ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘সেরা পারফর্মেন্স করতে চাই’

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

‘সেরা পারফর্মেন্স করতে চাই’

রুমেল খান ॥ বয়স ২৩। রাঙ্গামাটি জেলার কন্যা। পাহাড়ী মেয়েদের সাহস বেশি হয়। হয় তো এ কারণেই প্রভা চাকমা বেছে নিয়েছেন তায়কোয়ান্দো নামের খেলাটিকে। আসন্ন এসএ গেমসে তিনি অংশ নেবেন বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো দলের হয়ে। আনসার একাডেমিতে ২০১৪ সাল থেকে চাকরি করছেন প্রভা। খেলাধুলা ও চাকরির পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনাটাও। উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে মানবিক বিভাগে পড়ছেন রাঙ্গামাটি মহিলা সরকারী কলেজে। পাঁচ ভাই-বোন তারা। বড় বোন মারা যান ২০১৪ সালে। ‘এখন আমরা দুই ভাই, দুই বোন। বাবা আছেন। তিনি কিছু করেন না, বয়স হয়েছে তো। মা নেই। তিনিও না ফেরার দেশে চলে গেছেন ২০১০ সালে। বড় ভাই একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। তার আর আমার আয়েই সংসারটা চলে।’ নিজ পরিবার নিয়ে প্রভার মন্তব্য। প্রভার তায়কোয়ান্দো খেলায় আসার গল্পটা কেমন? ‘২০১৪ সাল থেকে সিরিয়াসলি তায়কোয়ান্দো খেলা শুরু করি। আনসারে যোগ দেয়ার পর ওখানে তায়কোয়ান্দোর ওপর ১৪ দিনের একটি ট্রেনিং ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ক্যাম্পের উদ্দেশ্য ছিল এসএ গেমসের জন্য খেলোয়াড় বাছাই করা। সেখান থেকে আমিসহ মোট ৬ জনকে বাছাই করা হয় প্রাথমিকভাবে। তারপর এই ৬ জনকে নিয়ে আরেকটি ট্রেনিং ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। ধাপে ধাপে ৫ জনকেই বাদ দেয়া হয়। টিকে যায় মাত্র একজন। আর সেই একজনই হচ্ছি আমি।’ চাকমা কন্যার স্মৃতিচারণ। ‘স্কুলে যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, তখন হ্যান্ডবল খেলার পাশাপাশি তায়কোয়ান্দোও খেলতাম। আন্তঃস্কুল পর্যায়েও খেলেছি।’ আরও যোগ করেন তিনি। তায়কোয়ান্দো খেলাটি অনেক কঠিন খেলা। অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। বিপজ্জনকও বটে। তারপরও খেলাটিকে বেছে নেয়ার কারণ কী? একবার হেসে প্রভা জানান, ‘একটিই কারণÑ মারামারি টাইপের খেলা বলে এই খেলাটির প্রতি দারুণ ঝোঁক আছে আমার। যে স্টাইলে খেলোয়াড়কে মারা হয় এবং সে মার ফেরাতে যে কৌশল অবলম্বন করা হয়, তা খুবই ভাল লাগত আমার। দারুণ মজা লাগে। তাই এই খেলাটিকেই বেছে নিয়েছি।’ এসএ গেমসের অনুশীলন প্রসঙ্গে প্রভার বক্তব্য, ‘কোচ লিজু সান (দক্ষিণ কোরিয়া) আমাদের খুব ভাল অনুশীলন করাচ্ছেন। প্রায় পাঁচ মাসের মতো আমাদের ট্রেনিং চলছে। তার কোচিংয়ে আমাদের খেলার মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। আগে আমাদের দমের ঘাটতি ছিল। হাত-পা ভালমতো নড়াচড়া করতে পারতাম না, স্ট্যামিনা কম ছিল। এখন এগুলোর কোন ঘাটতি নেই। সেই সঙ্গে আমাদের আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়েছে।’ এবারই প্রথম এসএ গেমস খেলতে যাচ্ছেন প্রভা। তাছাড়া এবারই প্রথম বিদেশে খেলতে টুর্নামেটে যাচ্ছেন তিনি। তবে মজার বিষয় হলোÑ এর আগে ক্লাব পর্যায় তো বটেই, জাতীয় পর্যায়ের কোন টুর্নামেন্টেও খেলেননি প্রভা! তার মানে এসএ গেমস দিয়েই তায়কোয়ান্দোতে অভিষেক হচ্ছে তার! এ নিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত প্রভা, ‘কোন সন্দেহ নেই, এক্ষেত্রে আমি ব্যতিক্রম।’ এসএ গেমসে ৪৯ কেজি ওজন শ্রেণীতে খেলবেন প্রভা। দেশবাসীর উদ্দেশে তার চাওয়া, ‘দেশবাসীকে বলব, তারা যেন আমাদের জন্য প্রার্থনা করেন, যাতে আমরা ভাল খেলতে পারি এবং দেশের জন্য সুনাম ও সাফল্য বয়ে আনতে পারি। সেই সঙ্গে যেন ইনজুরিতেও যেন না পড়ি, এটাও কামনা থাকবে।’ সবশেষে প্রভা বলেন, ‘আমার লক্ষ্য থাকবে নিজের সেরা পারফর্মেন্স করা। যদি স্বর্ণপদক জিততে পারি, তাহলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারব। সেই সঙ্গে আমার কোচের পরিশ্রমও সার্থক হবে। এটাই এখন আমার ধ্যান জ্ঞান।’ এখন দেখার বিষয়- পাহাড়ী, সাহসী চাকমা কন্যা প্রভার এই স্বপ্ন কতটা রূপ নেয় বাস্তবে।
×