোট বইয়ের ব্যবসা ও প্রচলন বরাবরই ছিল। তবে সেসব ছিল প্রধানত উঁচু শ্রেণীর জন্য প্রযোজ্যÑ উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা নোট বইয়ের কথা কল্পনাও করতে পারত না। প্রাথমিক স্তরে তো নয়ই। তবে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবারে প্রাইভেট টিউটর রাখার প্রচলন ছিল শিক্ষার্থীকে সহায়তা করার জন্য। কালক্রমে গৃহশিক্ষকদের স্থান দখল করে নিয়েছে বহুকথিত কোচিং সেন্টার এবং নিয়মিত পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে চলছে নোট ও গাইড বই। সৃজনশীল পাঠক্রম চালুর নামে এর বাণিজ্যিক প্রচলন ও প্রসার হয়েছে শনৈঃশনৈ। কোন সরকারী অথবা আদালতের নিষেধাজ্ঞা এর অব্যাহত আগ্রাসন রুখতে পারে, সাধ্য কী? বর্তমানে প্রায় শিশু স্তর থেকেই একজন শিক্ষার্থীর পিঠে চাপিয়ে দেয়া হয় একব্যাগ বইখাতার বোঝা। ভেবেও দেখা হয় না যে, শিশুটি সেই ওজন আদৌ বহন করতে পারবে কিনা। সেসব পাঠ্য বইয়ের একটি অংশ আবার সৃজনশীল। শিশু পঠিত অংশ থেকে কী শিখল, তারই পরীক্ষা। বাস্তবতা হলো সৃজনশীল তো অনেক শিক্ষকই বোঝেন না। শিশু শিখবে কী? সম্প্রতি পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ শিক্ষক সৃজনশীল বোঝেন না। অতঃপর শিশুর নাকি শিক্ষকদের বোঝার জন্য অচিরেই বাজারে এলো গাদা গাদা গাইড বই, নোট বই, ধারণাপত্র ইত্যাদি। দামও অগ্নিমূল্য। সৃজনশীল বলে কথা! এ যেন সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষাবোর্ড, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষকম-লী, অভিভাবকবৃন্দ সর্বোপরি কোটি কোটি শিক্ষার্থীর কানামাছি ভোঁ-ভোঁ খেলা। মাঝখানে উচ্চ আদালত যেন রেফারির ভূমিকায়। একদিকে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নোট ও গাইড বইয়ের অবৈধ রমরমা ব্যবসা; অন্যদিকে আদালতের খ—েগর দোহাই দিয়ে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের বাজেয়াফতকরণের লুকোচুরি খেলা; মাঝখানে অভিভাবকদের ফতুর করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রায় মরণদশাÑ শিক্ষাব্যবস্থাকে একেবারে টেনে নামিয়েছে খাদের কিনারে। এই শোচনীয় অবস্থা থেকে শিক্ষাকে টেনে তুলতে হলে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সর্বশক্তি নিয়ে নামতে হবে যাবতীয় নোট ও গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষেই শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদানে যতœবান হতে হবে।
×