যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার লড়াই আইওয়া অঙ্গরাজ্যে দলীয় ককাসের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। আর আইওয়ার ভোটাররাই প্রাক-নির্বাচনী ভোট ককাস ও প্রাইমারিগুলো সম্পর্কে ধারণা দেবে। কৌশলগত দিক দিয়ে আইওয়া ককাসের ভোট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ ভোটের ফলাফল অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে। এক হাজার ৫০০ প্রার্থী সমাবেশ, ৬০ হাজার টিভি বিজ্ঞাপনের পর সোমবার আইওয়াতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভারসাম্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন আইওয়ার ভোটাররা। উভয় দলই এক বছর আগে তাদের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দেখেছেন আর উভয় দলের প্রার্থীদের মধ্যে যারা জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন তাদের কেউই দলের অভিজ্ঞ নেতাদের পছন্দের নন। রিপাবলিকানদের মধ্যে বিলিয়নিয়ার ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু হিস্পানিক ও মুসলিম অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাই নয়, দলের সব প্রচলিত নীতি-আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অপরদিকে রয়েছেন টেক্সাস থেকে নির্বাচিত সিনেটর টেড ক্রুজ। মূলধারার সম্পূর্ণ বাইরের এই রাজনীতিকের আশা, অতি রক্ষণশীল ও কট্টর খ্রীস্টান ‘ইভানজেলিক্যালদের’ ভোটে জয়ী হবেন। ডেমোক্র্যাটিক দলের অবস্থাও প্রায় একই রকম জটিল। তিন মাস আগেও সবাই নিশ্চিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বিপুল জনসমর্থনে নিজ দলের মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু হিলারিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ভারমন্ট থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডারস। প্রায় ৭৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক নিজেকে কোন রাখঢাক ছাড়াই ‘গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক’ হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। এক রিপাবলিকান টেরি ই ব্রান্সটাড বলেছেন, এখানে ব্যাপকভাবে প্রথা বিরোধী ও ওয়াশিংটন বিরোধী মনোভাব কাজ করছে। তাই উভয় দলেই কোন বহিরাগত জয়ী হলেও আমি অবাক হবনা। সোমবারের এই ভোটে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর স্যান্ডারসকে হারিয়ে বিজয়ী হন। হিলারি পান ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট এবং স্যান্ডারস পান ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। সোমবারের ককাসের ফলাফল শুধু প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ব্যবধান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণাই দেবে না, শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হবেন, ভোটারদের এমন অনুধাবন সম্পর্কেও ধারণা দেবে। আর মোট ডেলিগেটের মাত্র ১ শতাংশ আইওয়া ককাসে নির্ধারিত হবে। আইওয়াতে রিপাবলিকানদের ৩০ ও ডেমোক্র্যাটদের ৪৪ জন ডেলিগেট রয়েছে। সবচেয়ে আগে হওয়ায় এমনিতেই আইওয়ার এই ভোটকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। আবার ধারণা করা হচ্ছিল, গত কয়েক দশকের মধ্যে এবারই সবচেয়ে অনিশ্চিত ককাস উপহার দিতে যাচ্ছে আইওয়া। এজন্য আইওয়ার দিকেই চোখ ছিল সবার।
হিলারির সমর্থক আইওয়ার সিনিয়র ডেমোক্র্যাট সাবেক সিনেটর টম হারকিন বলেছেন, তরুণ ও মধ্যবিত্ত সমাজের উদ্বেগ নিয়ে স্যান্ডারস জোর গলায় কথা বলেছেন। হিলারিও বলেছেন। কিন্তু তিনি বার্নি স্যান্ডারসের মতো অনন্য নন। আর প্রত্যেক নির্বাচনে কিছু মানুষ অনন্য, নতুন অপরীক্ষিত এমন কিছু চায়। তিনি তার ৩০ বছরের চাকরি জীবনের মধ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বামপন্থী সিনেটর ছিলেন। তাই তিনি তার অঙ্গরাজ্যের গতিশীলতা সম্পর্কে ভালভাবেই জানেন। সাম্প্রতিক এক জরিপে প্রতি ১০ ডেমোক্র্যাটের চারজন নিজেকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অপরদিকে রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের ছয়জন নিজেকে ‘অতিরিক্ত ধার্মিক’ বলে পরিচয় দিয়েছেন। আগামী কয়েক মাস পরে ৪৯টি অঙ্গরাজ্যে পর্যায়ক্রমে এই ভোট হবে। এর মধ্যদিয়েই দুই দল তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। আগামী কয়েক মাস পরে ৪৯টি অঙ্গরাজ্যে পর্যায়ক্রমে এই ভোট হবে। এর মধ্যদিয়েই দুই দল তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। প্রাক-নির্বাচনী ভোটের মাধ্যমে ‘ডেলিগেট’ বাছাই সম্পন্ন হয়। এ বছর জুলাই মাসে দুই দলের ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় সম্মেলনে এই ডেলিগেটদের ভোটেই দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগামী নবেম্বর মাসে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।-ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস