ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বই পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত রমনা বটমূল

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

বই পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত রমনা বটমূল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃক্ষরাজির ছায়াঘেরা সবুজের আঙিনা রমনা উদ্যান যেন আরও শোভাময় হয়েছিল শুক্রবার। এদিন বই পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় জমিয়েছিল নাগরিক জীবনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছড়ানো পার্কটিতে। আগামীর ভবিষ্যৎ এ খুদে নাগরিকদের প্রাণের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হলো রমনা বটমূল। উপলক্ষ ছিল বই পড়ে পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদান। পাঠ্যবইয়ের বদলে মননশীল বই পড়ে পুরস্কারপ্রাপ্তির সুবাদে আনন্দের মাত্রাটাও ছিল অনেক বেশি। পুরস্কারটি তারা গ্রহণ করে তাদেরই প্রিয় দুই মানুষ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাত থেকে। শুক্রবার সকালে বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম অর্থাৎ বইপড়া কর্মসূচীর দুই দিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণী উৎসব শুরু হয়। উৎসবে সহযোগিতা করেছে গ্রামীণফান। বটমূলে বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে অতিথিদের নিয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশ্বাসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, নন্দিত কথাশিল্পী ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, নাট্যজন মামুনুর রশিদ, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, কথাশিল্পী আনিসুল হক প্রমুখ। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, তোমরা কখনও ভেঙে পড়বা না। তোমাদের ভেঙে না পড়ার শিক্ষা দেবে বই। বই পড়লে দুঃখ এড়ানো যায়। ফেসবুক, টুইটার কখনোই বইয়ের স্থান নিতে পারবে না। এগুলো হালকা জিনিস, মানুষ এগুলোর কাছে গেলেও আবার বইয়ের কাছে ফিরে আসবে। তিনি আরও বলেন, বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের কাজ হলো ‘অপাঠ্য’ বই পড়ানো। শ্রেণীকক্ষে তোমরা যে বই পড়, তার বাইরের বইকেই অপাঠ্য বই বলা হয়। আমরা বলতাম ‘আউট বই’। পাঠ্যবই তোমাকে নানা কিছু শেখাবে, কিন্তু সে শেখার মধ্যে একটা অপূর্ণতা রয়েছে। অপাঠ্য বই তোমদের দেবে সেই পূর্ণতা। জীবনের পূর্ণতার জন্য সৃজনশীল বই পড়তে হবে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্তকে শিশু-কিশোরদের বন্ধু উল্লেখ করে বলেন, বিশে^র যত বড় বড় লেখক আছে তারা তোমাদের বন্ধু। কারণ তোমরা তাদের বই পড়। তাঁদের বই পড়ার মাধ্যমেই তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর আমি এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। শত ব্যস্ততা থাকলেও ছুটে আসি তোমাদের মাঝে। এবার এসে আমার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। আমি দেখতে পাচ্ছি, সামনে সবাই মেয়ে। ছেলেরা কোথায়? তাহলে কী ছেলেরা বই পড়ে না? ছেলে-মেয়ে উভয়েরই বই পড়তে হবে। এবার পুরস্কারপ্রাপ্তদের ৫৭ শতাংশই নাকি মেয়ে। ছেলে-মেয়ে সমান সমান হলে আমি খুশি হবো। কেননা ছেলে-মেয়ে উভয়ে এগিয়ে এলে, দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন হবে। বই পড়ুয়াদের উদ্দেশে জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, বইপড়ার লাভ হচ্ছে এতে জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। মনের ভিত্তি শক্ত হয়। এর ফলে যে কোন সঙ্কট মোকাবেলা সহজ হয়। তাই বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের ফেসবুক, টুইটারসহ ইন্টারনেটের বিপজ্জনক দিকগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি। এজন্য অভিভাবকদেরও সচেতন হতে বলেন। ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বই হলো আলোর কারখানা। তোমরা যারা বই পড় তারাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। তোমাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশ আলোকিত হবেÑ এটাই আমার বিশ^াস। ঢাকা মহানগরীর বইপড়া কর্মসূচীর এ পুরস্কার বিতরণী উৎসবের তিনটি পর্বে ১১৫টি বিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৪৭১ শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার সকালের প্রথম পর্বে ৫১টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার ২০১ শিক্ষার্থী পুরস্কার নিয়েছে। বিকেলের পর্বে পুরস্কার গ্রহণ করেছে ৩৩টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার ১৪৯ শিক্ষার্থী। আজ শনিবার বিকেলে তৃতীয় পর্বে ঢাকা মহানগরীর ৩১টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার ১২১ শিক্ষার্থী পুরস্কার গ্রহণ করবে। শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে ছাপচিত্র প্রদর্শনী ॥ গ্যালারি শিল্পাঙ্গন ও কিবরিয়া প্রিন্ট মেকিং স্টুডিও যৌথ আয়োজনে শুক্রবার শুরু হলো ‘সমকালীন ছাপচিত্র’ শীর্ষক পক্ষকালব্যাপী প্রদর্শনী। সন্ধ্যায় ধানম-ির গ্যালারি শিল্পাঙ্গনে গুণীশিল্পীদের মিলিত আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধক ছিলেন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারর্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও আনিস এ আহমেদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এমএ রহমান। সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। প্রদর্শনী বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন চারুকলা অনুষদের ডিন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন ও কিবরিয়া প্রিন্ট স্টুডিওর পক্ষে শিল্পী ফারিহা জেবা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্যালারি শিল্পাঙ্গনের পরিচালক রুমী নোমান। ১৫ দিনের প্রদর্শনীটি সাজানো হয়েছে বাংলাদেশের বরেণ্য ছাপচিত্র শিল্পীদের পাশাপাশি দুই বাংলার উদীয়মান বেশ কয়েকজন শিল্পীর ছাপচিত্র দিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের মোহাম্মদ কিবরিয়া, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, হামিদুজ্জামান খান, আবদুশ শাকুর শাহ, বীরেন সোম, কালিদাস কর্মকার, সৈয়দ আবুল বারাক আলভী, শহীদ কবির, ফরিদা জামান, মোহাম্মদ ইউনুস, রোকেয়া সুলতানা, ঢালী আল মামুন, সাঈদুল হক জুসি, ওয়াকিলুর রহমান, শিশির ভট্টাচার্য প্রমুখ। ভারতের শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন কে জি সুবহ্মণ্যন, সনৎ কর, নির্মলেন্দু দাস, অজিত শীল, সলিল সাহানী প্রমুখ। তাদের পাশাপাশি স্টুডিও আয়োজিত দুই দিনের কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত ছাপচিত্রও ঝুলছে গ্যালারি দেয়ালজুড়ে। উদ্বোধনী পর্বে বক্তারা বলেন, ‘দেশের অগ্রগণ্য চিত্রশালা শিল্পাঙ্গন গ্যালারি উদ্যোগে এ ছাপচিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ছাপচিত্র বিষয়ে যে বিশেষ আগ্রহ ও অনুরাগের বহির্প্রকাশ ঘটেছে, তা দীর্ঘ শিল্পবোদ্ধাদের স্মৃতিতে জাগরূক থাকবে। প্রদর্শনী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিল্পানুরাগীদের জন্য খোলা থাকবে। আসেম আনসারীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ॥ সবুজ অরণ্যের গাছ-গাছালি ভেদ করে পড়েছে পড়েছে চাঁদের আলো। পাশেই নৌকায় অর্ধ অনাবৃত তিন নারী। চাঁদের আলোয় ¯œান করছে নারীত্রয়। আরেকটি চিত্রকর্মে দেখা গেল মধ্য দুপুরে নদীর জলে ঝাঁপাঝাঁপি করছে একঝাঁক ছেলে-মেয়ে। এ দুরন্তপনা অবলোকন করছে আরেকটি ছেলে। এ ছবি দু’টি এঁকেছেন চিত্রশিল্পী আসেম আনসারী। এ শিল্পীর আঁকা ৩৪টি চিত্রকর্ম নিয়ে ধানম-ির গ্যালারি চিত্রতে শুরু হলো প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘লেস ইজ মোর’। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পূবালী ব্যাংক লিমিটেড ও ড্রেসম্যান ফ্যাশনওয়্যারের আজিজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্যালারি চিত্রকের পরিচালক চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান। শিল্পীর আঁকা ছবিগুলো যেমন প্রকৃতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। তেমনি কিছু রোমান্টিক মুহূর্ত। আছে গ্রামীণ লোকাচার ও জীবনাচরণ। মায়াবী রাতে চাঁদের আলোয় বেশকিছু মূর্ত-বিমূর্ত ধারা দৃশ্যও তুলে ধরেছেন ক্যানভাসে। আছে নিঃসঙ্গ ঈগলের ওড়াউড়ি, হাঁসের সাঁতার, প্যাঁচা, সাঁতার কেঁটে ঘোড়া পারাপার, এক পাল মহিষের নদী পারাপার আরও অনেক কিছু। তবে বেশিরভাগ ছবিতে প্রকাশ পেয়েছে । জাবিতে এ্যালামনাই ডে মিলন মেলা ॥ জাবি সংবাদদাতা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী কর্মসূচীর সমাপনী দিনে গতকাল মহাসমারোহে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনাই ডে মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বরে প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম এ্যালামনাই ডে মিলন মেলা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, এ্যালামনাই ডে মিলন মেলায় সকলেই প্রাণের তাগিদে উপস্থিত হন। তিনি এ্যালামনাসদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বে মর্যাদাশীল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এ্যালামনাসদের সহযোগিতা কামনা করেন। এরপর বক্তব্য রাখেন এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ব্যাচের ছাত্র অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির। ড. শরীফ এনামুল কবির তার বক্তব্যে বলেন, এ্যালামনাই গঠন এবং এ্যালামনাসদের উপস্থিতি দেখে তিনি যারপরনাই আনন্দিত। এ্যালামনাই গঠনের তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা এখন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। এ্যালামনাসগণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় অবদান রাখবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাসদের সঙ্গে যেমন মিশে আছে, তেমনিভাবে এ্যালামনাসদের সঙ্গেও এ বিশ্ববিদ্যালয় মিশে আছে। এ বন্ধন অনন্তকাল বজায় থাকবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির। প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।
×