ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দারোগার কাণ্ড!

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

দারোগার কাণ্ড!

বাহাদুর দারোগা বটে! নিছক সন্দেহের বশে ব্যক্তিকে ধরেই ক্ষান্ত হননি, সরাসরি অভিযোগ করেছেন ইয়াবা সেবনকারী ও ব্যবসায়ী বলে। এটুকুও যথেষ্ট বলে বিবেচিত না হওয়ায় দেয়া হয় ক্রসফায়ারের হুমকি। আসল উদ্দেশ্য ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় তথা ব্ল্যাকমেইলিং। অকুস্থল রাজধানীর মোহাম্মদপুর। সংশ্লিষ্ট থানার এক এসআই বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তাকে এরূপ হেনস্থা করে। ওই ব্যক্তি রাত এগারোটার দিকে কল্যাণপুরে নিজের বাসায়। ফেরার পথেই অকস্মাৎ এক পুলিশ শার্টের কলার চেপে ধরে তার কাছে ইয়াবা থাকার অভিযোগ আনে। একপর্যায়ে টেনেহিঁচড়ে তোলে পুলিশ ভ্যানে। এরপর চলে কিল-ঘুষিসহ পুলিশের নির্যাতন তথা লাঠিপেটা। থানায় নিয়ে এসআই সাহেব দাবি করেন মোটা অঙ্কের অর্থ। না দিলে হুমকি দেয়া হয় ক্রসফায়ারের। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শুরু হয় রাইফেল ও লাঠির বাঁট দিয়ে পেটানো এবং একেক করে পোশাক খুলে ফেলার মহড়া। নেপথ্যে অকথ্য গালিগালাজ ও বকাঝকা তো আছেই। তবে শেষ পর্যন্ত শেষরক্ষা হয়নি। বাঘের ঘরে ঘোঘের বাসা বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। অহেতুক অপবাদে ধৃত ব্যক্তিটি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগাযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের একজন কমকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র, তদুপরি একটি টিভি চ্যানেলের সাবেক সংবাদ উপস্থাপক। এসআইকে নিজের পরিচয় দেয়ার পরও তিনি তা গ্রহণ করেননি। একেই বুঝি বলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা। ঘটনার পরদিন ব্যাংক কর্মকর্তা ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ঘটনার পূর্বাপর জানিয়ে। পরে অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে ওই এসআইকে প্রথমে তেজগাঁও কার্যালয়ে এবং পরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ক্লোজড দেখানো হয়। এখানে সঙ্গত কারণেই একটি প্রশ্ন উত্থাপন করা স্বাভাবিকÑ পুলিশের এই ‘ক্লোজড’ বিষয়টি আদৌ কোন শাস্তি কি না! অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যে কোন ঘটনা ধামাচাপা দিতেই যেন পুলিশের এই ‘ক্লোজড’ নাটকের মহড়া। তারপর পরিস্থিতি থিতিয়ে এলে আবার অভিযুক্তকে পোস্টিং দেখানো হয় অন্যত্র, অন্য কোন থানায় অথবা অন্য কোন দায়িত্বে। বাস্তবতা হলো, যে পুলিশ কর্মকর্তাটি কথায় কথায় কাউকে ধরেই ইয়াবা ব্যবসায়ী, সেবনকারী অথবা অন্য কোন অভিযোগ আনেন, ৫৪ ধারার ভয় দেখান, সর্বোপরি হুমকি দেন ক্রসফায়ারের, তার হাতে অস্ত্র ও আইন কোনটাই নিরাপদ নয়। ৫৪ ধারা নিয়ে অতীতেও অভিযোগ উঠেছে। দাবি উঠেছে এটি বাতিলের। বাস্তবে কোন অগ্রগতি হয়নি। দেখা যাচ্ছে, এর অপপ্রয়োগ হয়েই চলেছে। সর্বশেষ ব্যাংক কর্মকর্তা ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং মোহাম্মদপুর থানা এ বিষয়ে এখনও কোন মামলা নেয়নি। পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমূর্তি নিয়ে প্রায়ই লেখালেখি ও বলা হয়ে থাকে। সত্য বটে, সীমিত সুযোগ-সুবিধা ও জনবল ঘাটতি নিয়েও পুলিশ যথাসাধ্য তাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছে। সার্বিকভাবে রাজধানী ঢাকা ও সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি ভালই বলতে হবে। এরমধ্যেই ‘হংস মধ্যে বক যথা’ জাতীয় দু-চারজন পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয় পুলিশের ভূমিকা। মোহাম্মদপুর থানার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয়ার পরও যেখানে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। আশার কথা এই যে, শক্তিশালী গণমাধ্যম নিয়মিত ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করায় আগের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পুলিশ বিভাগের অভ্যন্তরেও জোরালো দাবি উঠেছে সংস্কারের। প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের মামলা উল্লেখ করা যায়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যের বিচার হচ্ছে। পুলিশকে যথার্থ অর্থে ‘জনগণের বন্ধু তথা সেবক’ হয়ে উঠতে হলে এই বিষয়টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করতে হবে নীতি-নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মনোভাব।
×