ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইএস-এর প্রোপাগান্ডা অস্ত্র: রেডিও থেকে ইন্টারনেট

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ১২ জানুয়ারি ২০১৬

আইএস-এর প্রোপাগান্ডা অস্ত্র: রেডিও থেকে ইন্টারনেট

অনলাইন ডেস্ক॥ নিজস্ব রেডিও স্টেশন, বিভিন্ন ভাষায় লেখা ম্যাগাজিন, ভিডিও, ফটো এবং রিপোর্ট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালিয়ে জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট এই ধারণাই সবার মনে জাগাতে চায় যে এই সংগঠনটি নিজেই একটা স্বতন্ত্র রাষ্ট্রব্যবস্থা। বিবিসি মনিটরিং বিভাগের তৈরি এক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, লাইম লাইটে থাকার জন্য আইএস স্তম্ভিত হওয়ার মতো উচ্চ মানের ভিডিও প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সংবাদের শিরোনামে থাকতে চায়। তাদের এই প্রচারণার মধ্য দিয়ে তারা একদিকে যেমন নতুন সদস্য এবং সমর্থক জোগাড়ের চেষ্টা করে, একইভাবে এগুলোকে তারা ব্যবহার করে তাদের ব্যর্থতার ঢাকার জন্য এবং মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজে। বহুভাষিক অপারেশন ২০১৪ সালের মাঝামাঝি যে সময়টিতে আইএস ভূমি দখলের কাজে সফল হতে শুরু করে, তখন থেকেই তারা মিডিয়ায় তাদরে তৎপরতার গতি বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য তারা একাধিক ভাষায় প্রোপাগান্ডা চালানোর কৌশল গ্রহণ করে। আইএস-এর একটি নিজস্ব রেডিও স্টেশন রয়েছে, যার নাম আল-বায়ান। মূলত ইরাক এবং সিরিয়া থেকে এর সম্প্রচার শোনা যায়। ঐ এলাকায় আইএস যে প্রবল শক্তিশালী সংগঠন এটা প্রমাণ করাই এই স্টেশনের মূল কাজ। এর আগে আইএস টেলিভিশন স্টেশন চালু করারও চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই কাজে জঙ্গীদলটি সফল হয়নি। ইন্টারনেট-ভিত্তিক টিভি চালু করা প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। আল-বায়ান থেকে প্রতিদিন খবরের যে বুলেটিন প্রচারিত হয়, ছ`টি ভাষায় সেটি তর্জমা করা হয় এবং পডকাস্টের মাধ্যমে সেটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ভাষাগুলো হলও: আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, তুর্কী এবং কুর্দি। এর পাশাপাশি আইএস চীনা মুসলমানদের জন্য উইঘার ভাষায়, ইন্দোনেশিয়ার বাহাসা এবং বলকান অঞ্চলের ক`টি ভাষাতেও সম্প্রচার করে থাকে। আইএস-এর তরফে যেসব ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয় তার মূল ভাষা ইংরেজি। এই ম্যাগাজিনের নাম `দাবিক`। প্রথম প্রকাশ ২০১৪ সালের জুলাই মাসে। এর ফরাসি, রুশ এবং তুর্কী সংস্করণও প্রকাশিত হচ্ছে। আরবি ভাষায় জন্য আইএস-এর রয়েছে একটি আলাদা ম্যাগাজিন। যার নাম আল-নাবা। শিরোনাম দখলের লড়াই এসব কিছুর পাশাপাশি আইএস প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ভিডিও এবং স্টিল ছবি প্রকাশ করে, যার মধ্য দিয়ে সংগঠনটি দেখাতে চায় যে দেশ শাসনের দক্ষতা তার রয়েছে এবং তার অধীন সামরিক বাহিনী লড়াইয়ের ময়দানে অপরাজেয়। এসব প্রচারের মধ্য দিয়ে আইএস তার সম্ভাব্য সমর্থকদের মনে একটি অলীক রাষ্ট্রের ছবি তৈরি করতে চায়। কোন কোন ভিডিও প্রকাশের আগে আইএস সংবাদমাধ্যমকে আগাম খবর জানায় এবং নানা ভাষায় সেটির সংস্করণ তৈরি করা হয়। কখনও কখনও সেসব ভিডিওতে হলিউডের কায়দায় অডিও-ভিডিও এফেক্টস ব্যবহার করা হয় যেগুলো তরুণ সম্প্রদায়কে খুবই আকর্ষণ করে। আইএস-এর একটি নতুন কৌশল হলও একই বিষয়ের ওপর একই সাথে একাধিক ভিডিও প্রকাশ করা। এবং একটি বিশেষ বার্তা সবার মনে পৌঁছে দেয়া। অনলাইনে আধুনিক প্রচারণা আইএস-এর মিডিয়া বিভাগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলও কোন ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। এটা তারা করতে পারে কারণ সোশাল মিডিয়াকে তারা খুবই দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে। আইএস-এর সমর্থক এবং অনুগামীরা এসব পোস্ট ছড়িয়ে দেয় সারা বিশ্বে। টুইটার এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে আইএস-এর সাথে সম্পর্কিত অ্যাকাউন্টগুলো বার বার বন্ধ করা হলেও ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে এই জঙ্গীদলের কন্টেন্ট নিয়মিতভাবেই পোস্ট করা হয়। প্রোপাগান্ডার মালমসলা গোপনীয়তার সাথে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে আইএস সম্প্রতি দক্ষতার সাথে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতে শুরু করেছে। সূত্র : বিবিসি বংলা
×