ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পিডিবি কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে সরে এসেছে সরকার

নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত বিতরণের জন্য গঠিত নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রাজশাহী এবং রংপুর অঞ্চলের বিদ্যুত বিতরণে পৃথক এই বিতরণ কোম্পানি গঠন করা হয়। কিন্তু বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে কোম্পানি পরিচালনা থেকে সরে এসেছে বিদ্যুত বিভাগ। শুক্রবার বিকেলে কোম্পানির কার্যক্রমের অবস্থা বিষয়ে জানতে চাইলে নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম কিছু বলতে পারেননি। সরকার কোম্পানিটির কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এমন খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলন, আমি ভাল-মন্দ কিছুই জানি না। আপাতত কোন বিষয়ে কোন অগ্রগতির খবর আমাকে বলা হয়নি। বিদ্যুত বিভাগ গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কোম্পানিটির অনুকূলে সব সম্পত্তি হস্তান্তরের নির্দেশ দিলে আন্দোলনে নামে পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ঢাকা এবং রাজশাহী-রংপুর অঞ্চলে একই সঙ্গে আন্দোলন শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার দাবি জানান। পর্যায়ক্রমে পিডিবিকে বিতরণ থেকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। রংপুর-রাজশাহী, ময়মসিংহ-টাঙ্গাইল এবং সিলেট এবং চট্টগ্রাম এলাকায় পৃথক বিতরণ কোম্পানি করে বিদ্যুত সরবরাহ করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায় বিদ্যুত বিভাগ। এই প্রক্রিয়ার প্রথমে রংপুর এবং রাজশাহী অঞ্চল নিয়ে নতুন এই কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বিদ্যুত খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে দাতাদের পরামর্শে সরকার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। এতে বিতরণ ক্ষতি কমে লোকশান হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার বিতরণ বিদ্যুতের বিতরণে কোন ভর্তুকি দিতে চায় না। পর্যায়ক্রমে বিতরণের সকল পর্যায় থেকে ভর্তুকি তুলে নেয়া হবে বলে বিদ্যুত বিভাগ জানিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, দাতারা বিদ্যুত খাত সংস্কারের জন্য চাপ দিচ্ছে। সাম্প্রতিক বৈঠকেও বিশ্বব্যাংক পিডিবির সংস্কার করার বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে বলেও জনকণ্ঠকে জানান তিনি। সরকার সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন না করলে বিদ্যুত খাতে আর্থিক সহায়তায় প্রভাব পড়তে পারে বলে জানান তিনি। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সঙ্গে পিডিবির শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের পর তিনি হবে। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি ক্লাস বর্জন, ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করবেন শিক্ষকরা। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতার কর্মবিরতি। শুক্রবার সকালে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) বসে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভা। সভা হলেও সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সভা পরিণত হয় সমাবেশে। কয়েক হাজার শিক্ষক এতে অংশ নেন। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন বেগমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মহাসচিব মোঃ আই কে সলিমুল্লাহ খন্দকার, শিক্ষক নেতা সাহেদুল খবীর চৌধুরী, মাসুদা বেগম, ফজলে রাব্বী প্রমুখ, আবদুল হান্নান খন্দকার, কালাচাঁদ শীল, শফিকুল ইসলাম, ফারুক এ আজম, শাহ আলমগীর, নেছাওয়ার মিয়া, আবুয়াল কায়ছার, মো. আসাদুজ্জামান, মোঃ ইদ্রিস আলী প্রমুখ। সূচনা বক্তব্যে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, চলমান আন্দোলন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ও এর গতিপ্রকৃতি বর্ণনা করা হয়। তারা অভিযোগ করেন, বেতন বৈষম্য নিরসনে গঠিত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা হয়নি। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহালেরও কোন পদক্ষেপ নেই। সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের অনুমোদিত ১৯৮৩ সালের এনাম কমিটি ও ১৯৮৭ সালের সমীক্ষা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পদ সৃষ্টি না করায় অনার্স-মাস্টার্সে পাঠদানকারী সরকারী কলেজসমূহ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, পাশাপাশি শিক্ষকদের পদোন্নতির সঙ্কটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, সকল যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অষ্টম বেতন কাঠামোতে সরকারী কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে মন্তব্য করে শিক্ষকরা বেতন বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সাড়ে ১৫ হাজার সদস্যের মর্যাদা ও বেতন সমুন্নত রাখার দাবি জানান। শিক্ষক নেতারা আরও বলেছেন, সারাদেশে পে স্কেল নিয়ে ব্যাপক আন্দোলনের মধ্যেই বৈষম্য নিরসন কমিটি করা হলো। সকলে আশা করেছিলেন অবশ্যই শিক্ষকদের বৈষম্যের অবসান হবে। কিন্তু তার কোন প্রতিফলন দেখা গেল না। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে বলেও হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষকরা। শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিকে বিবেচনায় না এনে অধ্যাপক পদের বেতন স্কেল ও গ্রেড অবনমন করা হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকসহ র্শিক্ষা ক্যাডারের সকল স্তরের বেতন বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজার সদস্য এটি উপভোগ করতে পারছে না। প্রাপ্য মর্যাদায় উন্নীত না করে স্কেল ও পদ অবনমনে শিক্ষকরা মর্মাহত। এর আগে ২২ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বেতনবৈষম্য নিরসন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের জন্য সরকারকে চূড়ান্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সংগঠনটির নেতারা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ৪ ও ৫ জানুয়ারি পূর্ণদিবস কর্মবিরতিরও ঘোষণা দেয়া হয়েছিল সংবাদ সম্মেলন থেকে। সেই ঘোষণা অনুযয়ী দুদিন কর্মবিরতি পালন করেন সকল সরকারী কলেজ, সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ১৫ হাজার ২৮৯ জন বিসিএস শিক্ষক ও কর্মকর্তা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষাসমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলছিলেন, শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী এ সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
×