ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৮ লাখ ফেয়ার প্রাইস কার্ড বিতরণ করা হবে

স্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

স্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ

তপন বিশ্বাস ॥ বাংলাদেশে স্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সকল মহানগরীর বাইরে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের আদলে রেশনিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সারাদেশে প্রায় ১৮ লাখ কার্ড বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি ওএমএসের মাধ্যমে সরকার ১৫ টাকা কেজি দরে চাল এবং ১৪ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রি করবে। বাড়ছে ওএমএসের পরিধি এবং চালের গুণগত মান। এবার ওএমএসের মাধ্যমে রাজধানীর পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে মধ্যম মানের চাল সরবরাহ করা হবে। এসব কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রায় এক কোটি নিম্ন আয়ের মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় আনার মহাপরিকল্পনা করছে সরকার। মঙ্গলবার এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করতে চাই। এতে গ্রামীণ পর্যায়ের মানুষকে রেশনিংয়ের আওতায় আনতে চাই। এ লক্ষ্যে স্থায়ী কার্ড প্রদান করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিকল্পনা তৈরির জন্য খাদ্য অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে পরিকল্পনা তৈরি করে তারা মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ওএমএসের মাধ্যমে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল এবং ১৪ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রি করা হবে। এই চাল ও আটার মান আগের চেয়ে অনেক ভাল হবে। বর্তমানে কম দামের মোটা চাল ওএমএসের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঝারি মানের চাল বিক্রি করা হবে। এছাড়া এখন থেকে বিশ্বের এক নম্বর গম আমদানি করা হবে। নিম্নমানের গম আমদানির আর কোন সুযোগ নেই। তাই খুব উৎকৃষ্টমানের আটা কম দামে বিক্রি করা হবে। এতে বাজারে আটার দাম অনেক কমে আসবে। এছাড়া ঈদে ভিজিএস কার্ডের মাধমে গরিব শ্রেণীর জনগণকে ১৫-২০ কেজি করে চাল দেয়ার কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, এখন থেকে কোন গুদামে নিম্নমানের চাল ঢুকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখন থেকে ঝটিকা অভিযান চালানো হবে। কোন গুদামে নিম্নমানের চাল পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, দেশে স্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে চাই। সরকারের গুদামে বর্তমানে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ১১ লাখ ৩৩ হাজার টন চাল এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার টন গম। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকার এসব চাল সংগ্রহ করেছে ৩২ টাকা কেজি দরে আর গম সংগ্রহ করেছে ২৮ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় ওএমএস কর্মসূচীতে প্রতি কেজি চাল বিক্রি করা হয় ২০ টাকায়। আর আটা বিক্রি করা হয় ১৯ টাকা কেজি দরে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন খাদ্য অধিদফতরের গুদামে এখন রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে। খাদ্যের এই ভা-ার খালি করতে না পারলে দুই দিক থেকে বিপদ আসবে। এক হচ্ছে গুদাম খালি না করলে নতুন চাল কেনা যাবে না। আর কৃষককে ন্যায্য দাম দিতে হলে তাদের কাছ থেকে ধান চাল সংগ্রহ করতেই হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে গুদামে যেসব চাল রয়েছে তার মধ্যে অর্ধেকই ঝুঁকির মধ্যে। সব কিছুরই একটা মেয়াদ রয়েছে। এসব চালেরও মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু চালের মেয়াদ এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় গুদাম খালি করা ছাড়া সরকারের সামনে কোন উপায় নেই। উপজেলা পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তারা (পিআইও) চাল বা গমের মাধ্যমে টিআর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে চান না। এমপিরাও প্রকল্পে চাল বা গমের বরাদ্দ নিতে দীর্ঘদিন ধরে অনিহা প্রকাশ করছেন। কারণ চাল বা গমের বিনিময়ে শ্রমিক পাওয়া যায় না। শ্রমিকরা নগদ টাকা চান। এ কারণে প্রায় সব টিআর প্রকল্পের চালই বিক্রি করে দেয়া হয়। জেলা পর্যায়ের খাদ্য অধিদফতরের কর্মচারী এবং ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মীর সিন্ডিকেট কাগজে-পত্রে এসব চাল কিনে রাখে। চাল বিক্রির নগদ টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু চাল বরাদ্দ করা হয় ৩২ টাকা কেজি দরে। অথচ এসব চাল বিক্রি করতে গিয়ে ১৬ টাকার বেশি পাওয়া যায় না। অর্থাৎ একটি প্রকল্পে যে পরিমাণ টাকার চাল বরাদ্দ করা হয় তা বিক্রি করে অর্ধেকের বেশি টাকা পাওয়া যায় না। সেই অর্ধেক টাকায়ই পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়। এতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এটা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে টিআর-এর টাকা হরিলুটের খবর ছাপা হয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন যেভাবেই হোক সরকারকে চাল কিনতেই হবে। তা না হলে কৃষক জিম্মি হয়ে যাবে। তাদের ন্যায্য দাম দিতে হলে সরকারীভাবে চাল কেনার কোন বিকল্প নেই। বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি ছিলেন না। এ সময় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শাহ কামাল বলেছেন, চাল দিয়ে প্রকল্প চলে না। এমপিরা কোন প্রকল্পে চাল নিতে চান না। এই অবস্থায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে বলেন। এ সময় খাদ্য অধিদফতরের পক্ষে সারাদেশে রেশন চালু করার প্রস্তাব দেয়া হয়। রেশন দেয়া হবে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে। সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে ১৮ লাখ ফেয়ার প্রাইজ কার্ড দেয়া হবে। বুধবার খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা সারা দিনই ব্যস্ত ছিলেন মহাপরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তার পরিকল্পনা করার কাজে। আগামী সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের পরই মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করতে চান বলে খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। এ কারণে আগামী রবিবারের মধ্যেই তারা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, অর্থসচিব, খাদ্যসচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব ছাড়াও খাদ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।
×