ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

তরুণ কবি-লেখকদের কালি ও কলম পুরস্কার প্রদান

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

তরুণ কবি-লেখকদের কালি ও কলম পুরস্কার প্রদান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সাহিত্যের উন্নয়ন ও বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে তরুণদের সাহিত্য-সাধনার। তাই তরুণ কবি ও লেখকদের সাহিত্যচর্চায় গতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৮ সাল থেকে তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার প্রবর্তন করেছে সাহিত্য-শিল্পী ও সংস্কৃতিবিষয়ক পত্রিকা কালি ও কলম। শুক্রবার অষ্টমবারের মতো প্রদান করা হলো এ পুরস্কার। ২০১৫ সালে সাহিত্যচর্চায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় চার লেখককে এ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। নবীন এই লেখকরা হলেন- কবিতা বিভাগে ‘ধানের ধাত্রী’ কাব্যগ্রন্থের জন্য শামীম হোসেন, কথাসাহিত্য বিভাগে ‘ধাতব সময়’ গ্রন্থের জন্য ইমরান খান, প্রবন্ধ, গবেষণা ও নাটক বিভাগে ‘বাংলাদেশের পালকি ও পালকিবাহক : নৃ-তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ধারা’ গ্রন্থের জন্য রঞ্জনা বিশ্বাস এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা/প্রবন্ধ বিভাগে ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থের জন্য সালেক খোকন এ পুরস্কার অর্জন করেছেন। পাঁচ সদস্যের বিচারকম-লী উল্লিখিত চারজনকে তাদের সৃজনশীল ও মননশীল গ্রন্থের জন্য নির্বাচিত করেছেন। শিশু ও কিশোর বিভাগে কোন মানসম্মত গ্রন্থ জমা না পড়ায় এবার এ বিভাগে কোন পুরস্কার প্রদান করা হয়নি। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পুরস্কারজয়ী চার লেখককে এক লাখ টাকা করে সম্মানী ও স্মারক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং সঙ্গীতবোদ্ধা ও ঔপন্যাসিক শঙ্করলাল ভট্টচার্য। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের এবং কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত। সভাপতিত্ব করেন কালি ও কলম সম্পাদকম-লীর সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিজয়ী লেখকদের নাম ঘোষণা করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। শংসা বচন পাঠ করেন মাহবুব সাদিক। অনুষ্ঠানের শেষপর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে শোনান কণ্ঠশিল্পী শামা রহমান। কবিতা পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ। আয়োজনের শুরুতেই দেখানো হয় বিগত বছরগুলোয় এ পুরস্কারের ওপর নির্মিত ভিডিওচিত্র। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে তরুণ কবি শামীম হোসেন বলেন, এ পুরস্কারটি উৎসর্গ করলাম আমার মাকে। এ পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুপ্রেরণায় আজীবন যেন কবিতাকে খুঁজতে পারি। আমি লিখতে এসেছি। ভাব ও অনুভবের মহামিলনের ডাক থেকে ধরতে কাক্সিক্ষত কবিতাকে। পুরস্কারপ্রাপ্ত তরুণ লেখক রঞ্জনা বিশ্বাস বলেন, একজন লেখক হতে আমাকে যারা গড়ে তুলেছেনÑ এ প্রাপ্তি একই সঙ্গে তাদের এবং সমষ্টির। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা বিভাগে পুরস্কারজয়ী লেখক সালেক খোকন বলেন, ১৪ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আমি বইটি লিখেছি। বইটি যখন প্রকাশিত হয় তখন আমার মনে হয়েছে, এর মাধ্যমে ওই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের এবং আমাকে একসঙ্গে পুরস্কৃত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের এই লড়াই চলবে আগামী কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত। প্রসঙ্গত, পাঁচ সদস্যের বিচারম-লীর মাধ্যমে এ পুরস্কারজয়ী লেখকদের নির্বাচিত করা হয়েছে। বিচারকম-লীর সদস্যরা হলেনÑ অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, সুব্রত বড়ুয়া ও মাহবুব সাদিক। কামাল চৌধুরীর কবিতার মূল্যায়ন গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব ॥ শুক্রবার বিকেলে কবি কামাল চৌধুরীর বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ এবং আরও দুটি কাব্যগ্রন্থ ও কবিতার মূল্যায়ন গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব ও পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর । আলোচনায় অংশ নেন কবি রুবী রহমান, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নজরুল গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম, জাতীয় জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, কবি নাসির আহমেদ, কবি আসলাম সানী, কবি মোহাম্মদ সাদিক, কবি আসাদ মান্নান, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, কবি বুলবুল মহলানবীশ, ছড়াকার আলম তালুকদার, কাবেদুল ইসলাম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। ঐশিকা নদী পরিবেশিত কবি কামাল চৌধুরী রচিত গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। আবৃত্তিশিল্পী শাহাদাৎ হোসেন নিপু কবির লেখা ‘মার্চ’ কবিতাটি পাঠ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, কামাল চৌধুরী কবিতায় দেশ ও মানুষের কথা বলেছেন। তার নতুন কবিতার বইয়ে আমরা আবারও দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রকাশ দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে