ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এগোচ্ছে না নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬

এগোচ্ছে না নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্পে গতিহীন অবস্থা বিরাজ করছে। ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু অর্থবছরে পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এগুলো বাস্তবায়নে অগ্রগতি হতাশাজনক। এ পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়গুলোর কঠোর নজরদারির তাগিদ দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনগুলো মোট ১২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল মোট তিন হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা, যা মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বরাদ্দের তিন দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের নবেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনগুলো ব্যয় করেছে মাত্র ৬৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আগামী জুন মাসের মধ্যে আরও তিন হাজার ৩৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কি করণীয় সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আজম বলেন, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বাংলাদেশের সুষম উন্নয়ন, আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য নিরসন ও কর্মসংস্থান, আঞ্চলিক দারিদ্র্য ও আয় বৈষম্য দূরীকরণ, খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা, মানব সম্পদ উন্নয়ন (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি), কৃষি-পানি সম্পদ ও পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, রফতানি প্রসার ও শিল্পায়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা বিষয় অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এডিপির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে ৭ শতাংশ অর্জন করাসহ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত গড় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ অর্জনের জন্য এডিপির পরিপূর্ণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিদ্যুত বিভাগের আওতায় নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প রয়েছে একটি। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৪০০ কোটি টাকা। অর্থবছরে পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা, অর্থ ব্যয়ের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মাত্র এক শতাংশ। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় প্রকল্প রয়েছে একটি, বরাদ্দ ছিল ১ লাখ টাকা, অর্থব্যয়ের কোন অগ্রগতি নেই। সেতু বিভাগের আওতায় নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প ছিল আটটি, বরাদ্দ ছিল ৯০ কোটি টাকা, ব্যয় হয়েছে ২৮ কোটি ২২ লাখ টাকা, অর্থব্যয়ের অগ্রগতি হয়েছে ৩১ শতাংশ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প পাঁচটি, বরাদ্দ ছিল ৫৬ কোটি টাকা, এক টাকায় ব্যয় হয়নি। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প ২৮টি, বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৫৭১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ১৮৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, অর্থব্যয়ের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প ৬০টি, বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা, ব্যয় হয়েছিল ৩৯৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, অর্থব্যয়ের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ২৯ শতাংশ। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প একটি, বরাদ্দ ২৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা, এক টাকাও ব্যয় হয়নি। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প ১১টি, বরাদ্দ ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি সাত লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ২৮ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (থোকসহ) নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প রয়েছে দুটি, বরাদ্দ ২২২ কোটি তিন লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ১৭ শতাংশ। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এর নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প দুটি, বরাদ্দ ছিল ১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ২৭ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি তিন শতাংশ। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প রয়েছে চারটি, বরাদ্দ ছিল ১২০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ১৬ শতাংশ। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প একটি, বরাদ্দ ১৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা, এক টাকাও ব্যয় হয়নি এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প একটি, বরাদ্দ ২৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা, ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৮৩ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ১৭ শতাংশ। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, এগুলো যেহেতু নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু তারপরও যেহেতু এগুলোও জনগণের অর্থ সে বিবেচনায় বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এ প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করতে পারে। তাছাড়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতারও একটি বিষয় থাকে। এসব প্রকল্পের অগ্রগতি কেন কম হচ্ছে সে বিষয়গুলোও খুঁজে বের করা উচিত। প্রতিবদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (আরএডিপি) প্রণয়ন নীতিমালা ইতোমধ্যেই জারি করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে এটি চূড়ান্তকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এডিপির অগ্রগতি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আরএডিপি নির্ধারণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন আশা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাস্তব পরিস্থিতি ও তাদের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ পুনর্নির্ধারণ করবে। বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোন ধরনের অনিশ্চয়তা থাকলে, বরাদ্দ ধরে না রেখে তা আরএডিপি প্রণয়নের সময়ে সমর্পণ বা পুনর্নির্ধারণ করা সমীচীন হবে। ফলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমর্পণকৃত অর্থ ও অতিরিক্ত চাহিদা সমন্বয় করে বাস্তবভিত্তিক আরএডিপি প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।
×