ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিবর্তন

আজ যা স্বপ্ন, কালই তা বাস্তব- বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

আজ যা স্বপ্ন, কালই তা বাস্তব- বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট

সমুদ্র হক যুগের সঙ্গে প্রযুক্তির সমান্তরাল বিবর্তনের পালায় এখনই চোখের সামনে ভেসে ওঠেÑ শিক্ষার্থীদের পিঠে ভারি বই-খাতার ব্যাকপ্যাক (পিঠে ঝুলানো স্কুল ব্যাগ হিসেবে পরিচিত) আর নেই। প্রতিস্থাপিত হয়েছে একটি নেটবুক অথবা ট্যাবে। যেখানে শিক্ষার্থীদের এমন কোন বই-খাতা নেই, যা মিলবে না। শিক্ষাঙ্গনের ক্লাসরুমে দেখা যাবে না ৫ আসনের হাইবেঞ্চ ও বেঞ্চ। ওই স্থানে দেখা যাবে এক বা দুই আসনের ডেস্ক টেবিল। তার ওপর বই খাতার বদলে নেটবুক বা ট্যাব। ক্লাসরুমে ব্লাকবোর্ড বা হোয়াইট বোর্ড থাকবে ঠিকই, তবে চক বা মার্কার পেন দিয়ে তাতে লেখা হবে কালেভদ্রে। শিক্ষকগণ মূল পাঠ দেবেন ল্যাপটপের সঙ্গে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে সংযোগ ঘটিয়ে পর্র্দায় ছবি ও লেখা প্রতিফলনের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীরা নোট নেবেন লেকচার স্মার্টফোনে রেকর্ড করে। তারপর ঘরে গিয়ে পাঠ চর্চা করবেন। এভাবে শিক্ষাগ্রহণের পালায় বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিজেরাই সফটওয়্যার বানিয়ে আগামী দিনের পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাবে দূর-বহুদূর। উল্লিখিত বর্ণনা কোন স্বপ্ন নয়, কল্পনাও নয়। এখনই রাজধানী ঢাকাসহ মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়ায় পাঠ গ্রহণ শুরু করেছে। যদিও প্রতিটি স্কুলে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর পৌঁছেনি, তবে দ্রুত তা পৌঁছে যাবে। বর্তমানে যা পৌঁছেছে তা দিয়েই পাঠদান হচ্ছে। প্রত্যেক জেলায় একজন করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যিনি শিক্ষার দায়িত্বের সঙ্গে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) দায়িত্ব পালন করছেন। যিনি জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে মাঠপর্যায়ে আইসিটির উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষায়তনগুলোতে মাল্টিমিডিয়া স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি সরকারী স্কুলে মাল্টিমিডিয়ায় পাঠদান শুরু হয়ে ২০২১ সালের পর কোন স্কুলে আর এ্যানালগ ও ম্যানুয়াল পদ্ধতির পাঠদান থাকবে না। দৃশ্যপট সম্পূর্ণ পাল্টে যাচ্ছে অতি দ্রুত। ডিজিটাল কার্যক্রমে প্রথম পাইলট প্রকল্প চালু করা হয় যশোরে। সাফল্য অর্জনের পর প্রতিটি জেলার প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়া হয়। বগুড়া জেলা ডিজিটাল প্রযুক্তির সার্বিক চিত্রে এগিয়ে রয়েছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি ব্যক্তি ও গোষ্ঠী উদ্যোগে ডিজিটাল সকল কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বগুড়ার ৩শ’ ৫০টি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু হয়েছে। শীঘ্রই আরও ৫শ’টি ক্লাসরুম চালু হবে। বগুড়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক লাখ শিক্ষার্থীকে আইসিটি শিক্ষায় দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। ডিজিটাল কর্মসূচীর বিস্তারে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুফিয়া নাজিম বড় ভূমিকা রেখেছেন। মাঠপর্যায়ে গিয়ে তিনি নিয়মিত তদারকি করেন। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম নিয়মিত ঠিকমতো চলছে কিনা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নতুন ধারায় পাঠদান এবং পাঠগ্রহন করতে পারছেন কিনা, তা আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন। এ বিষয়ে এডিসি সুফিয়া নাজিম জানালেন, বর্তমানের শিশু-কিশোররা এতটাই মেধাবী যে একবার দেখিয়ে দিলেই তা বুঝে নিয়ে ও ধারণ করে নিজেরাই বাকি পাঠ এগিয়ে নেয়। উদাহরণ দিলেন এভাবেÑ বিশ্বের প্রত্যেক শিশু এক শ’ বিলিয়ন নিউরন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তিন বছরের মধ্যে মস্তিস্কে সর্বাধিক বিকাশ ঘটে ৮০ শতাংশ। ৫ বছরে ৯০ শতাংশ। ৮ বছরে ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ। বাকি দুই থেকে ৫ শতাংশের বিকাশ ঘটে সারাজীবনে। শিশুদের সার্বিক পরিচর্যা ঘটিয়ে এবং প্রযুক্তির সংস্পর্শে এনে আগামী পৃথিবীর জন্য তৈরি করার সময় এসেছে। বগুড়ায় তথ্যপ্রযুক্তির এ অগ্রযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বগুড়ায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে বগুড়াকে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে পরিণত করা হবে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্কে এক লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। প্রজন্মকে আইসিটিতে দক্ষ করে তুলতে দেশজুড়ে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে এর সঙ্গে ভাষা শিক্ষার ল্যাব স্থাপিত হচ্ছে। আরেক সূত্রের খবর, দেশের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তাদের কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার প্রশিক্ষণ দেবে বিশ্বের বড় প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ্যাকসেস টু ইনফর্মেশনের (এটুআই) সঙ্গে এমওইউ চুক্তি হয়েছে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন মাইক্রোসফট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মার্কেটিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মিশেল সিমন্স ও বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সোনিয়া বশির। প্রশিক্ষণের পর ডিজিটাল সেন্টারগুলো সরাসরি সার্ভিস সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেবা দেবে। বগুড়ার এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) সুফিয়া নাজিম জানালেন, আগামী এক বছরের মধ্যে সরকারের সকল ই-সেবা জনগণের দুয়ারে পৌঁছে যাবে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ই-সেবা জনগণের নাগালের মধ্যে এসেছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, শিক্ষক বাতায়ন, মুক্তোপাঠ কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকগণকে ডিজিটাল পাঠদানের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা প্রদানের উদ্যোগসমূহ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রমের সফলতার মডেল বিভিন্ন দেশ বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। সার্কভুক্ত মালদ্বীপ ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। দেশের ডিজিটাল কার্যক্রমের দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টাচ্ছে। একদার দৃশ্যপট ছিল এ রকমÑ শিশুবেলায় পাটখড়ি হতো স্লেট পেন্সিলে। ফাউন্টেন (ঝর্ণা) কলমে কালি ভরে লিখা হতো। কেউ বাঁশের কঞ্চির ও বড় পাখির পালকের সামনে কলমের নিবের মতো করে ছেঁটে বড়ি পানিতে গুলিয়ে কালি বানিয়ে তাতে চুবিয়ে লিখত। এরপর এলো বলপেন। আগে বই-খাতা-পেন্সিল নিয়ে স্কুলে যেতে হতো। ব্যাকপ্যাক ছিল না। ক্লাসরুমে ছিল ব্লাকবোর্ড ও চক। আজ তা নিকট অতীত।
×