ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প ড় শী ন গ র

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প ড় শী ন গ র

সাবরিনা পড়শী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নায়িকা হলেন কিছুদিন আগে। আমারও পরাণও যাহা চায়, গাইলেনও..। পরের দৃশ্যেই হিন্দি গানের মডেল! শিল্পী! চমকে যাচ্ছে সবাই। শিরোনামে আসছেন বার বার। আনন্দকণ্ঠের মুখোমুখি তিনি। লিখেছেন- মাহবুবুর রহমান সজীব কিছু মানুষ এমনও হয়। ভেতরে খুব রাগ। বাইরে সেটা প্রকাশ পায় না। কখনও যদি তুমুল রাগ জমে কারও ওপর, রুমে ঢুকে টুক করে দরজা বন্ধ। অতঃপর জলে ভেজে গাল। মিনিট পাঁচেক যেতে না যেতেই সব উধাও। কান্নাকাটি-রাগ, ডানা ঝাপটে লোপাট। পড়শীও এমনই। কেন এমন তিনি! খারাপ লাগে নিজেরই। এজন্য নাকি সবাই মজাও নেয় কথার ছলে। ‘তুমি রাগ করো কেন!’ ‘তোমার তো রাগ থাকে না!’ এমন আর কী... ঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে এগারোটার পথে। খাচ্ছিলেন পড়শী। খাওয়ার সময় নাকি কথা বলতে নেই, তাই অপেক্ষা। শেষ করেই ফোনটা তুললেন। জানালেন, ভাল আছেন, বাসায়ই আছেন। নিজের বাসায়? প্রশ্নটা শুনেই যেন চমকে উঠলেন পড়শী। হাসতে হাসতে বললেন, ‘অবশ্যই..!’। কনসার্ট ঋতু চলছে। এখানে সেখানে প্রচুর কনসার্ট, গানপ্রিয়দের আনাগোনা। এই তো সেদিনও পড়শী ছিলেন ফরিদপুরে। তার আগে চাঁদপুর, নরসিংদী, চট্টগ্রাম। দৌড় আর দৌড়। এত ব্যস্ততার মাঝেও বেরিয়ে এলো নতুন চমক, ‘মার যায়ে..’। হিন্দি ভাষার এই গানটি প্রথম গেয়েছেন আতিফ আসলাম, ‘লাভসুধা’ চলচ্চিত্রের জন্য। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করছে ‘টিপস’, ভারতের অন্যতম প্রযোজনা সংস্থা। সেই ‘টিপস’ই পড়শীকে দিয়েও গাইয়েছে একই গান! রহস্য হচ্ছে, টিপসের সঙ্গে দুই বছরমেয়াদী চুক্তি হয়েছে পড়শীর। চুক্তি অনুযায়ী তার নতুন গান প্রকাশ পাবে ওই ব্যানার থেকেই। আর বিশেষ কোন শর্ত আছে কিনা, তা জানেন না তিনি। ‘সবকিছু ভাইয়া করেছে। আমি শুধু সাইন করে দিয়েছি।’ একগাল হাসি ছুড়ে এটুকুই শুধু জানালেন। ‘মার যায়ে..’ গানটির শেষদিকে পড়শীর একটা আকুতি আছে। তীব্র, ভীষণ। ‘মরে যাবো রে, মরে যাবো। তুমিহীনা মরে যাবো।’ আহ্! এই তুমিটা কে? প্রশ্নটা শুনেই হেসে উঠলেন তিনি। এ হাসি মারাত্মক। প্রেমিকহৃদয় চূর্ণ করে দেয়। অতঃপর বললেন, ‘এটা যিনি লিখেছেন, তিনিই ভাল বলতে পারবেন। আমি তো আমার গানের জন্য বলেছি। আমার শ্রোতাদের জন্য বলেছি।’ প্রথম পাঁচদিনে শুধু ইউটিউবেই দেড় লক্ষাধিক দেখা হয়ে গেছে গানটি। অনেকে ভাল বলছেন, কেউ কেউ খারাপ। কেউ কেউ তো নিতেই পারছেন না দেশীয় শিল্পীদের হিন্দি গান গাওয়ার ব্যাপারটা! কেন এমন হয়? কেনই বা এই সমালোচনা? ‘আমি খুবই দ্বিধান্বিত। আমরা অন্যদের হিন্দি গান শুনতে পারব, কিন্তু দেশের কেউ গাইলেই সেটা শুনতে পারব না! এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুব ভালই লাগে মাঝে মাঝে।’ ক’দিন আগেই সবাইকে জানিয়েছেন পড়শী, ‘আমারও পরাণও যাহা চায়..’। রবীন্দ্রনাথের এই গানে সে কী তোলপাড় অনলাইনে! কত যে সাধু সাধু রব! রবীন্দ্রনাথের কথা বাদ। সত্যি সত্যি কী চায় পড়শীর পরাণে? ‘আমার পরাণ তো অনেক কিছুই চায়! সারাক্ষণ নাচতে চায়। সেটা তো আর সম্ভব না। নাচের সঙ্গে সঙ্গে গান, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম; সবই তো দরকার।’ হেসেই চলছেন গানের পড়শী। বিরতিতে বলছেন। ‘বুঝতে পেরেছি কোন এঙ্গেল থেকে প্রশ্নটা করা হয়েছে। আমি শুধু গান নিয়েই থাকতে চাই। যখন আমি গান গাই, তখন কল্পনায় কিছু একটাকে ভেবে নেই। হ্যাঁ.. সেটা কল্পনার বন্ধু হতে পারে। বা, যে কোন কিছু।’ কণ্ঠের চর্চা করছেন বহু বছর থেকেই। গাচ্ছেনও ঠিকঠাক। তবুও নিজের ওপর পুরোপুরি সন্তুষ্ট না পড়শী। দশে পাঁচ দিলেন নিজেকে, কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। কারণ, ‘আমার অনেক শেখার বাকি আছে। যখনই আমি নিজের কোন গান শুনি; বারবারই মনে হয়, এই এ গানটা হয়ত আরেকটু ভাল হতে পারত।’ ‘দ্যাট্স ইট’ বলে বার বার থামছিলেন পড়শী। নিজস্ব ঢংয়ে, ছন্দে। ‘এই রে, এই তো, মেরেছে আমাকে!’ সমেত বলা শুরু করলেন নিজের সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয়। ‘একটা ব্যাপারে আমি নিজেই খুব গর্ববোধ করি। সেটা হচ্ছে, আমি আম্মুর কাছে সবসময় সত্যি কথা বলি। কখনও কিছু লুকাই না।’ ভ্যালেন্টাইনের জন্য বিশেষ কোন পরিকল্পনা নেই পড়শীর। শুধু গাইবেন। কোথায়, সেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আলাপ চলছে। দিনটা বিলিয়ে দেবেন না বিশেষ কাউকে। হাতে হাত ধরে, হাজার বছর শুয়ে থাকা রাস্তায় কিংবা পার্কের ভিড়ে। জানালেন, ‘ওইটা হবে না। ওই সৌভাগ্য আমার নেই।’ আবারও হাসি, কলকলিয়ে, ঢেউয়ের মতো। এর জন্য অবশ্য খারাপ লাগে না পড়শীর। ‘আমি আসলে এভাবে কখনও ভাবিওনি। আমি প্রায় সবসময় গান নিয়েই থাকি। বাকিটা সময় আম্মু-ভাইয়ার সঙ্গে গল্প করি।’ ওনাদের সঙ্গে সময় কাটানো খুব পছন্দ করেন পড়শী। মা তো! ভাইয়া তো! কেবল তাদের কাছে কখনই তারকা হওয়া হবে না পড়শীর। কিংবা, কেবল তাদের কাছেই পড়শী শিশুকাল থেকেই তারকা!
×