ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলাপাড়ায় চলছে কার্যক্রম

পুকুরে ইলিশ চাষ-গবেষণা

প্রকাশিত: ০৭:১০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পুকুরে ইলিশ চাষ-গবেষণা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২ ফেব্রুয়ারি ॥ পুকুরে ইলিশ চাষের গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের খেপুপাড়া নদী উপ-কেন্দ্রে পুকুরে ‘ইলিশ চাষের’ গবেষণা কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এনহ্যান্সড কোস্টাল ফিশারিজের (ইকো ফিস) অর্থায়নে ‘পুকুরের বিভিন্ন ঘনত্বে ইলিশ মাছের বেঁচে থাকার হার ও বৃদ্ধির পরীক্ষণের’ গবেষণার আওতায় গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে প্রথম দফায় এবং অক্টোবর মাসে দ্বিতীয় দফায় ইলিশ চাষের এ কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ মৎস্য গবষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ সদর দফতর থেকে উপকূলীয় কলাপাড়ায় পুকুরে ইলিশ চাষের গবেষণা কার্যক্রমের পরিকল্পনা নেয়া হয়। উপকূলীয় এ অঞ্চলের সাগর-নদীতে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। জাটকা পোনার সঙ্কট না থাকায় এ এলাকা বেছে নেয়া হয়েছে। খেপুপাড়া নদী উপকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রের ভেতরে ৪৫ শতাংশ জমিতে সাত ফুট গভীর পুকুর খনন করে সেখানে মশারি জাল দিয়ে ৯টি ভাগ করে ইলিশের জাটকা পোনা ছাড়া হয়েছে। পুকুরের পূর্বদিকে প্রথম তিন ভাগে ২০০ করে ৬০০, মাঝের তিন ভাগে ৪০০ করে ১২০০ এবং পশ্চিম দিকের তিন ভাগে ৬০০ করে ১৮০০ ইলিশের জাটকা পোনা ছাড়া হয়েছে। আন্ধারমানিক ও রামনাবাদ মোহনা থেকে ইলিশ পোনা আনা হয়। ৯ ইঞ্চি এবং ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি তিন সাইজের পোনা পুকুরে ছাড়া হয়েছে। পোনা মাছগুলোর খাবারের চাহিদা পূরণ করার জন্য পুকুরের ভেতরেই ক্ষুদ্র উদ্ভিদ কনা (ফাইটো প্লাঙ্কটন) তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকদিনের মধ্যে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরিতে ক্ষুদ্র প্রাণী কণা (জু প্লাঙ্কটন) তৈরি করে তা খাবার হিসেবে পুকুরে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এভাবে ডুবন্ত ও ভাসমান খাদ্য এবং নার্সারি পাউডার ব্যবহার করে পুকুরের পোনা ইলিশের খাবার চাহিদা মেটানো হচ্ছে। পুকুরে ইলিশ চাষের জন্য গবেষণা কার্যক্রম সফল করতে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। ইলিশের পোনা চাষের পুকুরটিতে অন্য কোন ধরনের প্রাণীর প্রবেশ রোধ করতে চারদিকে মশারি নেট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। ইলিশ পোনা বাঁচাতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। কৃত্রিম ঢেউ সৃষ্টির জন্য কক্সবাজার থেকে প্যাডেল হুইল এ্যারেটর আনা হয়েছে। বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে এ যন্ত্রটি পুকুরের পানিতে বসানো হয়েছে। এছাড়া এয়ার ব্লোয়ার (বাতাস সরবরাহকারী যন্ত্র) বসিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে মশারি জালের প্রত্যেক ভাগে অক্সিজেন সঙ্কট মোকাবেলা করা হচ্ছে। ইলিশ পোনার বেঁচে থাকাসহ দৈহিক বৃদ্ধিতে এসব কৌশল কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ৬ জানুয়ারি ওয়ার্ল্ডফিসের বাংলাদেশ পরিচালক ড. ক্রেগ মেজনার, এনহ্যান্সড কোস্টাল ফিশারিজের বাংলাদেশের টিম লিডার ড. আবদুল ওয়াহাবসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ গবেষণা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তাঁরাও এ প্রকল্পের সফলতা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের খেপুপাড়া নদী উপ-কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হক জানান, প্রত্যেক মাসে জাল টেনে মাছগুলোর অবস্থান নিশ্চিত হন। তিনি জানান, এ গবেষণার কাজ দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ সফল হতে ১০-১৫ বছর সময় লাগতে পারে। গবেষণায় সফলতা এলে জাতীয় মাছ ইলিশ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে। এ তিনি বলেন, ‘ইলিশের জাটকা পোনা নদী থেকে সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়ার কারণে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে আমাদের সচেষ্ট থাকতে হচ্ছে। তা ছাড়া এসব পোনা নদী থেকে ধরে এনে পুকুরে ছাড়া পর্যন্ত বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করতে হয়েছে।’ এবারের চেষ্টায় সফলতা আসবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করলেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হক।
×