স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একজন সেনাপতি যদি রণাঙ্গন জিততে চান তাহলে তার দরকার হবে ভালমানের সৈনিক। তেমনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের দ্রোণাচার্য মারুফুর হক যদি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শিরোপা জিততে চান, তাহলে তার দরকার হবে একজন বিশ্বস্ত গোলমেশিন, এই যেমন সাখাওয়াত হোসেন রনি।
এই মুহূর্তে দারুণ ফর্মে আছেন রনি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ দুই আন্তর্জাতিক ম্যাচে চারটি গোল করেছেন ২৪ বছর বয়সী এই তুখোড় ফরোয়ার্ড। সাফে ভুটানের বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচে জোড়া গোল করার পরের ম্যাচেই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বলাই বাহুল্য, দুটি ম্যাচেই জেতে বাংলাদেশ (৩-০ এবং ৪-২)।
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে নিজেদের প্রথম গ্রুপ ম্যাচে জিতে সেমিফাইনালে যাবার পথ উজ্জ্বল হয়েছে রনির কল্যাণে। আজ বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রতিপক্ষ অনেক কঠিন, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মালয়েশিয়া। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি পুরো ফিট না থাকায় প্রথম ম্যাচে সাইড লাইনে ছিলেন। সে ম্যাচে রনির সঙ্গে ছিলেন নাবিব নেওয়াজ জীবন, যার আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা কম। আজকের ম্যাচে এমিলি যদি না খেলতে পারেন তাহলে কোচ মারুফুলের ভরসা কিন্তু ওই একজনইÑ রনি।
আগের দিনের অনুশীলনে হাল্কা চোট পেয়েছিলেন দারুণ ছন্দে থাকা স্ট্রাইকার রনি। যদিও এদিন অনুশীলনের মাঠে নেই তার কোন ছাপ। চোট কাটিয়ে অনেকটাই খোশমেজাজে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে শেখ জামাল ধানমন্ডির স্ট্রাইকার। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ও সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক এমিলি। ১০ বছর ধরে খেলে ৬৩ ম্যাচে ১৫ গোল এমিলির। অথচ রনির গোলের স্ট্রাইকরেট দারুণ আকর্ষণীয়, মাত্র দুই বছর ধরে খেলে কেবল ১২ ম্যাচে ৮ গোল করে ফেলেছেন তিনি! অনেক ফুটবলপ্রেমীই বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে এমিলিকে অচিরেই ছাড়িয়ে যাবেন তিনি।
অথচ বিস্ময়কর ব্যাপারÑ এই রনিকেই ক্লাব ফুটবলে ম্যাচের পর ম্যাচ বসিয়ে রাখা হয়। জাতীয় দলে ডাক পেয়েও একই অবস্থা। অথচ যখনই খেলার সুযোগ পেয়েছেন তখনই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। কখনও জামালের জার্সি গায়ে হ্যাটট্রিক করে সনি নর্দের অভাব ঢেকে দিয়েছেন, কখনও বা এএফসি কাপের প্রাক-বাছাইপর্বে একটি দলের বিপক্ষে করেছেন জোড়া গোল। তারপরও কখনও কখনও হতাশায় প্রকাশ করেছেন যে কোন পর্যায়েই নিয়মিত মাঠে খেলতে না পেরে। কিন্তু তাই বলে তিনি ভেঙ্গে পড়েননি কখনই। কেননা তিনি জানতেন, অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। একদিন না একদিন অবশ্যই কাক্সিক্ষত সুযোগ আসবে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে করা যাবে কেল্লাফতে। আর ঠিক সেই সময়টাই পার করছেন এখন।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শিলক গ্রামের মোহাম্মদ ইয়াছিন ও দৌলানা বেগমের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রনি ছোট। ভাই সাজ্জাদ হোসেন প্রকৌশলী, বোন শামীমা নাসরিন রুমা বিবাহিতা। বাবা ও চাচা রফিকসহ বংশের অনেকেই ফুটবল খেললেও কেউ পেশাদার হতে পারেননি। সেই বংশের ছেলেটি পাড়া-গাঁয়ে ক্রিকেট খেলে দুরন্ত সময় পার করতেন। হঠাৎ ট্র্যাক পরিবর্তন হয়ে আজ তারকা ফুটবলার হওয়ার পথে।
একজন আদর্শ ফরোয়ার্ড হতে গেলে যেসব গুণাবলী থাকা দরকার, সেগুলোর সবই আছে রনির। গতি, স্কিল, শূটিং, হেডিং, উচ্চতা (৫ ফুট ১০ ইঞ্চি) ...। তবে আদর্শ ফুটবলার হিসেবে বিকশিত হতে গেলে চাই সুযোগ, আর সেটাই খুব একটা পাচ্ছিলেন না তিনি। এখন পাচ্ছেন, আজ মালয়েশিয়ার বিপক্ষে আবারও জয়ের কারিগর হিসেবে নিজের নামটি লেখাতে পারবেন রনি? পারবেন কি ফুটবলপ্রেমীদের নয়নমণি হতে?
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: