ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন নামে বিশেষায়িত ইউনিট হচ্ছে পুলিশে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন নামে বিশেষায়িত ইউনিট হচ্ছে পুলিশে

শংকর কুমার দে ॥ ‘সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন’, এটা পুলিশের বিশেষায়িত একটি আলাদা ইউনিট। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত পুলিশের ৫০ হাজার জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগের প্রক্রিয়ায় গঠন করা হচ্ছে এ ব্যাটালিয়নটি। আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা বিধানসহ এ ব্যাটালিয়ন মোকাবেলা করবে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নাশকতামূলক অপরাধী কর্মকা-। নামে সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন হলেও এ বিশেষায়িত ইউনিটটি হাইকোর্টসহ নিম্ন আদালতের নিরাপত্তা বিধানেও কার্যকর হবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের ১২ এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) গঠনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করবে সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়নটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব। প্রস্তাবটি এখন মন্ত্রণালয়ে সক্রিয় বিবেচনাধীন। নতুন এ ব্যাটালিয়ন গঠন হলে আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা সম্ভব হবে। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নাশকতামূলক কর্মকা- থেকে আদালত প্রাঙ্গণকে রক্ষার জন্য কাজ করতে এগিয়ে আসবে সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন। সূত্র জানায়, সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছেÑ আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছি এ ব্যাটালিয়ন গঠনের উদ্দেশ্যে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত পুলিশের ৫০ হাজার জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগের মধ্যে এ ব্যাটালিয়নটি গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন চালু হলে আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার ও নিñিদ্র করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলায় দেশের সুপ্রীমকোর্ট, হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এরপর ১৪ নবেম্বর ঝালকাঠিতে জেএমবির আত্মঘাতী হামলায় দুই বিচারক নিহত হন। ওই বছরের ২৯ নবেম্বর একযোগে গাজীপুর ও চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। গাজীপুর আদালতের আইনজীবী সমিতির অফিসে জেএমবির আত্মঘাতী হামলায় ৯ জন নিহত হন। আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তায় আলাদা পুলিশবাহিনীর কোন ইউনিট থাকলে এ ধরনের হামলা মোকাবেলায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জানমালের নিরাপত্তা বিধান সহজ হবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রমতে, জঙ্গী সংগঠন জেএমবির এসব হামলার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে জঙ্গী সংগঠনের নামে উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের বিচারকদের হুমকি দেয়া হয়। গত বছরের ১১ জানুয়ারি সুপ্রীমকোর্টের এনেক্স (বর্ধিত) ভবনের দ্বিতীয় তলায় দুটি আদালত কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় বোমা ও বোমাসদৃশ বস্তু। নিপুণ ও নিখুঁতভাবে বোমা ও বোমাসদৃশ বস্তু রাখা ছিল আইনের বই কেটে তার মধ্যে। সেদিনই আইনজীবী সমিতি ভবনের টয়লেট থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় গুলিভর্তি পিস্তলও। এতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত অঙ্গনে দেখা দেয় আতঙ্ক ও উদ্বেগ। এরপর জোরদার করা হয় আদালত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওই ঘটনার পরপরই সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে গঠন করা হয় সাত সদস্যের নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাজেস কমিটি। এছাড়াও সুপ্রীমকোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য পুলিশের কাছে দেয়া হয়েছে চিঠি। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি নতুন একটি ব্যাটালিয়ন গঠন করার চিন্তাভাবনা করা হয়। নতুন ব্যাটালিয়নের নামকরণ করা হয়েছে সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি করা নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন করে সুপ্রীমকোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাবটি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) আদলে সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন গঠন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়নটি ১২ এপিবিএন ব্যাটালিয়ন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। প্রাথমিকভাবে সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে থাকবেন এসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। তার অধীনে থাকবেন ৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৮ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ৩৫ জন পরিদর্শক, ১১৫ এসআইসহ ৭শ’ জনবল। পুলিশ সদর দফতরের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেন, সুপ্রীমকোর্ট, হাইকোর্ট ও দেশের অন্যান্য নিম্ন আদালতে প্রাঙ্গণে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন। আদালত প্রাঙ্গণে ও প্রবেশপথগুলোতে আর আগের মতো দায়িত্ব পালন করবে না সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। সন্দেহভাজন বহিরাগতদের শরীর তল্লাশি করবে সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। আদালতের বিচারকদের থাকার কোয়ার্টারগুলোর নিরাপত্তা দেবে এই সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন। প্রয়োজনে বিচারকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়নই দেখভাল করবে। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, অপরাধী কর্মকা-ের মতো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা মোকাবেলায় দ্রুত কার্যকর ভূমিকা রাখবে সুপ্রীমকোর্ট ব্যাটালিয়ন।
×