ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাইব্যুনালের রায়

মুসলিম লীগ নেতা ননী, নেজামে ইসলামী নেতা তাহেরের ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মুসলিম লীগ নেতা ননী, নেজামে ইসলামী নেতা তাহেরের ফাঁসি

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার দুই রাজাকার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী (৬২) ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরকে (৬৪) মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আসামি তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে চারটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে হত্যা, ধর্ষণ, আটকে রেখে নির্যাতনের দায়ে দুজনের সর্বোচ্চ সাজার আদেশ এসেছে। ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি চালিয়ে তাদের দ- কার্যকর করতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগে হত্যা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল দুইজনকে আমৃত্যু কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন। চতুর্থ অভিযোগে হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে গণহত্যার ঘটনায় দুই আসামির সংশ্লিষ্টতা প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে না পারায় তাদের খালাস দিয়েছে আদালত। এদিকে ট্রাইব্যুনাল তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের বিষয়টি মীমাংসিত ইস্যু। এ সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। এই ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানেই স্বাধীন বাংলাদেশ। কেউ কেউ শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছেন, যা দুর্ভাগ্যজনক। মঙ্গলবার চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী। রায়ের পর প্রসিকিউশন পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষ বলেছেন আসামি ন্যায় বিচার পাননি। তারা উচ্চ আদালতে আপীল করবেন। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভেতরে ও বাইরে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। আসামি ননী ও তাহেরকে কারাগার থেকে কড়া প্রহরায় সকাল সোয়া নয়টা ট্রাইব্যুনালের হাজত খানায় আনা হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তাদের ট্রাইব্যুনালের এজলাসে আনা হয়। এর পর সাড়ে ১০টায় ট্রাইব্যুনাল বসলে চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক বলেন, এই মামলার মোট ২৬৮ পৃষ্ঠার রায় হবে। আর প্রারাগ্রাফ আছে ৪৭২টি। রায়ের প্রথম অংশ পড়েন বিচারপতি মোঃ সোহরাওয়ার্দী দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি মোঃ শাহিনুর রহমান। আর সর্বশেষ সাজার অংশ পড়েন চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ননী তাহেরের মামলাটি ট্রাইব্যুনালের ২২তম রায়। এর আগে আরও ২১টি রায় ঘোষণা করা হয়েছে। যে অভিযোগ দুইজনের মৃত্যুদ- ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামি আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহেরকে যে অপরাধে মৃত্যুদ- দিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে ২৯ অক্টোবর ১৯৭১ বেলা অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে আসামিরা বারহাট্রা থানার লাউফা গ্রামে মোশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে ৭ জনকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। অন্যদিকে ১৫ নবেম্বর ১৯৭১ সকাল ১১টার দিকে আসামিরা বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে। এরপর লক্ষ্মীগঞ্জ ও মোক্তার পাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। এই দুই অপরাধের কারণেই তাদের মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার কার্যক্রম ॥ নেত্রকোনার মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা কাঞ্চন একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালে ননী ও তাহেরসহ ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করলে পরে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে আসে। ২০১৩ সালের ৬ জুন এ দুই আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এক বছর চার মাস ২৮ দিন তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৫ নবেম্বর দেয়া হয় ৬৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন। প্রসিকিউশনের আবেদনে আদালত পরোয়ানা জারি করলে ওইবছর ১২ আগস্ট দুই আসামিকে গ্রেফতার করে নেত্রকোনার পুলিশ। পরদিন তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পাঠানো হয় কারাগারে। প্রসিকিউশন এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর গত বছর ২ মার্চ যুদ্ধাপরাধের ছয় ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাহের ও ননীর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়। ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ২৩ জন জবানবন্দী উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষ একজন সাফাই সাক্ষীর নাম দিলেও তাকে তারা হাজির করতে পারেনি। ৪ জানুয়ারি থেকে চারদিন দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। গত ১০ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ হওয়ায় মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নী। আসামিপক্ষে ছিলেন আব্দুস সোবাহান তরফদার ও গাজী এম এইচ তামিম। ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ ॥ ট্রাইব্যুনাল তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের বিষয়টি মীমাংসিত ইস্যু উল্লেখ করে এ সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের বিষয়টি একটি মীমাংসিত ইস্যু। এ নিয়ে পুনরায় বিতর্কের প্রয়োজন নেই। এই ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানেই স্বাধীন বাংলাদেশ। ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, কেউ কেউ শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছেন, যা দুর্ভাগ্যজনক। রায়ের ২৫২ পৃষ্ঠার ৪৪৬ অনুচ্ছেদে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে বাঙালী জাতি ও মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস ধরে যে যুদ্ধ করেছে, তা ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, লাখ লাখ নারী তার সর্বোচ্চ সম্মান বিসর্জন দিয়েছেন, প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন, লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস নিঃসন্দেহে জাতির পবিত্র আবেগ ও মুক্তিযুদ্ধের অহঙ্কারের সঙ্গে মিশে আছে। প্রসিকিউশনের সন্তোষ প্রকাশ ॥ রায় ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট মামলার প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা এ মামলা ৬টি অভিযোগ তুলে ধরেছিলাম। সেখানে ৪টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আমি এতে খুশি। অন্যদিকে রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘ইতোমধ্যে ৩০ লাখ শহীদের বিষয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে এ রায় প্রদান করার মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনাল যে বিষয়ে সে যুক্তিখ-ন করেছেন। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, ৩০ লাখ শহীদ নিয়ে কোন ধরনের বিতর্কের কোনই অবকাশ নেই। এবং এ ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মদানের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীন বাংলাদেশ তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে এ রায়ের মধ্য দিয়ে। শহীদ পরিবার এবং ভিকটিম পরিবার, তাদের যে সন্তুষ্টির এবং আকুতির বিষয় রায় প্রদানের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, একাত্তরে যারা নৃশংস হত্যা, গণহত্যা ধর্ষণ করেছেন তাদের সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। এতে আমি খুবই সন্তোষ প্রকাশ করছি। বর্তমান বয়স চিন্তা করলে হবে না। তখন তারা কি অপরাধ করেছিল সেই বিচার হচ্ছে। আসামিদ্বয় আপীল করবেন ॥ একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার কথা বলেছেন নেত্রকোনার দুই রাজাকার মোঃ ওবায়দুল হক ওরফে আবু তাহের ও আতাউর রহমান ননীর আইনজীবী। মঙ্গলবার রায়ের পর তাদের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছেন, তাতে উনারা সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে উনারা সুপ্রীমকোর্টের আপীল করবেন। আপীলে তারা ‘নির্দোষ’ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন এই আইনজীবী। নিয়ম অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপীলের সুযোগ পাবেন তাহের ও ননী। ২২তম রায় ॥ ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ২২টি মামলার রায় হয়েছে। তার মধ্যে ২৬ জনকে বিভিন্ন দ- প্রদান করা হয়েছে। যাদের দ- দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, জামায়াতের সাবেক রুকন বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ (মৃত্যুদ-), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা (আমৃত্যু কারাদ- (আপীলে মৃত্যুদ-, পরবর্তীতে রায় কার্যকর), জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (মৃত্যুদ-) আপীলে আমৃত্যু কারাদ-, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (মৃত্যুদ-) আপীল বিভাগেও মৃত্যুদ- বহাল, পরবর্তীতে রায় কার্যকর। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম (৯০ বছরের কারাদ-) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (মৃত্যুদ-), পরে তার রায় কার্যকর। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (মৃত্যুদ-), পরে তার দ- কার্যকর। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম (আমৃত্যু করাদ-) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, বদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং মোঃ আশরাফুজ্জামান খান (মৃত্যুদ-), জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদ-), জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলী (মৃত্যুদ-), বিএনপি নেতা নগরকান্দা পৌর মেয়র জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকার (মৃত্যুদ-), আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোঃ মোবারক হোসেন (মৃত্যুদ-), জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার (মৃত্যুদ-), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম (মৃত্যুদ-) জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান (মৃত্যুদ-) ও জাতীয় পার্টির আব্দুল জব্বার (আমৃত্যু কারাদ-)। মাহিদুর রহমান এবং আফসার হোসেন চুটু (আমৃত্যু কারাদ-), হাসান আলী (মৃত্যুদ-), ফোরকান মল্লিক (মৃত্যুদ-), কাসাই সিরাজকে মৃত্যুদ- ও খান আকরামকে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। সর্বশেষ আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহেরকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। চার্জসমূহ ॥ চার্জ-১ : একাত্তরে ১৭ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে আসামিদের নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্রা থানার বাউসী বাজার থেকে ফজলুর রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে। এর পর নেত্রকোনা জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনী ব্রিজে হত্যা করে। হত্যাকা-ের পর বাউসী বাজারের ৪০০/৪৫০টি দোকান ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। চার্জ-২: ৪ অক্টোবর ১৯৭১, সকাল আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে নেত্রকোনা শহরের বারহাট্রা রোডের শ্রীশ্রী জিউর আখড়ার সমানের রাস্তা থেকে আসামিরা কৃতী ফুটবলার দাবির হোসেনকে অপহরণ করে। এর পর নির্যাতন চালিয়ে মোক্তার পাড়া ব্রিজের নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। চার্জ-৩: ২৯ অক্টোবর ১৯৭১ বেলা অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে আসামিরা বারহাট্রা থানার লাউফা গ্রামে মোশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে ৭ জনকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। চার্জ-৪: রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার আতাউর রহমান ননী ও অন্য রাজাকাররা শহরের মোক্তার পাড়ায় মলয় বিশ্বাসের বাড়ি এবং এ্যাডভোকেট শ্রীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল, মানসিক নির্যাতন ও দেশত্যাগে বাধ্য করা। চার্জ-৫: ১৫ নবেম্বর ১৯৭১ বেলা ১১টার দিকে আসামিরা বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে। এর পর লক্ষ্মীগঞ্জ ও মোক্তার পাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। চার্জ-৬: অক্টোবরের মাঝামাঝি শিক্ষক কামিনী চক্রবর্তীসহ ২৭ জনকে হত্যা। তাদের নেত্রকোনা জেলগেট থেকে ধরে এনে নেত্রকোনা ত্রিমোহনী ব্রিজের কাছে নিয়ে হত্যা করা হয়। কে এই ননী তাহের ॥ মৃত্যুদ- আসামি ননী তাহেরের পরিচয় কি। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল হক তাহের নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার ভোগাপাড়ার শুনই এলাকার মঞ্জুরুল হকের ছেলে। তার জন্ম ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি। বিকম ডিগ্রী পাওয়ার পর তাহের নেজামী ইসলামী পার্টির রাজনীতিতে যোগ দেন। এ দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রাম শুরু হলে তিনি তার বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে নেত্রকোনা সদরের কমান্ডারের দায়িত্ব পান। অন্যদিকে আতাউর রহমান ননী একই জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কচন্দরা এলাকার মৃত আহছান আলী ওরফে আছান আলী ওরফে হাছেন আলীর ছেলে। এসএসসির সনদে ননীর জন্ম তারিখ ১৯৫৬ সালের ৭ জুলাই উল্লেখ করা হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে লেখা হয়েছে ৮ আগস্ট ১৯৫৮। পৌর শহরের সাবেক এই ফুটবলারও একাত্তরে তাহেরের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধে অংশ নেন বলে এ মামলার বিচারে উঠে এসেছে। ২০১৪ সালে গ্রেফতার হওয়ার আগে নেত্রকোনা পৌর শহরের তৈরি বাজারে ব্যবসা করতেন তাহের। তিনি স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পৌর শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ননীও গ্রেফতার হওয়ার আগে ব্যবসা করতেন। একাত্তরে মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি নানা মানবতাবিরোধী অপরাধে অংশ নেন।
×