ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নামিবিয়াকে খেলা শেখাল মিরাজরা

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নামিবিয়াকে খেলা শেখাল মিরাজরা

মিথুন আশরাফ ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা যুবদলকে হারানোর পর যেন উড়ছিল নামিবিয়া যুবদল। নামিবিয়ার কোচ নর্বার্ট মানইয়ান্ডেতো হুঙ্কারই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছি, এখন আমরা তাকিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচের দিকে। অবশ্যই আমরা চাইব গ্রুপের সেরা দল হতে। কোন দিক থেকেই বাংলাদেশ ফেবারিট নয়।’ এই হুঙ্কারতো কাজে লাগলই না, উল্টো ৬৫ রানেই গুটিয়ে গিয়ে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারল নামিবিয়া। দলটিকে খেলা শিখিয়েই ‘এ’ গ্রুপ থেকে সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। এখন সুপার লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নেপাল যুব দলের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ যুবদল। কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে হয় ম্যাচটি। টস জিতে বাংলাদেশ। আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। নামিবিয়া যে এতটা লজ্জা পাবে, তা কোনভাবেই বোঝা যায়নি। যে দলটি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে, তারা স্বাগতিক বাংলাদেশের সামনে এসে নেতিয়ে যাবে; তা বোঝাই যায়নি। কিন্তু ২ উইকেট করে নেয়া আরিফুল ইসলাম, সালেহ আহমেদ শাওন গাজী ও মিরাজের বোলিংয়ের সামনে এসে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে নামিবিয়ার ব্যাটসম্যানরা। ৩২.৫ ওভারে ৬৫ রান করতেই অলআউট হয়ে যায়। নিকো ডেভিন (১৯) ও লোহান লওরেন্স (১৭) শুধু দুই অংকের ঘরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। এত কম রান, স্বাভাবিকভাবেই বড় জয় মেলার কথা। সবার আশা ছিল ১০ উইকেটের জয়ই মিলবে। কিন্তু ১৩ রানের মধ্যেই ২ উইকেটের পতন ঘটে। শেষপর্যন্ত জয়রাজ শেখ (৩৪*) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (১৪*) মিলে দলকে জেতান। ১৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২০৪ বল বাকি থাকতে ৬৬ রান করে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। নামিবিয়া অধিনায়ক জেন গ্রিনও উচ্চৈঃস্বরেই কথা বলেছিলেন, ‘আমরা দেখিয়েছি, ক্রিকেটে যে কোন কিছুই হতে পারে। নিজেদের সামর্থ্যে আমাদের বিশ্বাস আছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে নামব। আমরা চাইব জিততে।’ কিন্তু তার উচ্চৈঃস্বরও কাজে লাগেনি। ২০০০ সালের যুব বিশ্বকাপে যেমন বাংলাদেশ যুবদলের বিপক্ষে লড়াই করতে নেমে ৫৭ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল নামিবিয়া, এবার সেইরকম চিত্রই ফুটে উঠল। এর মাঝে অনুর্ধ ১৯ একদিনের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ডও গড়ে ফেললেন মিরাজ। পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিমকে (৭৩ উইকেট) পেছনে ফেলে দিয়েছেন মিরাজ। ৫৩টি যুব একদিনের ম্যাচ খেলে ৭৪ উইকেট নিয়ে এখন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার মিরাজ। মিরাজের এ রেকর্ডের মধ্য দিয়ে অনুর্ধ ১৯ একদিনের ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ রান ও বোলিংয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির কাতারে সবার উপরে বাংলাদেশেরই দুই ক্রিকেটার থাকলেন। ব্যাটিংয়ে ৫৫ ম্যাচে ৩৯.