ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থান তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী

অভিযুক্ত সব প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত বেতন ফি ফেরত দিতে হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অভিযুক্ত সব প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত বেতন ফি ফেরত দিতে হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর সাত নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অভিযুক্ত সকল স্কুলকে পে স্কেলের অজুহাতে আদায় করা অতিরিক্ত বেতন-ফি শিক্ষার্থীদের কাছে ফেরত দিতে হচ্ছে। ভর্তি নীতিমালা লঙ্ঘন করে আদায় করা বাড়তি অর্থ ফেরত দিতে না পারলে তা মাসিক বেতনের সঙ্গে অবশ্যই সমন্বয় করতে হবে। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আদায় করা অর্থ ফেরত না দিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা-২০১৬ এবং এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, ভর্তি নীতিমালায় বিধিনিষেধ এমনকি আদালতের রায়ের পরও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জিম্মি করে টাকা আদায়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কিছুদিন যাবত এ ইস্যুতে অভিভাবকদের আন্দোলন ও মন্ত্রণালয়ের আদেশের প্রেক্ষাপটে বুধবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থান তুলে ধরবেন। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) করা একটি তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে অভিযুক্ত সাতটি প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বাড়তি অর্থ ফেরতের সময়ও বেঁধে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যেই নতুন পে স্কেলের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভর্তি ফি ও বেতনসহ অন্যান্য খাতে ইচ্ছামতো টাকা আদায়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে রাজধানীর সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। গত সপ্তাহে মাউশির তৈরি একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এ প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমপিওভুক্ত সাতটি প্রতিষ্ঠান অষ্টম বেতন কাঠামোর অনুসারে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির অজুহাত তুলে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি, বেতন ৪০ শতাংশ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রমাণ পেয়েছে মাউশি। তদন্তে পে স্কেলের সঙ্গে সমন্বয় করে আংশিক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতে রাজধানীর বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে ইচ্ছামতো ভর্তি আদায় ও টিউশন ফি বাড়ানো হয়। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন, ফি’সহ সকল শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে অস্থিরতা শুরু হয়। চলে আন্দোলন। এরপরই তদন্তে নামে শিক্ষা প্রশাসন। শিক্ষা অধিদফতরের তদন্তে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সেন্ট জোসেফ স্কুল, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুল, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মিরপুর পুলিশ স্মৃতি স্কুল এ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়াও বিয়াম স্কুল এ্যান্ড কলেজ, অগ্রণী স্কুল এ্যান্ড কলেজ, জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ইচ্ছামতো ভর্তি ফি আদায় ও বেতন বৃদ্ধির অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে তদন্তের দায়িত্বে থাকা মাউশি’র পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াস হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাতটি প্রতিষ্ঠানের ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছি। কী ব্যবস্থা নেয়া যায় সেটা মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে। মাউশি’র তদন্তে রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজে সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি, বেতনসহ সকল শিক্ষা ব্যায় প্রায় ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রমাণ মিলেছে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধেও। এই প্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যমে ৮৭ শতাংশ এবং ইংলিশ ভার্সনে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন-ফি বৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে। তবে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজে বেতন-ফি বৃদ্ধির পরিমাণ নামী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে কম। আইডিয়ালে বেড়েছে ৪ থেকে ১২ শতাংশ শিক্ষা ব্যয়। এছাড়া উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণী ভেদে ৫০ শতাংশ থেকে ১০০ ভাগ বেতন-ফি বাড়ানো হয়েছে। মোহম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুলে বাড়ানো হয়েছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। মিরপুর পুলিশ স্মৃতি কলেজে ৩৭ থেকে ৪৩ শতাংশ। এছাড়া অভিযুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তথ্যও অধিদফতর সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন-ফি বাাড়িয়েছে। শাস্তির বিষয়ে মাউশি কর্মকর্তারা বলেন, প্রথমত বর্ধিত টাকা ফেরত দিতে হবে। সরকার চাইলে অধ্যক্ষের এমপিও বন্ধ এমনকি প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বরখাস্ত হতে পারে। কারণ এর আগে রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ ও মিরপুর মনিপুর হাই স্কুলের কাছ থেকে অবৈধভাবে আদায় করা বাড়তি অর্থ শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তিন প্রতিষ্ঠানের প্রধান এমপিও স্থগিত করা হয়েছিল। এবারও সেই শাস্তিই হতে পারে।
×