ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে একযোগে সম্প্রচার করা হয়। নিচে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ ছাপা হলো:

দেশবাসীর সহযোগিতা চাই

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

দেশবাসীর সহযোগিতা চাই

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজ ১২ জানুয়ারি। ২০১৪ সালের এই দিনে আপনাদের সমর্থনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমি আপনাদের দো’য়ায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করি। আমরা টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে ইতোমধ্যে জনগণকে দেয়া ওয়াদা পূরণে উন্নয়ন কর্মকা- ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি। সরকারের দ্বিতীয় বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি ৩ নবেম্বর জেলখানায় নিহত জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, স্বজন হারানো পরিবার ও একাত্তরে নির্যাতিত ২ লাখ মা-বোনদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা। গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, আমার তিন ভাই ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের শেখ রাসেল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা ও রোজী, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র সহোদর শেখ নাসের, বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিলসহ সেই রাতের সকল শহীদকে। স্মরণ করছি, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ শহীদ ২২ নেতা-কর্মীকে। স্মরণ করছি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নির্মম হত্যাকা-ের শিকার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজউদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে। দশম সংসদের যে সকল সংসদ সদস্য ইন্তেকাল করেছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। প্রিয় দেশবাসী, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে যে ঘৃণ্য ও পৈশাচিক সন্ত্রাস চালায় তা কোনদিন বিস্মৃত হওয়ার নয়। তাদের এই নৃশংসতা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হায়েনা ও তাদের দোসরদের নির্মমতার সঙ্গেই কেবল তুলনা করা যায়। জামায়াত-বিএনপি জোটের সহিংসতায় যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। আহতদের জন্য আন্তরিক সহানুভূতি। প্রিয় দেশবাসী, বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমার শিকার হয়ে নিরীহ বাসড্রাইভার, বাস-টেম্পো-সিএনজি যাত্রী, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ-বিজিবি-আনসার, সেনাবাহিনীর সদস্য, এমনকি স্কুলের শিক্ষক ও শিশুও নিহত হয়েছেন। অনেকে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন, জীবনের তরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। সন্ত্রাস বোমাবাজি উপেক্ষা করে সেদিন আপনারা গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্ব সহ্য করতে পারে না। মানুষ শান্তিতে থাকবে, হাসি মুখে জীবনযাপন করবে তা ওদের সহ্য হয় না। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোলমডেল, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা যখন বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ডিজিটাইজেশন, এমডিজির লক্ষ্যসমূহ অর্জন, জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও পুরস্কারে ভূষিত করছে, তখনই ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি জামায়াত আবারও দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা শুরু করে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং বিএনপি নেত্রী আদালত হাজিরায় অনুপস্থিত থাকার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু করে সারাদেশে তা-ব ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পেট্রোলবোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হয়। ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ৭০টি সরকারী অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়। জনগণকে ভোগান্তিতে রেখে, অমানবিক কষ্ট দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করে বিএনপি নেত্রী নাটক করে ৬৮ জনকে নিয়ে আরাম আয়েশে ৯২ দিন অফিসে থাকেন। হত্যাযজ্ঞ ও তা-বের হুকুম দেন। তার এই সন্ত্রাসী কর্মকা- জনসমর্থন পায়নি। ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে নাকে খত দিয়ে বাড়ি ফিরে যান। আমি আপনাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই বিএনপি-জামায়াতের অনৈতিক অবরোধ কর্মসূচীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করায়। অগ্নি-সন্ত্রাসীদের আটক করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বিচার কাজ চলছে। যারা আপনাদের আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে, জানমালের ক্ষতিসাধন করেছে সেই অপরাধীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সহযোগিতায় দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন ছিল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, চরম খাদ্যাভাব। বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন. দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং পরের দুই বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমননীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বিপর্যস্ত, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। আমরা দায়িত্বভার গ্রহণ করে সবক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি। মানুষের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে আসে। সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে। সেভ দ্যা চিলড্রেন-এর মাতৃসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম, ভারতের ১৪০ এবং পাকিস্তানের ১৪৯তম। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস এ্যান্ড পিস-এর বিশ্বশান্তি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম, ভারতের ১৪৩তম এবং পাকিস্তানের ১৫৪তম। ইকোনমিস্ট-এর ইনটেলিজেন্স ইউনিট-এর গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৫তম আর পাকিস্তানের অবস্থান ১০৮তম। দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক তৃতীয় জাতিসংঘ বিশ্ব সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন: ‘দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে’। গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬.৫ শতাংশ। এর আগের ৫ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.২ শতাংশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। বিশ্বের খুব কম দেশই একটানা এত দীর্ঘ সময় ধরে ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। অচিরেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বিএনপি-জামায়াতের শেষ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। এখন বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে। ৫ কোটি মানুষ নিম্ন-আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। ২০০৬ সালে অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪.২ শতাংশ। তা এখন ৭.