ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় একজন গ্রেফতার

দক্ষিণ আফ্রিকায় অপহৃত এক বাংলাদেশী যুবক উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দক্ষিণ আফ্রিকায় অপহৃত এক বাংলাদেশী যুবক উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে অপহরণের এক মাস পর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে উদ্ধার হলো বাংলাদেশী যুবক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা পুলিশের সহায়তায় দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী আব্দুল্লাহ সেদেশ থেকেই উদ্ধার হয়। অপহরণের সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক অপহরণকারী চক্রের এক সদস্যকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মুক্তিপণের টাকাসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পুত্রের মুক্তির খবরে খুশিতে আত্মহারা শহীদুল্লাহর পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনরা। চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার সালোসবার্গ থেকে অপহরণ করা হয়েছিলেন শহীদুল্লাহকে (৩০)। শহীদুল্লাহর পরিবারের তরফ থেকে অপহরণের ঘটনায় সোনাইমুড়ি থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির তদন্তভার পড়ে সিআইডির কাছে। শহীদুল্লাহর বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানা এলাকায়। তিনি সেখানে ৬ বছর ধরে বসবাস করছেন। তার একটি নিজস্ব কারওয়াস সেন্টার রয়েছে। অপহরণের একদিন পর শহীদুল্লাহর পরিবারের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফোন আসে। ফোনে আব্দুল্লাহকে জীবিত ফেরত পেতে মুক্তিপণ হিসেবে ২৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এক পর্যায়ে দর কষাকষি করতে করতে তা ৫ লাখ টাকায় নেমে আসে। প্রথম কিস্তিতে অপহরণকারীরা মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা ঢাকায় আকতার হোসেনের কাছে দিতে বলে। মঙ্গলবার সকাল দশটায় মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা নিয়ে কথামত অপহৃত শহীদুল্লাহর পরিবারের এক সদস্য যাত্রাবাড়ী মোড়ে পেট্রোল পাম্পে অবস্থান করতে থাকেন। এ সময় ৩ লাখ টাকা আকতার হোসেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ওঁৎ পেতে থাকা সিআইডি পুলিশ আকতার হোসেনকে (২৯) আটক করে। তার পিতার নাম আব্দুস সামাদ। বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানাধীন উত্তর তাজপুর গ্রামে। আকতার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, শহীদুল্লাহ অপহরণের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও সে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশী একটি চক্র জড়িত। বাংলাদেশীদের মধ্যে ওই চক্রে রাজীব নামে একজন রয়েছে। প্রায় একযুগ ধরে দেশটিতে বসবাস করছে রাজীব। গ্রেফতারকৃত আকতার হোসেন দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী রাজীবের বোন জামাই। রাজীব বহুদিন ধরেই অপহরণ চক্রের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশীদের সেখানে অপহরণ করার পর বাংলাদেশে আকতারের কাছে মুক্তিপণের টাকা লেনদেন হয়। আকতার হোসেনকে আটকের পর তাকে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফোন করানো হয়। ফোনে আকতার হোসেন মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার খবর জানায়। আর শহীদুল্লাহকে দ্রুত মুক্তি দিতে বলে। দুপুরের পরপরই শহীদুল্লাহ মুক্তি পায় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম (সংঘবদ্ধ অপরাধ) বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃত আকতার হোসেন অপহরণকারী চক্রের সদস্য। মঙ্গলবার তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে। তাকে গ্রেফতারের পর অপহরণের নানা বিষয় বেরিয়ে এসেছে। প্রকাশ পেয়েছে অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের নাম। চক্রে দেশী-বিদেশী সদস্যও রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সেদেশের পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, শহীদুল্লাহর অপহরণকারীদের গ্রেফতারে দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়াটার পুলিশিং ও ডাইভিং সার্ভিসের সেকশন কমান্ডার ড. কর্নেল আর্নেস্ট এইচ ট্রিডমের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি খুবই আন্তরিকার সঙ্গে শহীদুল্লাহর অপহরণকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছেন।
×