কবিতা চর্চার অনন্যতার পাশাপাশি দেশের প্রগতিশীল উত্থানের পথে কামাল চৌধুরী দীপ্ত ভূমিকা পালন করেছেন। অন্য আলোচকরা বলেন, কবি কামাল চৌধুরী কবিতায় দেশ, মানুষ ও মৃত্তিকার কথা বলেছেন সহজ ভাষায় ও বিন্যাসে। মহান মুক্তিযুদ্ধ যেমন তার কবিতা ও শিল্পসত্তার অন্যতম প্রেরণা, তেমনি স্বাধীন স্বদেশে গণতন্ত্র ও প্রগতি প্রতিষ্ঠার পথে তিনি হেঁটেছেন অবিরাম। বিরুদ্ধ সময়ে কালস্রোতে দাঁড়িয়ে কবিতার অক্ষর ও অবয়বে সন্ধান করেছেন অনির্বাণ আলো। আলোচকবৃন্দ বলেন, ব্যক্তি হিসেবে তার উদার আধুনিক ও সহিষ্ণু মনোভঙ্গি এবং অসাম্প্রদায়িক জীবনদৃষ্টির প্রতি অবিচল পক্ষপাত তাকে সমকালের প্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। তার সদ্য প্রকাশিত কবিতার বই এবং কবিতার মূল্যায়ন গ্রন্থ সৃষ্টির সূত্রে কবিকে আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করবে। উদীচীর লোক-সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন ॥ বাংলার আবহমান সংস্কৃতির মূল ভিত্তি অসাম্প্রদায়িক চেতনা গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে ছড়িয়ে দেয়ার শপথ নিয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী উদযাপন করল লোক-সাংস্কৃতিক উৎসব ১৪২২। ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ সেøাগানে শুক্রবার উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের আয়োজনে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার অদূরে নবাবগঞ্জের বক্সনগর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। বিকেলে উৎসব উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহম্মদ খসরু। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মুহম্মদ খসরু এবং উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মোহাম্মদ ইদু। এরপর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান উদীচী নেতৃবৃন্দ। সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার, স্থানীয় গুণী ব্যক্তিত্ব আব্দুল বাতেন মিয়া, সংস্কৃতিজন মফিদ খান, মহসিন আহমেদ এবং জামিলুর রহমান শাখা। এ সময় উদীচীর পক্ষ থেকে মুহম্মদ খসরুর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মোহাম্মদ ইদু। এরপর শুরু হয় লোকজ পরিবেশনা পর্ব। এ পর্ব শুরু হয় উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের গীতিআলেখ্য ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ দিয়ে। এরপর একে একে নানা পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসে উদীচী কাফরুল শাখা, উদীচী মিরপুর শাখা, উদীচী সাভার শাখার শিল্পী-কর্মীরা। এছাড়াও একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মোয়াজ্জেম হোসেন, সরদার আফসার উদ্দিন, শিল্পী আখতার, ডাঃ তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, বিপ্লব রায়হান, সিদ্দিক মোল্লা, অবিনাশ বাউল, আনসার বাউল। নাটক ‘জাহান আলী রে ধর’ পরিবেশন করে নবাবগঞ্জ থিয়েটার। নাটকটি রচনা করেছেন সালাম সাকলাইন। জাদুঘরে শীত উৎসব ॥ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর শুক্রবার সন্ধ্যায় শীত উৎসবের আয়োজন করে। ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবে পিঠা প্রদর্শন ও লোকসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। মধ্য মাঘের সন্ধ্যায় শীতের মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিপুল জনসমাগম হয়। হারানো দিনের গানের মূর্ছনায় অংশগ্রহণ করেন আফসানা রুমানা, বিপ্লব সরকার, আমেনা মফিজ, ভজন কুমার বেদ, মফিজুর রহমান এবং ফরিদা পারভিন। আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি ॥ শুক্রবার শেষ হলো সপ্তাহব্যাপী নবম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। সমাপনী দিনে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় ৩টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র। বিকেলে শওকত ওসমান মিলনায়তনে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উৎসবের আয়োজক সংগঠন চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশেরে সাধারণ সম্পাদক মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, উৎসব পরিচালক রায়ীদ মোরশেদ, উপ-উৎসব পরিচালক আবীর ফেরদৌস মুখর এবং এ কে এম মঈনুল ইসলাম মঈন হেড অব মার্কেটিং প্রাণ কনফেকশনারি লিমিটেড। পূর্ব-পশ্চিম আবৃত্তি উৎসব ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও আবৃত্তিকারের যৌথ প্রয়াসে শুক্রবার থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি মিলনায়তনে শুরু হলো ‘বিশ্বময় বাংলার শিল্পিত উচ্চারণ’ সেøাগানে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী পূর্ব-পশ্চিম আবৃত্তি উৎসব ২০১৬। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সকালে একাডেমির নন্দন মঞ্চে উৎসব উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার ও একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি মিলনায়তনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বরেণ্যশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরঞ্জন অধিকারী। এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী ও অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, বুলবুল মহলানবীশ প্রমুখ।
×