১৩ গড়ে ১৭৬১ রান করে নাজমুল হোসেন শান্ত সবচেয়ে বেশি রান করার গৌরব অর্জন করেছেন। বোলিংয়ে সেই অর্জন গেছে মিরাজের ঝুলিতে। নিজের ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দল যে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেটি নিয়েই বেশি আনন্দিত অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। বলেছেন, ‘আসলে অধিনায়ক হিসেবে আমার খুব ভাল লাগছে। আজকের (মঙ্গলবার) ম্যাচটা আমরা জিতেছি। আমার রেকর্ডটাও হলো। আমরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলাম। সব মিলিয়ে খুব ভাল লাগছে। তবে ভাল লাগাটা এখানেই শেষ করলে হবে না। আমাদের যেতে হবে অনেক দূর। ভাল লাগা এখানেই থামলে আমরা বেশি দূর যেতে পারব না। লক্ষ্য পূরণ করতে পারব না।’ নিজের ব্যক্তিগত অর্জনের কথা বলতে গিয়ে মিরাজ জানান, ‘আমার কাছে ভাল লেগেছে। শেষ উইকেটটি যখন পাই, দলের সবাই আমাকে এসে জড়িয়ে ধরেছে। অভিনন্দন জানিয়েছে। সবাই বলেছে ভাল রেকর্ড করেছি, বিশেষ করে শান্ত অনেক এক্সাইটেড ছিল। সবাই খুবই খুশি। আমি রেকর্ডটা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে আজকেই (মঙ্গলবার) হবে। তবে ইচ্ছে করলেই তো সব হয় না। উইকেট নিতে চাইলে অনেক সময় পাওয়া কঠিন হয়। বেশি চেষ্টা করলে লাভ হয় না। শান্তও এই কথাটি আমাকে বলছিল যে ‘মিরাজ, তুই রেকর্ডের কথা মাথায় রাখলে কিন্তু উইকেট একটিও পাবি না, নরমাল বোলিংটা করলেই উইকেট পাবি।’ ওর কথাটা আমার কাজে লেগেজে। চিন্তা করেছি যে কথাটা ঠিকই আছে। উকেটের চিন্তা করলে উইকেট পাব না। আমি সেভাবেই নিজের বোলিংটা করেছি।’ এ জয় আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলেই বিশ্বাস মিরাজের, ‘অবশ্যই আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। এইসব দলের সঙ্গে ভাল করতে না পারলে আমাদের আত্মবিশ্বাস হয়ত কমে যেতে পারত। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সামনে এখন নেপালকে পাব আমরা। এইসব দলের বিপক্ষেই আমাদের বেশি সাবধান থাকতে হবে। কারণ, এই দলগুলোর বিপক্ষেই দুর্ঘটনা বেশি হয়। আমাদের লক্ষ্য থাকবে কোন দুর্ঘটনা যাতে না হয়। আমাদের প্রসেসটা ঠিক রেখে যেতে হবে। আমরা ঠিক পথে থাকলে সব দরজাই খোলা। আমাদের সব কিছু যদি ঠিক থাকে, ডিটারমিনেশন যদি থাকে, তাহলে ভাল কিছু সম্ভব।’ ম্যাচে নিজেদের পরিকল্পনার কথাও বলেন মিরাজ, ‘আমাদের পরিকল্পনা থাকে ১০ ওভার করে ভাগ ভাগ করে খেলা। এখানে যে রকম উইকেট, আমাদের পরিকল্পনা ছিল রান কম হলেও প্রথম ১০ ওভারে উইকেট দেয়া যাবে না। খুব বেশি রানের উইকেট না এটা। খুব বেশি রান দরকার হয় না জিততে। আমাদের টপঅর্ডারে পিনাক, সাইফ ও জয়রাজকে নির্দেশন দেয়া আছে শুরুতে সময় নিয়ে খেলতে।’ নেপালকে নিয়ে এখন ভাবতে হবে বাংলাদেশকে। সেই ভাবনা শুরু হয়ে গেছে। মিরাজের কথাতেই স্পষ্ট, ‘ভারতের বিপক্ষে নেপালের ম্যাচটি আমরা দেখেছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে আমরা আমাদের সেরাটা খেলতে পারলে নেপাল ভাল কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। আমরা আমাদের লেভেল, আমাদের স্ট্যান্ডার্ড জানি, জানি আমরা কতটা ওপরে। তবে এই লেভেলটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। নেপালকে হালকা করে নিলে চলবে না। ওরা ভাল খেলেছে বলেই কোয়ার্টারে এসেছে। আমাদের প্রসেস ঠিক রাখতে হবে। ওদের ব্যাটসম্যান কয়েকজন দেখেছি আক্রমণাত্মক খেলে। দু-একজন বোলারও বেশ ভাল। আমাদের সিরিয়াস থাকতে হবে।’ সিরিয়াস থাকলেই সেমিফাইনালেও উঠে যাওয়া সম্ভব। নামিবিয়াকে খেলা শিখিয়ে এখন নেপালকেও সেই শিক্ষা দেয়ার অপেক্ষা!
×