ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু

দুই জেলার ৯০ হাজার নারী-পুরুষের বিদেশে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

দুই জেলার ৯০ হাজার নারী-পুরুষের বিদেশে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ

ফিরোজ মান্না ॥ চলতি বছর কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে ৯০ হাজার নারী ও পুরুষ কর্মীকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়ার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে তারা বিদেশে ভাল বেতনের চাকরি নিয়ে যেতে পারবেন। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই দুই জেলায় ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিদর্শন করেছেন। তিনি দুই জেলার ডিসিদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী তদারকিরও নির্দেশ দিয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেন, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে ৯০ হাজার নারী ও পুরুষ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পর তাদের পর্যায়ক্রমে বিদেশে চাকরি দেয়া হবে। অনগ্রসর জেলা হিসেবে এই দুই জেলায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তারা গৃহস্থালি কাজ থেকে শুরু করে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে বিদেশে চাকরি পাবেন। এটা বাস্তবায়ন হলে কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে জাতীয় অর্থনীতিতে তারা অবদান রাখতে পারবেন। ২০১৬ সালে কুড়িগ্রাম থেকে ৭০ হাজার যুব ও যুব মহিলা বিদেশে যেতে পারবেন। কুড়িগ্রামের কৃষ্ণপুরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অধুনালুপ্ত ছিটমহল থেকে জর্দানগামী যুব মহিলা গার্মেন্টস কর্মীদের জন্যও একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে যুব ও যুব মহিলারা নিজে যেমন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবেন, একই সঙ্গে তাদের সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদাও বৃদ্ধি পাবে। যুব মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিনা খরচে জর্দানে পাঠানো হবে। প্রতি দুই মাসে ৪০ জন করে যুব মহিলাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে বিদেশে পাঠানো হবে। একইভাবে ২০১৬ সালে নীলফামারী জেলায় ২০ হাজার যুব ও যুব মহিলা বিদেশে যেতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে অনগ্রসর জেলাগুলোতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাড়ানো হবে। যাতে সারাদেশে সমানভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়। সূত্র জানিয়েছেন, জনশক্তির বাজার তৈরি করতে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। কর্মীদের বিদেশী ভাষায় পারদর্শিতা, প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক এ্যাক্রিডিটেশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এ্যাফিলিয়েশন করা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার আলোকে বিদ্যমান কোর্স কারিকুলামকে নিয়মিত আপগ্রেড করা, বেসরকারী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত প্রশিক্ষণের মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখার জন্য নিয়মিতভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়েছে মন্ত্রণালয়। কর্মীরা দক্ষতা অর্জন করলে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকেই কর্মী নেবে। তখন আর জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে কোন বেগ পেতে হবে না। এদিকে নারী কর্মীদের বিদেশে সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ দিয়েছে। কারণ বিভিন্ন সময় নারী কর্মীরা মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শূন্যহাতে দেশে ফিরে আসছেন। এমন ঘটনা যাতে না হয় তার জন্য নারী কর্মীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ন্যাশনাল এ্যালাইন্স ফর মাইগ্রেশনস রাইটস বাংলাদেশ এমন দাবিতে ইতোমধ্যে সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। এ সংগঠনটি বিদেশে যেসব নারীকর্মী গিয়েছেন এবং যাবেন তাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বিশেষ করে এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যারা কর্মী হিসেবে যাচ্ছেন তাদের অধিকার রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজর রাখার জন্য আহ্বান জানায়। অভিবাসীদের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকার নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। কর্মীরা এখন আর আগের মতো প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না। সরকার জনশক্তি রফতানিকারকদের দক্ষতা, প্রশিক্ষণের জন্য গাইডলাইন তৈরি করেছে। এই গাইডলাইনের বাইরে কারও কোনকিছু করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে মহিলা কর্মীদের বিদেশে সুরক্ষা দেয়ার বেলায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার সুপারিশ নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। এই গাইডলাইনে নারী কর্মীদের সুরক্ষা বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে। বিএমইটির সামসুন্নাহার বলেন, গৃহকর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ২১ দিনের পরিবর্তে ৪২ দিন করা হযেছে। এতে মহিলা কর্মীরা অনেকাংশে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠছেন। একই সঙ্গে তারা নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন। এখন বেশিরভাগ কর্মী নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই বিধান করতে সক্ষম হচ্ছেন। এখন আর আগের মতো অভিযোগ আসে না। যেসব অভিযোগ আসছে তার ৯০ শতাংশ বিএমইটিই সমাধান করে দিচ্ছে। বিএমইটি আশা করছে, বিভিন্ন সামাজিক ও সরকারী সংস্থার সহযোগিতা বাড়লে বিদেশে নারী কর্মীরা ভাল থাকবেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নারী কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা দিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছে। বিদেশে কর্মরত অবস্থায় তাদের মোবাইল ফোন রাখার সুযোগ করে দেয়া হবে। নারী কর্মীরা যে কোন অসুবিধায় দূতাবাস বা হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। তাছাড়া আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গেও যাতে তারা সহজেই কথা বলতে পারেন এ বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। যে সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নারীকর্মী নিয়োগ হবে ওই সব নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হবে। উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি প্রবাসী কর্মীর কল্যাণের গুরুদায়িত্ব ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের। ভবিষ্যতে কর্মীদের দ্রুততম সময়ে এবং স্বচ্ছ উপায়ে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বোর্ড কর্মীদের কল্যাণে কাজ করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী। প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানটিকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রবাসী কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প যেমন- প্রবাসী পল্লী, হাসপাতাল বোর্ডের অধীনে বিশেষায়িত বীমা কোম্পানি, প্রত্যাগত কর্মীদের কর্মসংস্থানে প্রকল্প, বিদেশ গমনের আগে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনসহ নানামুখী সেবা নিশ্চিত করবে।
×