ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাগতিকদের চ্যাম্পিয়ন দেখতে চান, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ বাফুফের

জাতীয় দলের খেলায় সন্তুষ্ট নন সালাউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১২ জানুয়ারি ২০১৬

জাতীয় দলের খেলায় সন্তুষ্ট নন সালাউদ্দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন পর গত বছর আবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট নতুন করে শুরু হয়েছিল। অনেক বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরে আয়োজিত প্রথম আসরে অনেক সমস্যা ছিল, তবে এবার অনেক সমস্যাই কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কিন্তু বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এ টুর্নামেন্টকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি প্রতিষ্ঠিত আসর হিসেবে গড়ে তুলতে চান। সেজন্য তিনি মনে করেন বিভিন্ন পুরস্কারের পরিমাণ বৃদ্ধি বিশ্বের অন্য দলগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবে। গত বছর ৬ দল অংশ নিলেও এবার ৮ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের আসর। বাংলাদেশ জাতীয় দল প্রথম ম্যাচে ৪-২ গোলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দারুণ সূচনা করেছে কোচ মারুফুল হকের শিষ্যরা। তবে বাংলাদেশের খেলা দেখে মন ভরেনি সালাউদ্দিনের। তিনি মনে করেন ডিফেন্সে পুরনো সেই সমস্যাটা এখনও আছে। তিনি মনেপ্রাণেই চান এবং প্রত্যাশা করেন বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হোক এবারের টুর্নামেন্টে। বাকিটা তিনি মনে করেন দলের খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করছে। সোমবার বিকেলে বাফুফে ভবনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন তিনি। টানা ব্যর্থতার পর অবশেষে একটি দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। সম্প্রতিই সাফ গেমসে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ফলাফল করেছেন মামুনুল ইসলামরা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে খেলতে গিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে। লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করতে হয়েছে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের কাছে। শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে সান্ত¡নাসূচক ৩-০ গোলের জয় এসেছে। কিন্তু সাফের ব্যর্থতা ভুলে থাকা যায়নি। সে কারণে কোচ মারুফুল ও অধিনায়ক মামুনুল দায়িত্বও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। পরে বাফুফের আহ্বানে দু’জনই নিজেদের দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে। শুরুটাও দারুণ হয়েছে। ৪-২ গোলের বড় জয়। কিন্তু বাংলাদেশ দলের খেলা দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি এ টুর্নামেন্টের সব দল নিয়ে আগাম কিছু আভাস দিতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশ দলকে নিয়ে কোন ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাই না। কারণ জয় পাওয়াতে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু খেলা দেখে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। এবারও দেখলাম ডিফেন্সে সেই পুরনো সমস্যা আছেই। রক্ষণভাগে যে ঘাটতি গুলো আছে সেসব পুষিয়ে নিতে না পারলে সমস্যায় পড়তে হবে এবং বেশিকিছু আশা করাও যাবে না।’ তবে সালাউদ্দিন আশা করেন টুর্নামেন্টের পরবর্তী ম্যাচগুলোয় সবকিছু কাটিয়ে উঠে গোছানো খেলা উপহার দেবে বাংলাদেশ দল। দলকে নিয়ে প্রত্যাশার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো দেখতে চাই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু সেটা আমি বললেই তো আর হবে না। এবার অংশগ্রহণকারী দলগুলো গতবারের চেয়ে আমার কাছে শক্তিশালী মনে হয়েছে। কাজেই বাকিটুকু নির্ভর করছে খেলোয়াড়দের ওপর।’ এবারের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশেরই দুটি দল অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশ অলিম্পিক দলের খেলা অনেককেই মুগ্ধ করেছে। আসন্ন এসএ গেমসের আগে এ দলটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাও শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী বাহরাইনের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্রও করেছে। তবে এ বিষয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘জুনিয়র দলটার সমস্যা জাতীয় দলের ঠিক উল্টা। খুব ভাল খেলেছে তারা কিন্তু ফিনিশিং ভাল না। পরপর তিনটা ওয়ান টু ওয়ান সুযোগ পেয়েছে তারা, কিন্তু সেসব কাজে লাগাতে না পারার দুর্বলতার কারণে আমরা জিততে পারিনি। তবে আমি বলতে চাই যারা এত ওয়ান টু ওয়ান সুযোগ তৈরি করতে পারাটা অবশ্যই ভাল দলের লক্ষণ।’ তবে এখনই জাতীয় দল ভেঙ্গে অনুর্ধ ২৩ থেকে ফুটবলার নিয়ে দল গড়তে নারাজ তিনি। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশ দল একটি উন্নয়নশীল পর্যায়ে আছে। এক বছরে ২০/২১ ম্যাচও খেলেছে দল। এ বিষয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় দল অবিকৃত রেখেই দ্বিতীয় দলটা আমাদের গড়তে হবে। এক বছরে আমরা ২০/২১ ম্যাচ খেলেছি। আমি যতদূর জানি এবং দেখেছি এত ম্যাচ এক বছরে আর কখনও খেলেনি বাংলাদেশ। তিন/চারটি ম্যাচ খেলতে পারলেই আমাদের মনে হতো অনেক খেলে ফেলেছি।’ এবার প্রথম অবস্থায় সিলেটে গোল্ডকাপের ম্যাচ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। পরিবর্তে যশোরের শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে হয়েছে খেলা। এ বিষয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। যশোরের স্টেডিয়ামটা কোন খেলার জন্যই সঠিক আকৃতির নয়। কে বানিয়েছে জানি না, তবে আশা করব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পরবর্তীতে কোন স্টেডিয়ামে বানালে যেন খেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেই স্টেডিয়াম বানায়। এটা না হয়েছে হকি, ভলিবল, হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম কোনটাই না। সিলেটে দুটি স্টেডিয়াম। আমরা ভেবেছিলাম অনুর্ধ ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য একটা থাকলে অন্যটা আমরা পাব। আমি ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করার পর ভুল ভেঙ্গেছে। পরবর্তীতে আমরা এ রকম টুর্নামেন্ট শুরুর অনেক আগেই বিষয়টা আলোচনা করে নেব।’ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের কলেবর আরও বৃদ্ধি করার জন্য আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা সালাউদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘গত বছর ৬ দল খেলেছে এবার খেলছে ৮টি। আমি মনে করি এবারের দলগুলো গতবারের চেয়ে ভাল। প্রাইজমানি ছিল না গত আসরে। আমার মনে হয় এবার প্রাইজমানি থাকার কারণে আগ্রহ বেড়েছে। পরবর্তী আসরে আরও শক্তিশালী দল আনার চেষ্টা থাকবে। আমাদের অঞ্চল থেকেই সেটা করা হবে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি টুর্নামেন্টে পরিণত করতে চাই আমরা এটিকে। সেজন্য প্রাইজমানি ও পুরস্কার আরও বাড়ানোর চিন্তা আছে। আমার মনে হয় সেক্ষেত্রে অনেক আগ্রহ বাড়বে সবার।’
×