ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে কর্মবিরতিতে ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

চট্টগ্রামে কর্মবিরতিতে ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বেসরকারী হাসপাতালে কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন চিকিৎসকরা। শুক্রবার এ কর্মসূচীর তিন দিন অতিবাহিত হয়েছে। লাগাতার এ কর্মসূচীর কারণে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। চেম্বারে প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ থাকায় সেবাবঞ্চিত রোগী ও স্বজনরা রয়েছেন চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে। এদিকে, প্রাইভেট চিকিৎসা বন্ধ থাকায় ভিড় বেড়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারী হাসপাতালগুলোতে। সেখানে রোগী সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা। শুক্রবারও বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ছিল একপ্রকার বন্ধ। হাসপাতালগুলো ছিল ডাক্তারশূন্য। প্রথম দু’দিনের মতো তৃতীয় দিনেও অনেক রোগী এসে ফিরে যান। শুধু চিকিৎসাই নয়, প্রাইভেট প্রাকটিসও বন্ধ থাকায় সমস্যা উঠেছে চরমে। এ নিয়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে দুর্ভোগের পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভেরও। চিকিৎসকদের এ কর্মসূচীতে তারা দেখছেন রোগীকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের অপকৌশল হিসেবে। চট্টগ্রাম নগরীর মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় অনেক বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক থাকায় এলাকাটি বছরের প্রতিটি দিনই চিকিৎসক ও সেবাগ্রহীতাদের বিচরণে সরগরম থাকে। কিন্তু গত তিন দিনের চিত্র ঠিক উল্টো। সাধারণ ওয়ার্ড থেকে ফিরে গেছেন অনেক রোগী। আর নতুন রোগীরা ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন ডাক্তার না থাকায়। বিকেলে বিভিন্ন চেম্বারে যে প্রাইভেট প্রাকটিসের রেওয়াজ প্রচলিত ছিল সেটিও বন্ধ। এতে করে আকস্মিক রোগাক্রান্ত মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও সেবা বন্ধ থাকায় অনেকেই তাদের রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারছেন না। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মে যোগ দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। প্রাইভেট প্রাকটিসও বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচী চলবে। তবে জরুরি সেবার জন্য হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ও সিসিইউতে কাজ করছেন চিকিৎসকরা। তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ শনিবার সকালে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। এদিকে, প্রাইভেট প্রাকটিস ও বেসরকারী হাসপাতালে সেবা বন্ধ থাকায় চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের সকল ছুটি বন্ধ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বেসরকারী পর্যায়ে সেবা বন্ধ থাকায় সরকারী হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ বেড়েছে। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের ভিড় অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি দেখা যায়। সাধারণ রোগীর চেয়েও বেশি দেখা যায় বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে আসা রোগী। চিকিৎসা না পেয়ে তারা বেসরকারী হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে সরকারী হাসপাতালে আসছেন। হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চমেক হাসপাতালের ওপর পড়েছে বাড়তি চাপ। সিট স্বল্পতার কারণে এমনিতেই ফ্লোরে রাখতে হয় অনেক রোগীকে। এখন রোগীর সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, ওয়ার্ড ছাড়িয়ে বারান্দা পর্যন্ত বেড ফেলতে হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগীরা চিকিৎসকদের এহেন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, রোগীদের জিম্মি করে এভাবে দাবি আদায়ের কৌশল মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। চিকিৎসার মতো মহান পেশায় থেকেও ডাক্তাররা রোগীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারী সার্জিস্কোপ হসপিটালে গত ৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন মেহেরুন্নেসা নামের এক প্রসূতি। সিজার করে সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। তিনি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছোট ভাই খায়রুল বশরের কন্যা। চিকিৎসকের অবহেলায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ মৃতের পরিবারের। এর জন্য প্রধানত হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাহবুবুল আলম ও ডা. শামীমা রোজীকে দায়ী করেন মৃতের স্বজনরা। ক্ষুব্ধ স্বজনরা সেদিন ওই হসপিটালে ভাংচুরও করেন। সিএমপির পাঁচলাইশ থানায় এ ব্যাপারে সার্জিস্কোপ হসপিটালের ডা. মাহবুবুল আলম, ডা. শামীমা রোজী ও ডা. রানা চৌধুরীকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে ডা. রানার বিরুদ্ধে অপারেশনের পর রোগীর পেটে ব্যান্ডেজ রেখে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। আর এই মামলা দায়েরের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় চিকিৎসক মহলে। এর জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের।
×