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান বেড়েছে। সরকারী ও বেসরকারীভাবে দেড় কোটি মানুষের চাকরি দিয়েছি। আমাদের সময়ে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪৮ জন কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০০৬ সালে রেমিট্যান্স আয় ছিল মাত্র ৪.৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫.২ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। রফতানি আয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াট। ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের সংখ্যা ১০০ অতিক্রম করেছে। ৪৪ লাখ সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছাব ইনশাআল্লাহ। ২০০৬ সালে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ছিল মাত্র ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৫ সালে গ্যাস উৎপাদন গড়ে দৈনিক ২ হাজার ৭২৮ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। ১৬টির কাজ চলছে। যোগাযোগ খাতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। মগবাজার-মালিবাগ উড়াল সেতুর নির্মাণ কাজ অচিরেই শেষ হবে। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। পদ্মা সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১.২% হারে অবদান রাখবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিল্প স্থাপনা বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মাওয়া, শিবচর ও জাজিরাকে ঘিরে আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তুলব। মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও কেরানীগঞ্জ জেগে উঠবে নতুন উদ্যমে। আমার সরকার নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক ৪-লেনে উন্নীত করেছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। নারায়ণগঞ্জের ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছি। অচিরেই জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হবে। ৪-লেন বিশিষ্ট দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতুর নির্মাণ কাজ এবং এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ইঁং জধঢ়রফ ঞৎধহংরঃ নির্মাণের মূল কাজ শুরু হবে। সচেতন দেশবাসী, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ আবারও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য-শস্য উৎপাদন হয়েছে। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে চতুর্থ। আমরা এখন চাল রফতানি শুরু করেছি। ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৪ শতাংশে এনেছিল। দেশের বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার ৭ বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ১৯২ কোটি বই বিতরণ করেছে। এ বছরের পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭২২টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। প্রাথমিক থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত ১ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপ-বৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকরি সরকারী করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে সহকারী শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে এবং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। যে সকল উপজেলায় সরকারী স্কুল ও কলেজ নাই সেখানে একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারী বা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ১৭২টি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ চালু করা হবে। প্রিয় দেশবাসী, স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। মানুষ বিনামূল্যে ৩২ পদের ওষুধ পাচ্ছেন। এ পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজারের বেশি ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়েছি। আরও ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হবে। ২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৬.৫ বছর, এখন বেড়ে হয়েছে ৭১ বছরের বেশি। শিশু ও মাতৃ-মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। নতুন ১১টি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ চালু করা হয়েছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ১ লাখ পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সব দরিদ্র পরিবারের মধ্যে এই কার্ড বিতরণ করা হবে। প্রিয় দেশবাসী, গত ৭ বছরে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। বাংলাদেশে এখন মোবাইল সিম গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি। ইন্টারনেট গ্রাহক ৫ কোটি ৭ লাখ ৭ হাজারের বেশি। আশা করছি ২০১৬ সালেই মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হবে। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর এবং যশোরে হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। বিভাগীয় শহরে সিলিকন সিটি স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়াই-ফাই-এর মাধ্যমে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া শুরু হয়েছে। ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল “তথ্য বাতায়ন” চালু করেছি যা আর্ন্তজাতিকভাবে পুুরস্কৃত হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারে এখন ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। থ্রীজি সেবা চালু করা হয়েছে। এবছরই ফোর জি চালু করা হবে। দেশের ৮ হাজার পোস্ট অফিসকে ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তরের কাজ এগিয়ে চলছে। রাশিয়ার সহায়তায় ১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প- রূপপুর পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। গত অর্থবছরে আইটি এবং আইটিএস খাত থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। সম্মানিত দেশবাসী, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করেছি। বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে বৃদ্ধি করেছি। ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেনসিটিভ বাজেট হচ্ছে। স্থানীয় সরকারে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। বাংলাদেশ এবারও লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদে নারীর অবস্থানের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম’ এর সম্মানসূচক ‘ডব্লিউআইপি ২০১৫’ পদক পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। বিরোধী দলকে ধন্যবাদ, তারা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিমত দিচ্ছেন, আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের ৬০ বছর করা হয়েছে। সামরিক-অসামরিক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি ও ব্যাপক পদোন্নতির সুযোগ করে দিয়েছি। জাতির পিতা প্রণীত ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আর্মড ফোর্সেস গোল- ২০৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে অত্যাধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদকে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং ইন্সপেক্টর পদকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও সশস্ত্রবাহিনীর ঝুঁকিভাতা দেয়া হচ্ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২৭টি পাটকল বন্ধ করেছিল। আমরা তা চালু করেছি। ৮ হাজার ৫০৭টি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে ভাতা দেয়া হচ্ছে। প্রায় ৪৭ লাখ ১৩ হাজার মানুষ বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। এজন্য বছরে প্রায় ২১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিয়েছে। হিজড়া, বেদে, হরিজন, দলিতসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চা শ্রমিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। প্রিয় দেশবাসী, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ছিল বাকস্বাধীনতা হরণের দেশ, সাংবাদিক নির্যাতনের দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের মিডিয়া এখন সম্পূূর্ণ স্বাধীন। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে সরকারের সমালোচনা করতে পারছে। সরকার নতুন বেসরকারী ৩২টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাসহ তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছি। সাংবাদিকদের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে গত বছরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুইয়েকে পরাজিত করেছি। আমাদের মেয়েরা এএফসি অনুর্ধ-১৪ ফুটবলে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। জাতীয় নারী ক্রিকেট দল জায়গা করে নিয়েছে আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। আমরা এমডিজি ১ থেকে ৬ অর্জন করেছি। বাংলাদেশ এমডিজি এ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ এ্যাওয়ার্ড এবং ওঞট-এর ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কার পেয়েছে। এমডিজির মতো আমরা জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করায় জাতিসংঘ আমাকে পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। প্রিয় দেশবাসী, এ সম্মান আমি আপনাদের উৎসর্গ করলাম। তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারের জন্য আইটিইউ আমাদের ‘ওঈঞং রহ ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ অধিৎফ ২০১৫’ প্রদান করেছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়েছে। ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ‘ইউনেস্কো ক্যাটাগরি-২ ইনস্টিটিউট’-এর মর্যাদা দিয়েছে । বাংলাদেশ ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। প্রিয় দেশবাসী, আমরা শান্তি এবং সহ-অবস্থানে বিশ্বাসী। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল বৈশিষ্ট্য “সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়”। এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন পথ রচনায় সক্ষম হয়েছি। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী স্থল সীমান্ত চুক্তি করেন। বাংলাদেশের পার্লামেন্টে সে চুক্তি পাস হয়। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর ২০১৫ সালে ভারতের পার্লামেন্টে স্থলসীমানা চুক্তি অনুমোদিত হয়। ফলে ৫২ হাজার ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের মানবেতর জীবনের অবসান হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। ছিটমহল বিনিময়ে ১০ হাজার ৫০ একর জমি বাংলাদেশের ভূখ-ে যোগ হয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান এই চার দেশের মধ্যে মোটর ভেহিক্যাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সমুদ্রসীমা আইন করে যান। তারই ভিত্তিতে আমরা মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। সমুদ্রে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় দেশের নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরফলে বিশাল সমুদ্র এলাকায় সমুদ্রসম্পদ আহরণের পথ সুগম হয়েছে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ এখন একটি ‘ব্র্যান্ড নেম’। এটি আমাদের জন্য গৌরবের। শান্তিপ্রিয় দেশবাসী, আমাদের সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়নের সোপানে এগিয়ে যাচ্ছে তখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির দোসররা আবারও অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমরা শান্তিপ্রিয় জাতি, সন্ত্রাস সহিংসতায় বাঙালী বিশ্বাসী নয়। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, হাজার বছর ধরে সব ধমের্র মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। সবাই নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করছেন। কাউকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেয়া হবে না। বিপথগামীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর হব। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির আসল উদ্দেশ্য হলো জঙ্গীবাদ উস্কে দেয়া, যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের রক্ষা করা। আমাদের ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায় কার্যকর করা হচ্ছে, কেউই বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। একটি দলের নেত্রী ও তার নেতারা মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী ৩০ লাখ শহীদের প্রতি কটাক্ষ করেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অপমান করেছে। আমি এই ঘৃণ্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। যারা দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করবে তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। প্রিয় দেশবাসী, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কারও কোন কটাক্ষ সহ্য করা হবে না। এদের বিরুদ্ধে ঐকমত্য গড়ে তুলুন। আমরা আপনাদের পাশে আছি। গত সপ্তাহে শান্তিপূর্ণভাবে ২২৩টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এই নির্বাচন ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। নির্বাচনে আপনারা আপনাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করেছেন, জঙ্গী ও পেট্রোল বোমাবাজদের প্রত্যাখ্যান করেছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সম্মানিত দেশবাসী, আমি ২০০৮ সালে বলেছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। আমরা নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। ইনশাআল্লাহ ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। গ্যালোপের হোপ ইনডেক্সে এসেছে, সুইজারল্যান্ডের পরেই বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদী মানুষের দেশ। আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ। আমি আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করা, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। আওয়ামী লীগ দেশকে স্বাধীনতা দিয়েছে। গণতন্ত্র দিয়েছে। যখনই সরকার গঠন করেছে দেশের উন্নয়ন করেছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক ঐতিহাসিক দিকসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আসুন, দল-মত ও বিভক্তির উর্ধে উঠে এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখি। দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি আমরা। কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবই। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ্। আপনারা সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে এ প্রার্থনা করছি। আপনাদের সবাইকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
×